আহত হরিণের জীবন
-মাসুম বাদল
আহত হরিণের করুন সিক্ত চোখে অফুরন্ত অভিমান
রক্ত ঝরা ক্ষতে যে ব্যাথা
তার অধিক ব্যাথা বইছে সে যে গভীর গোপন বুকে
তীরের আঘাতের চেয়ে বুঝিবা –
বিশ্বাস হারানোয় ঢের বেশি ব্যথা বাজে বুকে
পৃথিবী বিশ্বাসে বিরাগ মিশালে –
মধুও বিষের অধিক
নিরব জল থেকে কেউ
হৃদয়ের সকরুণ চিৎকার শুনিবার কান আছে বলো কার ।।
[মুক্ত মাতামতঃ মানব মনের প্রবলতর আকর্ষণে যে সুপ্রাচীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবার সমাজ আর
সামাজিক পরিবেশের উদ্ভব বিকাশ ও উৎকর্ষতা। বুঝিবা সে উৎকর্ষ মানব মনেরই কোন এক সুক্ষ বিকলতা বা বিভ্রাট
ক্রমশ মানুষকে দিন দিন করে তুলছে অসামাজিক আবার। কংক্রিটের নাগরিক দালানের জঙ্গলে আমরা যেন ঘুরছি
মানুষের অবয়বে অগনিত পশু। যেন পশু সব মানুষের মুখোশ পরে সমাজে রাষ্ট্রে করছি অবাধ বিচরন।
স্বার্থের কারণে এক বা একপাল পশু আরেক নিরিহ কিংবা দুর্বল দলকে করছি আঘাত।
খুব কাছের কেউই হয়ত নিরবে মেরে যায় অদৃশ্য তীর শর বা গুলি। কখনো ঝরে খুন – কখনো বা শুধুই নিরব চিৎকার।
বিবেকহীন পশু মন পায়নাকো নিপীড়িতের আহাজারি টের। লুটেরা-সমাজে দাঁতাল শুয়োরের দল চোখ বুজে ঘেঁটে যায় খেয়ে যায় কন্দ-কচু।
কে পদদলিত হলো কে পেল আঘাত কিংবা কেউ হারালো প্রান্তিক দেহ সর্বস্ব জীবন – সেদিকে আছে কি খেয়াল কারো।
বাস্তবিক অভাবটা কিসের – কি সেই অভাব-বোধের তাড়ন যা আমাদের করে তুলেছে আধুনিক নাগরিক পশু –
আমাদের উৎকর্ষ মনুষ্য মস্তিস্কেই চালাতে হবে চিরুণি কর্ষণ। কিছু একটাতো বেরোবেই – আদতে বের হবে
অগণিত অনৈতিক উকুন কিংবা উকুনের দল। বাস্তবিকই অনৈতিক উকুনের বাসেই বিভ্রান্ত – তপ্ত মাথা; ভিতরে উত্তপ্ত বিক্ষিপ্ত মগজ।
তাইতো উদ্ভ্রান্ত পাগলের মতোই – কিংবা মগজহীন পশু সুলভ আজ বড্ড সাবলিল ও অভ্যস্ত আমরা সবাই।
নৈতিকতার বালাই নেই। মূল্যবোধ নেই। সামাজিক একাত্মবোধ ও সামাজিক শৃঙ্খলে নেই শ্রদ্ধা।
হাজার যুগের লালিত কর্ষিত প্রথা সংস্কৃতি ধর্ম চেতনা সব যেন থুবরে পড়েছে। চোখ বাঁধা কলুর বলদের মতো
সরিষার রস চিপে তরল সোনা ছিনিয়ে নেয়াই যেন আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। সব আগে স্বার্থটা চাই।
সব আগে অর্থটা চাই – সবার আগে খাদ্যটা চাই। হোক সে ঠকিয়ে – কেড়ে – কিংবা মেরে।
লুটেরা সমাজে চলছে পশুর কামড়া-কামড়ি। আমরা বাস করছি এক নাগরিক অন্ধ জঙ্গলে।
এই অরণ্য-জীবনের অবসান ঘটাতে হবে আমাদেরই। মানব মশাল জালাতে হবে মানুষকেই। ]