আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আশা করি সবাই মহান আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। তো আজকে বলা হবে সুদ ও ঘুষ সম্পর্কে।
সুদ:
সুদ ফারসি শব্দ এর আরবি প্রতিশব্দ রিবা। বলা হয় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন কালে এটি এ ধরনের ব্যবসায় পরিণত হয়েছিল ।আরব সহ বিশ্বের অনেক সমাজে প্রথা প্রচলিত আছে বা ছিল। যার ফলে ধনী আরও ধনী এবং গরীব আরো গরীব হতো ।এটা ছিল শোসনের নামান্তর ।তাই ইসলাম এটাকে হারাম ঘোষণা করে ।অনেকে সুদ ও মুনাফা লভ্যাংশকে মনে করেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এদুটো এক নয়।কেননা সুদে লোকসানের কোন ঝুঁকি থাকে না আর মুনাফা বা লভ্যাংশের ঝুঁকি থাকে। সুদের সংজ্ঞা দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ঋণ কোন লাভ নিয়ে আসে না তাই রিবা।( জামি সগির)
ঋণদাতা কর্তৃক ঋণগৃহীতা থেকে মূলধনের অতিরিক্ত কোনো লাভ নেওয়াই হলো সুদ। যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ১০০ টাকা এ শর্তে ঋণ দিলো যে গৃহীত একশত টাকা পরিশোধ করবে এক্ষেত্রে একশত টাকার অতিরিক্ত ১০ টাকা হল সুদ। কেননা এর কোন বিনিময় মূল্য নেই ,শুধু টাকা পয়সা বা মাল-সম্পদ বিনিময়ে সুদ সীমাবদ্ধ নয়। বরং একই শ্রেণীভূক্ত পণ্যদ্রব্যের লেনদেনে কমবেশি করা হলেও তা সুদের আওতাভুক্ত ।যেমন ,১ কেজি চালের বিনিময়ে দেড় কেজি চাল কিংবা ১কেজি চাল এবং অতিরিক্ত অন্য কিছু নেওয়াও সুদ হবে ।যেমন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট করে বলেছেন সোনার বিনিময়ে সোনা ,রুপার বিনিময়ে রুপা ,জবের বিনিময় জব ,আটার বিনিময় আটা ,খেজুরের বিনিময় খেজুর ,এমনিভাবে সম জাতীয় দ্রব্যের নগদ আদান-প্রদানে অতিরিক্ত কিছু হলেই তা সুদ হবে।(মুসলিম)
ঘুষ:
ঘুষ অর্থ উৎকোচ ।স্বাভাবিক পরও অতিরিক্ত সম্পদ বা সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করাকে ঘুষ বলে ।কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের কাজের জন্য নির্দিষ্ট বেতন ভাতা পায় কিন্তু তারা যদি ওই কাজের জন্যই অন্যায় ভাবে আরো বেশি কিছু গ্রহণ করে তা হলো ঘুষ। যেমন ,কারো কোন কাজ আটকে রেখে তার নিকট থেকে টাকা পয়সা আদায় করা ,অন্য কোথায় অধিকার নেই এরূপ বস্তু বা বিষয় লোভের জন্য দায়িত্বশীল কতৃপক্ষকে অন্যায় ভাবে কোনো সম্পদ বা সুযোগ-সুবিধা দেওয়াকে ঘুষ বলা হয়। সমাজে নানাভাবে ঘুষের প্রচলন দেখা যায়। সাধারণত মানুষ অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য টাকা-পয়সা ঘুষ দিয়ে থাকে এছাড়া উপহারের নামে নানা দ্রব্য সামগ্রী যেমন টিভি ,ফ্রীজ ,গহনা ,ফ্লাট ,ইত্যাদি ঘুষ হিসেবে ধরা হয়। বস্তুত দ্রব্য-সামগ্রী যে মূল্যমানের এই হোক টাকা পয়সা কম হোক বা বেশি হোক ঘুষ হিসেবে ব্যবহৃত হলে তা হারাম হবে।
কুফল ও পরিণতি :
সুদ ও ঘুষ অত্যন্ত জঘন্য অর্থনৈতিক অপরাধ ।এর কুফল ও অপকারিতা ভয়াবহ ।সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্যের জন্ম দেয়, ধনী আরও ধনী হয় গরীব আরো গরীব হয়। ফলে সমাজের মধ্যে শ্রেণীভেদ করে উঠে ,পারস্পারিক মায়া মমতা ভালবাসা ও সহযোগিতার পথ রুদ্ধ হয়ে যায় ।সুদের কারণে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নতি ব্যাহত হয় ,বিনিয়োগে চায়না উৎসাহী হতে। বরং সম্পদ অনুৎপাদনশীল ভাবে সুদী কারবারের লাগায় ফলে দেশের বিনিয়োগ কমে যায়,জাতীয় উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয় ।ঘুষও অশান্তি ডেকে আনে। ঘুষখোর ব্যক্তি নিজ দায়িত্ব কর্তব্য অবহেলা করে আমানতের খেয়ানত করে। নিজ ক্ষমতা ও দায়িত্বের অপব্যবহার করে অরণ্যের অধিকার হরণ করে ।অধিকার বঞ্চিতদের সাথে শত্রুতা সৃষ্টি হয় ।সমাজে মারামারি হানাহানির সূত্রপাত ঘটে ।
