সব জিনিসের একটি ব্যালেন্স থাকা চাই । কম ঘুমালে যেমন ক্ষতি হয়, একইভাবে বেশি ঘুমালেও শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে ।
প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি মানুষেত কম বেশি সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন । তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মাত্রাটি নয় ঘন্টা পর্যন্ত স্বাভাবিক বলা যায় । নিচের দিকেও অনেকে পাঁচ-ছয় ঘন্টা ঘুমিয়েও সুস্থ্য থাকতে পারে। গড়ে পাঁচ ঘন্টার নিচে ঘুম হলে শরীরে যেমন বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হতে পারে, তেমনি গড়ে নয় ঘন্টার বেশি ঘুম হলে শরীরে অনেক জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
এটি শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য । বাচ্চাদের গড়ে পনেরো ষোলো ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয় । কিশোর কিশোরীদের দশ থেকে বারো ঘন্টা ঘুমালেই যথেষ্ট।
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঘুম হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় – Hypersomnia ।
ডিপ্রেশন, ডায়াবেটিস, ব্রেইন টিউমার, হার্টে সমস্যা, বাইপোলার সিনড্রোম, কোনো মেটাবলিক ডিজিজ, বেশি মোটা হয়ে গেলে, থাইরয়েড সমস্যা, কিডনি সমস্যা, ক্রনিক ফেটিগ সিনড্রোম, ড্র্যাগ অথবা কোনো মেডিসিনের প্রভাবে, অতিরিক্ত এলকোহল পান, এমনসব অনেক কারণে অতিরিক্ত ঘুম, বিশেষ করে দিনের বেলা ঘুমের পরিমান বৃদ্ধি যেতে পারে । Hypersomnia কে কেউ কেউ আবার excessive daytime sleepiness বা EDS বলেও সম্বোধন করে থাকেন ।
আবার কারো কারো ঘুম জনিত বিভিন্ন সমস্যা থাকে, সেগুলোর কারণেও এমন অতিরিক্ত ঘুম কিংবা দিনের বেলা ঘুমের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে । যেমন : sleep apnoea বা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা সমস্যা; narcolepsy – যখন তখন যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়া, restless legs syndrome – রাতে ঘুমের সময় কোনো কারণ ছাড়াই পায়ে এক ধরনের অস্বস্তি বোধ করা । এসব কারণেও অনেক সময় অতিরিক্ত ঘুম পেতে পারে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের ঘুমের সমস্যা বেশি হয় । যারা নিয়মিত ধূমপান এবং মদ্যপান করে থাকেন, তারা Hypersomnia তে বেশি ভুগে থাকেন ।
অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা হলে কিভাবে বুঝবেন?
অযথা দুর্বল লাগবে, এমনকি দিনভর ঘুমালেও শরীরের দুর্বল ভাব কাটবে না । কিছু কিছু সময় ঘুম থেকে উঠে মাথা যন্ত্রনা করতে পারে । মেজাজ কোনো কারণ ছাড়াই খিটখিটে হচ্ছে , অল্পতেই কোনো বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন, ক্ষুধা কম লাগছে, সহজেই অনেক কিছু ভুলে যেতে পারেন, ঘুম থেকে উঠলে কেমন যেন অস্থিরতা বেড়ে যায়, শার্প চিন্তা ক্ষমতা হ্রাস পাবে ।
অতিরিক্ত ঘুমাচ্ছেন কিনা তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে গেলে Epworth Sleepiness Scal নামক একটি স্কোরিং পদ্ধতিতে এই সমস্যা নির্ণয় করা হয় । এর বাহিরে ঘুম জনিত কোনো রোগে ভুগলে polysomnogram নামক একটি বিশেষ যন্ত্র দিয়ে ব্রেইনের একটিভিটি এবং শরীরের আরো কিছু একটিভিটি পর্যবেক্ষণ করে সেটি নির্ণয় করা যায় ।
কিভাবে অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা দূর করতে পারেনঃ
১. শারীরিক কোনো রোগের কারণে এমনটি হলে রোগটি দ্রুত চিহ্নিত এবং চিকিৎসা শুরু করতে হবে ।
২. একটি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী ঘুমানোর ডায়রি মেনে চলতে হবে ।
৩. ঘুমের দুই তিন ঘন্টা আগে থেকে ঘরে কম লাইট জ্বালিয়ে তারপর ঘুমাতে হবে।
৪. কোনো ধরনের ঘুমের মেডিসিন, ড্র্যাগ, এলকোহল ব্যাবহার করা যাবে না ।
৫. খাবারে ম্যাগনেশিয়াম এর পরিমান বৃদ্ধি করা যেতে পারে ।
৬. ঘুমের মাঝখানে জেগে জেগে সোশ্যাল মিডিয়ায় উঁকি ঝুঁকি দেয়া একদম বন্ধ করতে হবে । যেটুকু ঘুমান, সেটুকু যেন ক্রমাগত হয় ।
অবশেষে, সকলের সুস্থতা কামনা করছি।
ধন্যবাদ।