স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও এর গুরুত্ব : স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাস্থ্য নীতি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা। আবার স্বাস্থ্য নীতি মেনে চলার উদ্দেশ্য হলো রোগ প্রতিরোধ করা। মানুষ যতই রোগের কারণ খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে, ততই সে রোগ প্রতিরোধের উপায় জানতে ও প্রয়োগ করতে পারবে। এর কারণ, অসুস্থতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া এবং সুস্থ শরীরে দীর্ঘ জীবন লাভ করা। তাই সুস্থ শরীর ও দীর্ঘ জীবন লাভের জন্য যা করা প্রয়োজন তা আমরা স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠে জানতে পারি। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল, এই প্রবাদ বাক্যটির মর্ম অনুধাবন করতে হলে অর্থাৎ স্বাস্থ্যের ন্যায় মূল্যবান সম্পদ লাভ করতে হলে আমাদেরকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যের উপর পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক অবস্থার প্রভাব রয়েছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, সংক্রামক ব্যাধির রোগজীবাণু একের দেহ থেকে অন্যের দেহে প্রবেশ করে সংক্রামন ঘটায়, কীভাবে সংক্রামক রোগ, ছোঁয়াচে রোগের সংক্রামক হয় এবং প্রতিরোধে করণীয় কী তা জানা প্রয়োজন। এর প্রতিরোধে করণীয় বিশুদ্ধ পানি পান, দূষিত বায়ু থেকে রক্ষা, পুষ্টিকর সুষম খাদ্য গ্রহন, আলো বাতাসময় গৃহে বাস, স্বাস্থ্যকর স্কুলগৃহ, নিরাপদ পথ চলা, হিংস্রপশু বা পাগলা কুকুর ও শিয়ালের কামড় থেকে আত্ম রক্ষা, বিভিন্ন আবর্জনা দূরীকরণ প্রভৃতি স্বাস্থ্যকর সকল ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠে আমরা বিশদভাবে অবহিত হই। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে আমরা স্বাস্থ্য নীতি সম্পর্কে জানতে পারি। স্বাস্থ্য নীতি অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ করা। রোগ প্রতিরোধ ও রোগের প্রতিকার স্বাস্থ্য নীতি অন্তর্ভুক্ত। তবে রোগভেদে রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিরোধের ধরন ভিন্ন ভিন্ন হবে। কেবল কলেরা, যক্ষ্মা, বসন্ত, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগের একই রকম প্রতিরোধ বা প্রতিকারের ব্যবস্থা হবে না। দূষিত বায়ু, পানি, পচা বাসি ও খোলা খাবার, গৃহবর্জ্য ইত্যাদি অব্যবস্থা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এসব রোগ বিস্তারে সহায়তা করে। এমনিভাবে উন্নত ব্যবস্থাপনার ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, দুর্ঘটনার প্রাথমিক প্রতিবিধান নিশ্চিত করা স্বাস্থ্যনীতি অন্যতম লক্ষ্য। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অজ্ঞতা, উদাসীনতা সুস্বাস্থ্য গঠনের প্রধান অন্তরায়। উপযুক্ত শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার, প্রভৃতি ব্যবস্থা এই অন্তরায় দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মনে রাখতে হবে যে প্রত্যেক ব্যক্তিই সমাজের একজন সদস্য। তাই শুধু ব্যক্তির কল্যাণ নয় সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে কল্যানে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সম্পর্কে সকলকে অবহিত করতে এবং স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলতে উপদেশ দিতে হবে।
স্বাস্থ্যরক্ষা কী : শরীরের গঠন ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখা এবং নীরোগ থাকাই হচ্ছে স্বাস্থ্যরক্ষা। নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা, স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ ও এ বিষয়ের সকল নিয়মকানুন মেনে চলাকেই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষা বলে। স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়টি দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত। শিশুকাল থেকে যৌবনকাল পর্যন্ত একজন মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক উন্নতি ঘটে। এ সময় তাকে বয়স উপযোগী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়। তাই দৈহিক স্বাস্থ্যের সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যও ঠিক রাখতে হবে। কারণ শরীরের সাথে মনের সম্পর্ক খুবই নিবিড়।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রক্ষার কৌশল : সুস্থভাবে জীবন যাপনের জন্য স্বাস্থ্য সম্মত অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস গড়ে তোলার ভিত্তি হচ্ছে স্বাস্থ্যবিষয়ক নিয়মকানুন বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক পরিচ্ছন্নতা যেমন – বাড়ি, বিদ্যালয়, আশপাশের রাস্তাঘাট প্রভৃতি পরিচ্ছন্নতা, প্রয়োজনীয় ও পরিমিত ব্যায়াম, বিশ্রাম ও ঘুম, প্রয়োজনীয় পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন, নিয়মিত খেলাধুলা করা ইত্যাদি। এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দেহ ও মনকে সুস্থ ও সবল রাখা যায়। শরীরের যত্ন বিষয়ক সকল কাজ যথাযথ সময়ে সম্পন্ন করাও স্বাস্থ্যরক্ষার একটি প্রধান বিষয়।