অপকারিতা :
বস্তুত সুদ অ ঘুষ এর অপকারিতা অত্যন্ত মারাত্মক ।এটি সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনে ,সুদ ও ঘুষের প্রভাবে মানুষ নৈতিক ও মানবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। বরং অসচ্চরিত্র ও মন্দ অভ্যাসের চর্চা শুরু করে ।মানুষের মধ্যে লোভ-লালসা অপচয়কারী প্রসার ঘটে ।অনেক সময় সুদ ঘুষের অতিরিক্ত অর্থের জন্য মানুষ নানা রুপ অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পরে ।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,যে সমাজে যিনা-ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ে তার অধিবাসীরা দুর্ভিক্ষের করালগ্রাস এ নিপতিত হয় আর যে সমাজে ঘুষ লেনদেন প্রসার লাভ করে সে সমাজে ভীতি ও সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়ে থাকে ।(মুসনাদে আহমদ)
আর্থসামাজিক দিক দিয়ে সুদ ও ঘুষের প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর ,ধর্মীয় দিক থেকেও এর উপর অত্যন্ত ব্যাপক ।সুদ ঘুষের মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ হারাম বা অবৈধ । আর হারাম কোন অবস্থাতে গ্রহণযোগ্য নয় । হারাম খাদ্যে গঠিত যার শরীর, যার পোশাক পরিচ্ছদ হারাম টাকায় উপার্জিত এরূপ ব্যক্তির কোন ইবাদত কবুল হয় না, এমনকি তার কোন দোয়া আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর নিকট ঘৃণিত।
একটি হাদিসে মহানবী(সা.) বলেন ,নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম সুদখোর ,সুদদাতা, সুদ চুক্তি লেখক ও সুদ লেনদেন সাক্ষীকে অভিশাপ দিয়েছেন ।(মুসলিম)
সুদ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন ,আল্লাহ আর আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম ।(সূরা আল -বাকারা আয়াত -২৭৬)অন্য আয়াতে এসেছে, হে ঈমানদারগণ, তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় করো তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (সূরা আলে- ইমরান আয়াত -১৩০)আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন ,হে ঈমানদারগণ ,তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ও সুদের যা বকেয়া আছে তা ত্যাগ করো যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো ।(সূরা আল -বাকারা আয়াত -২৭৮)
মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন সম্পত্তির কিয়দংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে জেনেশুনে বিচারকদের নিকট পেশ করো না ।(সূরা আল -বাকারা আয়াত- ১৮৮)
সুদ ও ঘুষের লেনদেন অত্যন্ত গর্হিত কাজ। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিগণ এরূপ কখনোই করতে পারে না ।আমরাও জীবনের সর্বাবস্থায় সুদ ও ঘুষের লেনদেন থেকে বিরত থাকব।(ইনশাআল্লাহ)
হে আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন আমিন।(আমিন)