Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

সিমিন আর রাবু

মেয়েটা বারবার জানালা দিয়ে মুখ বের করছে।

এই বুঝি দেখা যাবে ওকে। ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠল। শেষবারের মত আরেকবার মুখ বের করল। নাহ! এবারও দেখা মিলল না।

মেয়েটা বড় করে একটি নিঃশ্বাস ছাড়ল। অনেকগুলো কল্পনার জল বুদ হয়ে ঠুস করে ফেটে গেল। নিবারণের দেখা হয়ত আর কখনই মিলবে না। এভাবে অনেকগুলো দিন কেটে যাবে, মাস কেটে যাবে, বছর কেটে যাবে। কেটে যাবে যুগ, সহস্রাব্দ। চোখ গড়িয়ে টুপ করে অশ্রু আসতেই ওড়না দিয়ে চোখ ঢেকে নিল। এ জল দেখানো যাবে না। কেউ জানবে না এ কান্নার কারণ। কেউ জানবে না নিবারণ বলে কেউ ছিল। কেউ জানবে না নিবারণ রাবুকে ভালবাসেনি। কেউ জানবে না রাবু ভালবেসেছিল। অন্ধের মত ভালবেসেছিল। ভালবাসে।

সামনের সিটের মেয়েটা খুব আহ্লাদী।

ছেলেটা হেডফোন শেয়ার করতে চাইছে। মেয়েটা শুনেও কানে নিচ্ছে না। জানালা দিয়ে কাশবনের দিকে অপলকে তাকিয়ে আছে।

আরিফ সিমিনের কানে হেডফোন গুঁজে দিল। সিমিন ওর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়েছে ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে। আরিফ কেন প্রথমে এ কাজটি করেনি? ও কি জানে না সিমিনের কানে হেডফোন গুঁজে দিতে হয়? ও নিজ হাতে কেন গুঁজবে? আর কী গান চালিয়েছে সে? “কোথায় তুমি?” সুমন আর আলিফের এ গান দু’মাস আগে খুব শোনা হতো। যখন দ্বিতীয় প্রেমটি ব্যর্থ হয়। অনেক শুনেছে সিমিন। এখন আর শুনবে না। হেডফোন কান থেকে বের করে নিচে ছেড়ে দেয়। আরিফের বুঝতে একদম দেরি হয় নি। গান পাল্টে আবার সিমিনের কানে হেডফোন গুঁজে দেয়। সিমিন এবার রাগ করল না। আরিফের দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধ একটি হাসি দিল। জন ডেনভারের “ইউ ফীল আপ মাই সেন্সেস” গানটি বাজছে। সিমিন আরিফের আঙুলের ফাঁকা অংশ ভরে দিল তার আঙুল দিয়ে।

ট্রেন ষোলশহর থামল।

সিমিন আর রাবু এক রিক্সায় করে শোলকবহর যাবে। রিক্সা নিল।

রাবু কোনোরকম ভণিতা না করেই বলল, “সিমিন, তুমি কি আরিফকে ভালবাসো?”
“এ আবার কেমন প্রশ্ন? বাসি বলেই তো একসাথে আছি।” সিমিন অবাক হয়ে উত্তর দিল।
“ঠিক তিন মাস আগেও তোমাকে একই প্রশ্ন করেছিলাম, মনে আছে? নাম ভিন্ন। তখনও একই উত্তর দিয়েছিলে।”
“তখনের উত্তর যেমন সত্য, এখনের উত্তরটাও সত্য। আর এসব দেখে তুমি জাজমেন্টাল হয়ে যেও না। আমি নিবারণ দা নিয়ে কিছু বলি?”
“দেখো, আমার ব্যাপারটি আমার কাছে খুব পরিস্কার। আমার ভালবাসা ভুল না। ভালবাসার মানুষটি ভুল হয়ত। তবে তোমার ব্যাপারে আমার মনে হচ্ছে, তোমাকে সাহায্য করা প্রয়োজন।”
“আচ্ছা, কর, কী সাহায্য করবে?”
“সিমিন, তুমি নিজের কাছে নিজেকে প্রশ্ন করতে খুব ভয় পাও, জানো? সন্দেহ দূর করতে ভয় পাও। সন্দেহ দূর করলে যদি ঘোর কেটে যায় আবার…”
“মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। একটু ক্লিয়ার করবা প্লিজ?”
“আমরা অনেক স্বার্থপর। নিজে অল্প ভাল থাকার জন্য আরেকজনকে ব্যবহার করি। ভাবি, কাঁটা দিয়ে কাঁটা দূর করছি। কিন্তু আমরা আরেকজন যাকে জড়াচ্ছি জীবনে, তার কথা একদমই ভাবি না।”
“তুমি নিজে সিঙ্গেল তো, তাই সবাইকে সিঙ্গেল রাখার ধান্ধা, না?”
“আমাদের এই প্রজন্মের পোলাপাইন নিজেদের সিঙ্গেল সহ্যই করতে পারে না। যে কারণে কোনো সম্পর্ক ঠিকভাবে টেকেও না।”
“দেখো রাবু, এসব লেকচার বন্ধ কর। নাহয় আমি আরেকটি রিক্সা নেব।” সিমিন রেগে পটকা মরিচের মত ফুলে গেল।

এরপর গাড়িঘোড়ার ‘প্যাঁ, প্যাঁ’ আওয়াজ শুধু শোনা যাচ্ছে।

রাবু সিমিনের দিকে তাকিয়ে দেখে সিমিন কাঁদছে। প্রথমে রাবু ‘সরি’ বলার জন্য মুখ ‘হা’ করে বন্ধ করে নিল। কিছু বলল না।

Related Posts

7 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No