আজকের পোস্টে আমরা জাল দিয়ে স্বপ্নে মাছ ধরতে দেখলে কি হয় ও তার ইসলামিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করব। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
কোনো স্বপ্নের ব্যাখ্যা বা স্বপ্ন কি জানার আগে আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে যে স্বপ্ন আদৌ কি। আমরা কেন স্বপ্ন দেখি। তো আগে সে বিষয় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
আমাদের প্রত্যেকেরই ঘুমের প্রয়োজন৷ কেউই ঘুম ব্যতীত বেঁচে থাকতে পারে না।
একজন সুস্থ সবল ব্যক্তি গড়ে প্রতি দিন প্রায় ৮ ঘণ্টা করে ঘুমের প্রয়োজন অর্থাৎ প্রতিদিনের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ ঘুমিয়েই কাটায়। এই ঘুমের কিছু অংশ জুড়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কি স্বপ্ন দেখেছি তা মনে থাকে না, মনে থাকলেও হালকা হালকা। তাহলে স্বপ্ন আসলে কি? মানবজাতির শুরু থেকেই মানুষের এই স্বপ্ন নিয়ে কৌতুহল শুরু হয়।
সেসকল মানুষ চিন্তা করতে থাকে যে আমরা কেন স্বপ্ন দেখি। সৃষ্টি হয় স্বপ্ন নিয়ে নানা দর্শন ও কল্প – কাহিনী।
নানা ধর্ম বা মিথোলজিতে স্বপ্ন নিয়ে লেখা রয়েছে। তো এখম জেনে নেওয়া যাক স্বপ্ন ঠিক কি।
স্বপ্ন কি?
আসলে স্বপ্ন কি বা আমরা কেন তা দেখি তার এখনো কোনো নির্দিষ্ট সংগা বা কারণ নেই।
বিভিন্ন স্বপ্নবিজ্ঞানী স্বপ্ন নিয়ে বিভিন্ন মতামত দিয়েছে।
স্বপ্ন হচ্ছে একটি মানসিক অবস্থা যখন মানুষ নানা ধরণের কাল্পনিক ঘটনা অনুভব করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বপ্নদ্রষ্টা স্বয়ং স্বপ্নের ওই ঘটনার মধ্যে উপস্থিত থাকে। অনেক স্বপ্নবিজ্ঞানীর মতে দ্রুত চক্ষু আন্দোলন বা Rapid Eye Movement দশায় আমরা স্বপ্ন দেখে দেখি। কিন্তু এই মতবাদ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।
স্বপ্ন সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে?
আগেও বলেছি যে স্বপ্ন নিয়ে অনেক কাল আগে থেকেই গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে।
এখন পর্যন্ত অনেক কিছুই আবিষ্কার হয়েছে আবার অনেক কিছুই হয়নি যা নিয়ে এখনো কাজ চলছে।
বিজ্ঞানীদের মতে স্বপ্ন মানুষ বিভিন্ন কারণে দেখে থাকে।
অনেক স্বপ্নই রয়েছে যা আমরা আমাদের অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন ঘটনার মিশ্রণে দেখি।
অনেক স্বপ্ন দেখি যেগুলো পুরোই কাল্পনিক। এ স্বপ্নগুলো আমরা মূলত দেখি আমাদের আশেপাশের অবস্থা নিয়ে ও দৈনন্দিন চিন্তা-ভাবনা ও কাজ নিয়ে।
স্বপ্ন সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
ইসলামে স্বপ্ন নিতে অনেক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে৷ স্বপ্ন ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নবুয়তের ৪৫ ভাগের এক ভাগ এসেছে স্বপ্ন থেকে। ইসলামে স্বপ্নকে মোট ৩ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
যথা: ভালো স্বপ্ন, মন্দ স্বপ্ন ও বাস্তব সম্পর্কিত স্বপ্ন।
বাস্তব সম্পর্কিত স্বপ্ন: বাস্তব সম্পর্কিত স্বপ্নের সাধারণত কোনো অর্থ থাকে না বা নির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকে না।
আমরা বাস্তব বা জাগ্রত অবস্থায় যা যা করি বা যা নিয়ে চিন্তা করতে থাকি তার উপর ভিত্তি করেই আমরা এ ধরণের স্বপ্ন দেখে থাকি। অর্থাৎ আপনি যদি কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা বা অত্যাধিক চিন্তা করেন তাহলে হয়তো আপনি তার উপর ভিত্তি করেও স্বপ্ন দেখতে পারেন। ধরুন আপনার পরীক্ষা চলছে ও তা নিয়ে আপনি খুব চিন্তা করছেন তাহলে হতে পারে আপনি ওই পরীক্ষা সম্পর্কিত স্বপ্ন দেখতে পারেন।
ভালো স্বপ্ন:
এ স্বপ্ন সাধারণত ভালো হয়ে থাকে। এ স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে।
আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা নানা ধরণের সুসংবাদ এসকল স্বপ্নের মাধ্যমে এসে থাকে।
এ ধরণের স্বপ্ন দেখার পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করা উচিত।
তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে হব। চাইলে কাছের কাউকে এসকল স্বপ্ন সম্পর্কে বলা যাবে।
