অয়ন আর অবন্তীর ঝগড়াটা মিটে গেলো। একটা চিপস যে এত বড় একটা সমাধান, সেটা জানলে অয়ন প্রতিদিন অবন্তীর গালে একটা করে চুমু দিত..
অয়ন মোটেও সেরকম ছেলে নয়। সে খুব ভালো ও ভদ্র একটা ছেলে। স্কুলে ভালো নাম ছিলো তার। পড়ালেখায়ও বেশ ভালো ছিলো। শুধু অবন্তী একটু পিছিয়ে ছিলো পড়াশোনায়…
[ এখানে ক্লিক করে প্রথম পর্বটি আগে পড়ে আসুন 👉 পর্ব-১ ]
সেদিনের পর থেকে অয়ন আর অবন্তীর সম্পর্কটা একটু ঢিলা হয়ে গেলো। অবন্তী আগের মতো সবকিছুতে অয়নকে পাত্তা দেয়না আজকাল। অসুস্থতার জন্য অয়ন কয়েকদিন উপস্থিত থাকতে পারেনি স্কুলে। কিন্তু দেখা গেলো যে অবন্তী আর অয়নকে আগের মতো জাফর ইকআাল স্যারের পড়াগুলো ফোনে কল করে দেখিয়ে দেয়নাই।
পরের দিন ক্লাসে গেলে প্রথম পিরিয়ডেই সেই জাফর ইকবাল স্যারকে দেখলে চোখ-মুখ উল্টে যায় অয়নের। কি যে বাড়ির কাজ দিয়েছিলেন তিনি, ঠিক মনে নেই। খেয়াল করে দেখা গেল, সে আগে থেকেই জানেনা যে স্যারের বাড়ির কাজ কি।
“যারা যারা বাড়ির কাজ করোনাই, তারা অনুরোধ করার আগে দাঁড়িয়ে যাও”
জাফর ইকবাল স্যারের কর্কশ গলায় এমন বাক্যটা শুনে মুখ প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে যায় অয়নের। আজ হয়তো হাসপাতালের সীট বুকিং দিতে হবে..
ক্লাসের জাফর ইকবাল স্যার খুব মারতো ছাত্রছাত্রীদের। তিনও কিঞ্চিৎ পরিমাণও অনিয়ম বরদাস্ত করতেননা কখনো। তাঁর কথার বাইরে কেউ গেলেই সেদিন তার নষ্ট হয়ে যায় বেতে আঘাতে।
দেশের প্রত্যেকটা স্কুলেই জাফর ইকবাল স্যারদের মতো এমন অনেক মানুষ আছেন..
বাড়ির কাজ না করায় জাফর ইকবাল স্যারের কাছ থেকে রামধোলাই খেয়ে অয়ন ফোঁফাতে থাকে। মাঝে মাঝে একটু একটু দৃষ্টি দেয় অবন্তীর দিকে। অবন্তীও মাঝে দেখে অয়নকে। দু’জনের চাহনীতে একপ্রকার ভয় কাজ করছিলো একে অপরের মনে…
স্কুল ছুটি হলে অবন্তী আবারো অয়নের পথ রোধ করে দাঁড়ায়।
– ওই অয়ন। কি হয়েছে তোর। আজ একটুও কথা বলিসনি কেন আমার সাথে?
– তোর সাথে কথা বলাটা ফরজ?
– ….
– রাস্তা ছাড়।
– না।
– তুই তো জানছ, তোর জন্যই আজ মাইরটা খাইলাম। ক্লাসের সবাই জাফর ইকবাল স্যারের বাড়ির কাজ করে এনেছিলো, শুধু আমি ছাড়া। তুই কি বাঁচাতে পারতিনা আমায়?
– ….
– কি হলো.. এখন কোন কথা বলছিসনা কেন?
– আচ্ছা কি করলে তোর রাগ ভাঙবে বল..
– কেন, আনার রাগ ভাঙিয়ে কি লাভ তোর…
– জানিনা। তবে তোর চোখে রাগ দেখলে খারাপ লাগে আমার।
– তাহলে যা চাইবো তা দিবি?
– কোটি টাকা খুঁজিছনা, তাইলে দিতে পারবোনা। আমার সাধ্যের ভিতরে খুঁজ..
– আমাকে টোকাই মনে করোছ, না?
– আহহা!
– আহহা কি…
– ওই। আমি বুঝছি। আচ্ছা ঠিক আছে কালকে স্কুলে আসার সময় একটু তাড়াতাড়ি আসিস।
অয়নের মনটা আবারে আগের মতো উৎফুল্ল হয়ে যায়। অবন্তীর দিকে একবার তাকায়। আবার চোখ নামিয়ে ফেলে।
এদিকে অবন্তীও মিটিমিটি হাসছে…
স্কুল জীবনে দেখে আসা একটি অভিজ্ঞতা..
প্রাণচঞ্চল মেয়েদের প্রাণখোলা হাসিগুলো দেখলে চোখ, মন, প্রাণ সব জুড়িয়ে যায় এক নিমিষেই…
(চলবে…)