রাত ক্রমশ গভীর হয়ে আসছে। সকলে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর জাগ্রত হচ্ছে ২ বছর খানেক ঘটে যাওয়া কিছু মলিন স্মৃতি।। জানিনা,কেন এত মায়া ওসব স্মরণীয় দিনগুলোতে।।
৯ম শ্রেণির শুরু, লকডাউনের পর সবকিছুই নতুন লাগছিল। সময়টা ২০২১ এর শুরুর দিকটায়।।বছরের প্রথম দিনটায় মামার বিয়ে। পার্লার থেকে বঊকে নিয়ে ক্লাবে পৌছালাম। এমন সময় এক পুরুষের উপর নজর গেল। কেন জানিনা,কিন্তু অনেকটা মায়া লাগছিল। মামির সাথে যখন স্টেজে ছবি তুলছিলাম, তখন তাকে আমার পাশে বসতে বলা হয়, সে একটু সংকোচ বোধ করলেও বসে যায়।
পরে জানতে পারলাম,জনাব আর কেউ নয় বরং আমার নতুন মামুনির আপন ভাই।। মামুনির বিয়ের পর অনেকদিন নানুরবাসায় ছিলাম। স্বাভাবিক তার ও আসা যাওয়া।। এভাবে দেখতে দেখতে মায়া যে তিব্র হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি। অপরদিকে আবার বয়সন্ধির ঠিক শুরুটাই। তাকে নিয়ে যেন চিন্তার শেষ নেই আমার।
মামা আমার বড়ই ভ্রমণ পিপাসু। তাই বিয়ের পর আমাদেরকে বান্দরবান এর দেবতাখুম ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল। সেও আসে। আকা-বাকা পথে পাড়ি দিতে মেয়েদের একটু সমস্যা হচ্ছিল। তাই আমার ২ মামুনিকে ২ মামাই সাহায্য করছিল।
যাইহোক আমার সেই নজর কেড়ে নেওয়া মানুষটার নাম কিন্তু বলা হয়নি। নাম তার আরিফ।
ফিরে আসি আবারও আগের কথায়। মামুনি তার ভাই অর্থাৎ আরিফকে বলল, আমার হাত ধরে আমাকে সাহায্য করতে। সে তার ডান হাতটা আমার সামনে দিল। যদিও একটু সংকোচ বোধ করছিলাম, তবুও সাহায্য তো নিতেই হবে। তাই হাতটা ধরে নামলাম।। সেই সময়কার অনুভূতি আমি হয়ত বলে ব্যক্ত করতে পারব না।।
এরপঅর আরও কিছু হাস্যকর স্মৃতি ছিল।।
আমার এক কাজিনের সাথে আরিফের কথা হতো। আমার কাজিন রিয়া তাকে বলে দিয়েছিল যে আমি তার উপর ক্রাশ খেয়েছি। ঈদের পর নানুরবাসায় আমাদের দেখা হয়েছিল, সে ইন্ডিরেক্টলি আমার সাথে ফ্লার্ট করছিল।
বিকেলে নাস্তা খেতে বসলাম, শুধু আরিফ আর আমি। আমি একটা কেক এর হাফ নিয়ে খাচ্ছিলাম।সে বাকি পার্ট টা নিয়ে নিল। আমি দেখে কিছুটা হতভম্ব হলাম।
পরে, রিয়া বলল,যে সে বলে দিয়েছে।।
জানিনা, হঠাৎ যেন তাকে নিয়ে স্টক করতে করতে এত বেশি জেনে ফেলেছি যে তার উপর ঘৃনা হতে থাকে। চেষ্টা করছিলাম তাকে ভুলে যাওয়ার। রবের কাছে দোয়া প্রার্থনা করার পর অবশেষে হয়ত ভুলতে পেরেছি।।
জীবন বড় আশ্চর্যের।। মানুষ মায়ায় পড়ে, আবার সেই মায়াকেই ঘৃণা করে, তাকে ভুলতে চায়।
আমার এগল্পের মাঝে আরও কিছু কথা হয়ত লুকিয়ে আছে,যা লিখায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।। তবে জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের জিবনকে হয়ত আরো মধুর করে দেয়। আমরা জীবনে আগে পথ চলার সখ খুজে।।
হয়ত মাঝে মাঝে কষ্ট লাগে, তাও আমার সাথী আমিই। পিছুটান কে পেছনে থাকতে বলে,আমি আজ এক অমল সুন্দর পৃথিবীটাকে উপভোগ করছি।।
আরিফ আমার জিবনের এক গল্পকাহিনী হয়ে হৃদয়ের কোনো এক পৃষ্ঠায় লুকিয়ে থাকবে,যার পাতা খুললে এখন আর কষ্ট লাগেনা,অনুভুতিগুলো হয়ত জমে পাথর হয়ে গিয়েছে।।এই স্মৃতি আমায় সল্প সময়ের জন্য নাহয় লেখকই বানিয়ে দিয়েছে।
তবে স্মৃতি কি ভুলা যায়? কথায় আছে, প্রেমে পড়লে নাকি মানুষ কবি হয়ে যায়, আমিও কিছু লিখেছিলাম তাকে নিয়ে,
হৃদয়মাঝে জমে থাকা লক্ষস্রোত চিন্তা, জমে থাকা স্মৃতি কি রয়ে যাবে সারাটা জীবন?
নাকি মরিচীকা ধরে লোহার মতো ঝাঝরা হয়ে যাবে?
মুহুর্তগুলো কল্পনার সাগরে ভাসতে থাকে,,
হয়ত সমুদ্রের ওপার ঘেঁষে হারিয়ে যাবে, নাকি
ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে আবারও পাড়ে এসে ঠাই জমাবে।।
দুফোঁটা অশ্রু জল,খানিকটা ঘৃণায়
যাকে ভুলতে চাওয়ার হাজারো কামনা
হঠাৎ যেন তাকেই হৃদয়ে আনার হাজারো বাসনা।।