মন্দ স্বপ্ন: আমরা স্বপ্নে খারাপ কিছু দেখলে তাকে ইসলামিক হিসাবে মন্দ স্বপ্ন হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এ স্বপ্ন আসে আসে শয়তানের কাছ থেকে। শয়তানের নানা ধরণের কুমন্ত্রণার ফলে এই স্বপ্ন আসে।
শয়তান এসকল স্বপ্ন দ্বারা মানুষদের চিন্তিত রাখে ও মানুষকে নিয়ে ঘুমের মধ্যে খেলা করে।
মন্দ বা খারাপ স্বপ্ন দেখলে কাউকে সে সম্পর্কে না বলাই ভালো আর পারলে স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেব বা এমন কাউকে উক্ত স্বপ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে।
মন্দ বা খারাপ স্বপ্ন দেখলে কি করতে হবে তা নানা হাদিসে দেওয়া রয়েছে।
হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে এবং মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
তোমাদের কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে তার উচিত তার বাম দিকে তিনবার থুতু মারা। অতঃপর ওই স্বপ্নের খারাবি হতে আশ্রয় চাওয়া।
তাহলে ওই স্বপ্নে তার কোনো ক্ষতি হবে না। (সুনানে আবু দাউদ, ৫০২১)।
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা
অপর এক হাদিসে হযরত জাবির (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,
হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুতু নিক্ষেপ করে, মহান আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং পাশ পরিবর্তন করে ঘুমায়। (সুনানে আবু দাউদ : ৫০২২)।
এ হাদিসসমূহ থেকে বোঝা যায় যে ভালো স্বপ্নগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে ও মন্দ স্বপ্নগুলো আসে শয়তান থেকে।
আর মন্দ স্বপ্ন দেখার পর আমাদের যদি ঘুম ভেঙে যায় তাহলে উঠে তাম বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলতে হবে।
মহান আল্লাহর কাছে সকল প্রকার খারাপ জিনিস থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে ও পরবর্তীতে পাশ পরিবর্তন করে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। তাহলে উক্ত ব্যক্তি শয়তানের কাছ থেকে আশ্রয় পেতে পারে।
জাল দিয়ে স্বপ্নে মাছ ধরতে দেখলে কি হয়? ইসলাম কি বলে? বিজ্ঞান কি বলে ?
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
কোনো স্বপ্নের তেমন কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
কারণ বিজ্ঞানের মতে স্বপ্ন হলো সম্পূর্ণভাবেই কাল্পনিক।
বিজ্ঞান মতে আমাদের অতীতের কোনো ঘটনার সাথে কিছু কাল্পনিক বিষয় যুক্ত হয়ে স্বপ্নের সৃষ্টি হয়।
যা আমরা চিন্তা-ভাবনা করি বা যা আমরা বাস্তব জীবনে করি তা থেকেই স্বপ্নের সৃষ্টি কিংবা যা নিয়ে আমাদের প্রবল আকাঙ্খা থাকে তার উপর ভিত্তি করেই স্বপ্নের সৃষ্টি হয়।
তাহলে জাল দিয়ে মাছ ধরার বা অন্য কোনো স্বপ্নের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
হতে পারে আপনার সামনে মাছ ধরার প্ল্যান আছে এবং বর্তমানে তা নিয়ে চিন্তা করতেছেন এখন এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনি এই স্বপ্ন দেখতে পারেন।
ইসলামিক ব্যাখ্যা:
ইসলামে বেশিরভাগ স্বপ্নই তাৎপর্য বহন করে৷ অনেক স্বপ্নের অর্থ থাকে। অনেক সময় স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে নানা ধরণের সুখবর বা ইঙ্গিতও আসে। স্বপ্নে জাল দেখার অর্থ সাধারণত ভালোই হয়।
আপনি ব্যবসা-বাণিজ্যে সফলতা লাভ করবেন ও চাকরি করলে পদোন্নতি হবে।
আর স্বপ্নে জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখলে সেটিও একটি ভালো ইঙ্গিত।
এর অর্থ হতে পারে যে আপনার সামনে সফলতা আসছে ও আপনার অনেক সুনাম হবে।
এছাড়াও এই স্বপ্নটি ইসলাম মতে স্বপ্নের তৃতীয় ভাগ অর্থাৎ বাস্তব সম্পর্কিত স্বপ্নও হতে পারে।
হয়তোবা আপনি মাছ ধরা নিয়ে চিন্তা করতেছিলেন বা আগে কখনো মাছ ধরতে গিয়েছিলেন এবং তার জন্যই এই স্বপ্ন এসেছে।
কোনো স্বপ্ন দেখলে তেমন কোনো চিন্তা করার প্রয়োজন নেই৷
খারাপ কিছু দেখে থাকলে উপরোক্ত হাদিস দুটির মতো আমল করবেন ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। আর গুরুতর কিছু মনে হলে ইমাম সাহেব বা যার ইসলাম সম্পর্কে অনেক জ্ঞান আছে এমন কারো কাছে গিয়ে এর অর্থ জিজ্ঞাসা করতে পারেন। কেউ যদি স্বপ্নের অর্থ বলার জন্য টাকার দাবি করে তাহলে তাদের কাছে না যাওয়াই ভালো। প্রতারকদের কাছ থেকে সাবধানে থাকবেন। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।