রেমিটেন্স যোদ্ধাদের কথাও ভাবতে হবে আমাদের
প্রবাসের জীবন আসলেই কত কঠিন তা ভাষায় প্রকাশ হয়তো সম্ভব নয়। নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে, দেশ, সমাজ,পরিবারকে বাঁচাতে প্রবাস! জীবনের অন্য আরেক অধ্যায় এই প্রবাস জীবন। আমরা শুধু দেখেই যাই তাদের মাস শেষে টাকা পাঠানো, কিন্তু তারা যে দুই চোখে জল ও জমায়, তা তো আর পাঠানো যায় না, কোনো ব্যাংক কিংবা কোনো মাধ্যমে। কখন ও হৃদয়ের রক্ত ও ঝড়ে, সেই রক্তকেও জমাতে হয় বুকের ভেতরেই! দেখার কেউ নেই, বোঝার কেউ নেই! মাস শেষে টাকার হিসেবটাই সবাই করে/দেখে, কিন্তু মাস শেষে চোখের পানির কিংবা রক্তের হিসেব কেউ রাখেনা।
পরিবার পরিজন ছেড়ে একলা থাকা এই মানুষগুলোর জন্য হয়তো আমরা কমই ভাবি, কিন্তু এই মানুষ গুলোর সর্বকেন্দ্রিক ভাবনা যে দেশে থাকা মানুষদের নিয়েই। তারা স্বপ্ন দেখে আপন জন ভালো থাকার, ভালো রাখার, আর এই একটা স্বপ্নকেই বাস্তবায়ন করতে জীবনকে করে তোলেন দুর্বিষহ। কথায় কি আর সব বোঝানো যায়! দিন শেষে হেসে হেসে সবার কাছে সবচেয়ে বড় মিথ্যাটা বলে বেড়ায়, আমি ভালো আছি বলে!
এই মানুষ গুলোর কথা আমাদের ভাবতে হবে। ঘামের বিনিময়ে অর্জিত অর্থকে বৃথা নষ্ট করে অযথা চাপ সৃষ্টি করা যাবেনা। শুধু কি ঘামের বিনিময়ে, এ টাকা বলা যায় জীবনের বিনিময়েই।
কিসের থাকা, কিসের খাওয়া! সারা দিনের ক্লান্তির শেষে একটু ফোনে কথা বলাতেই সবচেয়ে ভালো লাগার জায়গাটি তাদের। নিজের হাতে রান্না করে খাওয়া, ভালো কিংবা মন্দ লাগা এসব খবর তো কেউ রাখেনা তাদের। কখনো হয়তো বাড়ির জন্য মন ও কেদে উঠে, কিন্তু বলার জায়গা যে নেই, দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিতে হয় নিজেকেই! কারণ প্রবাসে যে একলাই একটা পৃথিবী মনে করতে হয় নিজেকে। কেউ কারো নয় এখানে, যে যার মত, কেউ খবর রাখে না এদের, শুধু মাস শেষে টাকার খবর টা আমরা আগে রাখি।
পরিবার,সমাজ কিংবা দেশ এই যোদ্ধাদের কথা কতটুকু ভাবে কিংবা সম্মান দেয়! সমাজের কথা বাদই দিলাম, নিজের পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজনদের কাছেই বা কতটুকু মূল্যায়ন পায় এরা! এক মাস টাকা না পাঠাতে পারলেই কত গুঞ্জন, এটা সেটা কত কি! অপ্রিয়র তালিকায় পড়তে হয়। সমাজ তো তাদের ভাবে শুধু টাকার মেশিন হিসেবে, মানুষ যে ভাবা হয় না, সেই জায়গাটা সমাজের নেই।
তাদের কথা আমাদের ভাবতে হবে। সুবিধা কিংবা অসুবিধার কথা জানতে হবে, সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে। তাদের আবেগ, অনুভূতির মূল্যায়ন করতে হবে, দূরে ঠেলে দিলে চলবেনা, তারা যে যোদ্ধা, যেই জীবন যুদ্ধে তারা নেমেছেন, সেখানে অস্ত্র সাহায্য আমাদের দিতে হবে, না হয় যে এই যোদ্ধারা যুদ্ধের মাঠে একা হয়ে যায়।
শুধু টাকার হিসেবে নয়, তাদের সম্মান দিতে হবে মানুষ হিসেবে,যোদ্ধা হিসেবে। যে যত বেশী টাকা পাঠাতে পারে, তাকে বেশী মূল্যায়ন করি আমরা, টাকার সাথে মিলিয়ে ফেলি তাদের, কম টাকা দিলে অবমূল্যায়ন! দিন শেষে সবাই কষ্টই করে, কারো ভাগ্য সহায়, কিংবা কারো সহায় না। এই দিক গুলোকে আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে, শুধু এক দিক দিয়ে ভাবলেই হবেনা। জীবন হয়ে উঠুক সুন্দর, বিদেশের মাটিতে শান্তিতে থাকুক বাংলার প্রতিটি সন্তান।