সুইডেনের প্লেনে উঠার আগে যা যা অবশ্য করণীয়
আপনারা যারা বিদেশে এসেছেন বা আসবেন ,,, সকলেই আপনার পাসপোর্ট, ভিসা ও অফার লেটার এর অন্তত এক কপি বাংলাদেশে আপনার বাবা, মা অথবা নিকট আত্মীয় কাছে রেখে আসবেন।
যারা ইতিমধ্যে সুইডেনে চলে এসেছেন তারা ও এই সব কাগজ কপি করে দেশে কারো কাছে পাঠান , আজই এবং এখনই। …
কারণ কোনো কারণে বিদেশে আপনি বিপদে পরলে, আপনার নিকট আত্মীয় ঐসব ডকুমেন্ট দেখিয়ে সঠিক জায়গাতে যোগাযোগ করতে পারবে।
মনে রাখিয়েন ,,বিপদ বলে কয়ে আসে না।
তাই বলে ভুলেও অপরিচিত / স্বল্প বা ফেসবুকে পরিচিত কারো কাছে ” আপনার পাসপোর্ট, ভিসা ও অফার লেটার এর কপি ” দিবেন না।
অনেকেই সুইডেনে আসার সময় ক্যাশ টাকা নিয়ে আনতে চান। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইম্মিগ্রাশনস আইন অনুযায়ী ,
আপনি ক্যাশ বা বৈদেশিক মুদ্রা বহন করতে হলে অবশ্যই পাসপোর্টে এন্ডোর্স করতে হবে।
মনে রাখবেন পাসপোর্টে এন্ডোর্স ব্যাতিত আপনি একটি ডলার ইউরো বা যে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা বহন করতে পারেন না।
এন্ডোর্স না করে বৈদেশিক মুদ্রা বহন করে ধরা খেলে জেল জরিমানা হতে পারে। সুতরাং সাবধান।
“আগমণ বা বহির্গমণকালে কোনরূপ ঘোষণা ছাড়া মাথাপিছু বাংলাদেশী মুদ্রায় সবোর্চ্চ ৫,০০০ টাকা সঙ্গে রাখতে পারবেন। বাংলাদেশী মুদ্রা পাসপোর্টে এন্ডডোর্স হয় না, মনে রাখবেন”
ভ্রমণ কোটা বহির্গমণকালে ‘ভ্রমণ কোটা’ অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা অবশ্যই পাসপোর্টে এনডোর্স করে নিবেন। এনডোর্সমেন্ট ছাড়া সিঙ্গেল পেনিও নেয়া যাবে না। ছাত্রদের জন্য ১২,০০০ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা.
ডলার পাউন্ড নাকি ইউরো কোনটি নিলে ভালো হবে ?
ডলার বা ইউরো যে কোনটি সাথে করে আনতে পারেন। তবে মনে রাখবেন পাসপোর্টে ডলার এন্ডোস করলে ডলার সাথে নিবেন অথবা পাসপোর্টে ইউরো এন্ডোস করলে ইউরো সাথে নিবেন।
সুইডেনে কোনটি বেশি চলে ডলার পাউন্ড নাকি ইউরো ?
না , সুইডেনে বেশিরভাগ জায়গাতে এখনো ডলার পাউন্ড বা ইউরো চলে না। যেটি চলে সেটির নাম সুইডিশ ক্রোনোর। (SEK)
এয়ারপোর্টে কি সব ডলার ইউরো চেঞ্জ করে সুইডিশ ক্রোনোর করে নিবো ?
সুইডেনে এয়ারপোর্ট + যেকোনো শহরে মানি এক্সচেঞ্জ এর দোকানে সহজেই সুইডিশ ক্রোনোর করতে পারবেন… , কোনো ঝামেলা হবে না। তবে দাম এক এক দোকানে এক এক রকম ,, তাই তাড়াহুড়া না করাই ভালো ,,,,সাধারণত এয়ারপোর্টে ভালো দাম পাওয়া যায় না। . তাই এয়ারপোর্টে শুধু যতটুকু দরকার ততটুকু ডলার ইউরো চেঞ্জ করে সুইডিশ ক্রোনোর করে নিতে পারেন। এরপর সুইডেন আসার মাসখানেকের মাঝেই আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্ট হয়ে যাবে ,, সাথে ভিসা বা মাস্টারকার্ড পাবেন ,,, যেটা দিয়ে সারা দুনিয়ায় কেনাকাটা করতে পারবেন। ..
এক্সট্রা টাকা সাথে রাখবো নাকি ?
রাস্তাতে খরচের জন্য বাংলাদেশী ৫০০০ টাকা ,,, দরকারে কাউরে এয়ারপোর্টে চা নাস্তা খাওয়াইতে পারবেন।
১২,০০০ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের চেয়েও বেশি টাকা নিতে চাই ,, কিভাবে নিবো ?
আপনার স্টুডেন্ট ফাইল থেকে ব্যাংকার মাধ্যমে সুইডেনে টাকা পাঠাতে হবে। ১২,০০০ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের বেশি ক্যাশ টাকা সাথে নেবার কোনো উপায় নেই।
বিকল্প কি কিছুই নেই ?
আছে , ক্রেডিট/ডেবিট/প্রিপেইড কার্ডে কোনো বাধা নিষেধ নেই। কার্ডের মাধ্যমে আপনি যত খুশি তত টাকা সাথে নিয়ে যেতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন ইন্টারন্যাশনাল কার্ড না হলে ,,সেটি নিয়ে বিদেশ গিয়ে কোনো লাভ হবে না।
………………………………..
এয়ারপোর্ট থেকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত বাস বা ট্রেনের টিকিট কাটবো কিভাবে ?
১. আপনি প্লেনের টিকিট কাটার মতো দেশে থেকেই অনলাইন এ ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন। তবে প্লেন থেকে নামার কমপক্ষে ৩ বা ৪ ঘন্টা পরের ট্রেনের টিকিট কাটবেন। কারণ প্লেন লেট্ বা লাগেজ পেতে অথবা কাস্টম ইম্মিগ্রাশনে সময় লাগতে পারে ,, এছাড়া স্টেশনে ট্রেন খুঁজে পেতেও সময় লাগতে পারে। আগে থেকে টিকিট কাটা অনেকটা ঝামেলা মুক্ত হলেও কোনো কারণে ট্রেন মিস করলে ট্রেনের টিকিটের টাকা নষ্ট হবে। …
২. আমার পরামর্শ হলো সুইডেনের এয়ারপোর্টে নেমেই একটি মোবাইলের প্রিপেইড সিম কিনবেন। অতঃপর সুইডেনে আপনার পরিচিত যে কেউ আপনার ট্রেনের বা বাসের টিকিট অনলাইন এ কিনে ,, সেই টিকিট এস এম এস করে আপনাকে পাঠিয়ে দিতে পারে। সুইডেনের প্রায় সব বাস ও ট্রেন এ ,, এস এম এস টিকিট গ্রহণযোগ্য।
৩. আপনার ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট / ক্রেডিট কার্ড থাকলে আপনি এয়ারপোর্টে অটোমেটিক টিকিট কাটা মেশিন দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন। সব মেশিনের প্রথমেই ভাষা পরিবর্তন করে ইংলিশ করে নিবেন ,, তাহলে নিজেই টিকিট কাটতে আর সমস্যা হবে না। এরজন্য বিশেষ গীয়ানি হবার দরকার নেই। . শুধু নূন্যতম কমনসেন্স ব্যবহার করলেই মেশিনে টিকিট কাটা যায়।
৪. প্রতিটি এয়ারপোর্টে হেল্প ডেস্ক আছে ,,, কিছু কিছু হেল্প ডেস্ক থেকে ক্যাশ টাকা দিয়ে বাস ট্রেনের টিকিট কাটা যায়। সুতরাং হেল্প ডেস্কের সাথে কথা বলুন ,,, তারা নিজেরা টিকিট না বেঁচলেও আপনাকে কোথায় টিকিট পাওয়া যাবে,, তা জানিয়ে দিবে।
৫. বাটার জুতার দোকান যেমন সারা বাংলাদেশে আছে ,,, তেমন মুদি দোকান “pressbyrån” এয়ারপোর্ট সহ সারা সুইডেনে আছে .হলুদ রঙের এই দোকানটি সহজেই চোখে পরে। এরা অনেক সময় ক্যাশ টাকা নিয়ে বাস ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে। সুতরাং এদের সাহার্য নিতে পারেন। তবে এদের কাছ থেকে টিকিট কিনলে সার্ভিস চার্জ হিসেবে কিছু এক্সট্রা টাকা দিতে হবে। আইনি ঝামেলাতে এরা টিকিট বিক্রি হয় ,,, এমন কিছু বিজ্ঞাপন বা লিফলেট লিখতে পারে না। . তবে এরা বৈধ ভাবেই টিকিট বিক্রি করে ,,সুতরাং নিশ্চিন্তে এদের কাছ থেকে টিকিট কিনতে পারেন।
৬. প্রায় সব ট্রেনেই টিকিট চেকারের কাছ থেকে টিকিট কাটা যায়। ক্যাশ ও কার্ড চলে। তবে অনেক সময় টিকিট চেকারের কাছ থেকে টিকিট কাটলে দাম অনেক বেশি পরে। অন্য উপায় না পেলে,,,, ট্রেনের টিকিট চেকারের কাছ থেকে (বাসের ড্রাইভার এর কাছ থেকে ) টিকিট কাটুন। ছাত্র পরিচয় দিতে ভুলবেন না ,, তাহলে দাম কিছুটা কম রাখবে।
অনেকেই এক্সট্রা সুবিধার জন্য সুইডিশ ক্রোনোর বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসতে চায়। পাসপোর্টে এন্ডোর্স করে ৫০০০ ডলার এর সমপরিমাণ সুইডিশ ক্রোনোর আনতে আইনত কোনো ঝামেলা নেই। তবে বিশাল ঝামেলা আছে অন্য জায়গাতে।
২০১৫ সালের পর থেকেই সুইডেনে অনেক নোট এবং কয়েন বাতিল করা হয়েছে।
এই সকল পুরাতন নোট এবং কয়েন আর ব্যবহার যোগ্য নেই। বাংলাদেশের অসৎ মানি এক্সচেঞ্জের বা ব্যাংক এই সকল বাতিল হয়ে যাওয়া নোট অনেক কে দিয়েছে। এমন বাতিল নোট নিয়ে আসলে আপনি আসলেই বিপদে পরবেন।
এই সমস্যার সমাধান
১. আগে দেখুন আপনার কাছে বাতিল হয়ে যাওয়া নোট আছে
২. যদি আপনার কাছে বাতিল হয়ে যাওয়া নোট থেকে থাকে , তবে বাংলাদেশের যেখান থেকে কিনেছেন , তাড়াতাড়ি সেখানে ফেরত দিয়ে নতুন নোট নিন ,,, নতুন নোট না থাকলে ডলার পাউন্ড ইউরো যা দেয় তাই নিয়ে নিন।
এজেন্সী / মানি এক্সচেঞ্জ / ভুয়া ট্রাভেল এজেন্ট নামক সকল প্রকার প্রতারকদের কাছ থেকে দূরে থাকুন। লেনদেন বৈধ ও ভালো ব্যাংকে করুন।
ভালো থাকুন