তিনটা প্রেমের অভিজ্ঞতা এবং অতঃপর
বাসায় বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। আমার বিয়েশাদির প্রতি কোনো আগ্রহ নাই। তাই সবাই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করেছে। জামাই হবো, বাবা হবো, শ্বশুর হবো, দাদা-নানা হবো… সবাইকে খুশি করে বাঁচবো এমন কিছু আমার ভেতর কখনো কাজ করেনি। যে বয়সে মানুষ প্রেম করে, প্রেম নিয়ে ফ্যান্টসি কাজ করে সে সময়েই আমি প্রেম করেছি। একটা দুইটা না। তিন তিনবার প্রেম করেছি।
তিনটা প্রেমের অভিজ্ঞতা প্রায় একই রকম।
ভবঘুরে স্বভাবের মনকে যতই চার দেয়ালের মাঝে রাখতে চাই, ছুটে- ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি- হয়ে উঠে। প্রথম দিকে চমৎকার চলে। ধীরে ধীরে অধিকার পাওয়া শুরু করলে সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব সৃষ্টি হয় দুজনের। দাস-প্রথাও শুরু হয়ে যায় এক রকম। ওর শরীরের উপর অধিকার। আমি যেভাবে চাইবো ও সেভাবে চলবে। ব্রিটিশ-শাসন চলে গেছে এটা যারা ভাবে তাদের সাথে আমি কখনই একমত না। দুশ’ বছরের বীজ জিনে জিনে দৌড়াচ্ছে। কমপক্ষে দশ-পনের প্রজন্ম এই মনোভাব ধরে রাখবে।
ঊনত্রিশ বছর বয়স। চাকরি যেটা করি তাতে খেয়ে পরে দিব্যি যাচ্ছিল। পাশাপাশি পড়াশনা-লেখালিখি সব মিলিয়ে যথার্থ। বাড়তি ঝামেলা না নেয়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিয়েটা করে ফেলি। বৌ বাসর রাতে বিড়াল মারার ভঙ্গিতে সম্ভোগের আশা করা যাবে না আর কর্তৃত্ব বা অভিবাবকত্ব ফলানো যাবে না বলে দেয়। আমিও এক বাক্যে মেনে নিই। বাসার সবাই খুশি এটাই যথেষ্ট।
বিয়ের ছবি ফেসবুকে আপলোড দিলাম।
যাদের দাওয়াত দিই নাই তাদের আহাজারি দেখার জন্যই দেয়া। আপলোড দেয়ার ঘন্টা খানেক পর প্রথমা ফোন করলো। শুভ কামনা, সুন্দর মেয়ে পাইসো, সুখে থাকো, ভাল থাকো ইত্যাদি বলল। এরপর শুরু করলো তার লজ্জা পাওয়ার কাহিনী। আমাকে ছাড়া ঠিক হয়নি। সে সুখে নেই। তার জামাইয়ের সাথে আর হচ্ছে না। আমার সাথেই ভাল ছিল- এই সেই। আমি মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। ওয়েটিং-এ দ্বিতীয়া। আমি সুন্দর করে কথা শেষ করে দ্বিতীয়ার ফোন ধরলাম।
ভড়কে গেছি। নাক টানার শব্দ।
কান্নাকাটির আওয়াজ। মেয়েটা এত ছিচ-কাঁদুড়ে! কি একটা কাণ্ড! কথা বলতে বলতে ভাবছিলাম, আজ দানে দানে তিন দান হলেও হতে পারে। তৃতীয়া ফোন দিবে। ওদিকে বৌ ডাকছে খাবার রেডি। আমি কথা শেষ করে খেতে গেলাম। আমি বেশ আনন্দঘন অবস্থায় আছি। যারা ব্রেকাপের পর খবর পর্যন্ত নিতো না, সব যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ব্লক দিয়েছিল, তারা আমাকে ফলো করে, কোনো না উপায়ে। আমি গোগ্রাসে খেয়ে উঠে গেলাম। ফোন আসবে। প্রথমা আবার ফোন দিলো। ডেস্পারেট ও। কথা শেষে ফেসবুকে ঢুঁ মারলাম। লাভ- এংরি রিয়েক্ট আর কমেন্টে টইটম্বুর। ফেসবুকে কেমন পোড়া পোড়া গন্ধ। হৃদয় পোড়ার গন্ধ। জেলাসির গন্ধ। এই মেয়েগুলা ছিল কোথায়? তাদের সিক্রেট ফাঁস হয়ে গেল। আরো আগে ফাঁস করলে কি একটা অবস্থা হতো, ভাবছি। রুমে বৌ ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আমি একটু তাকিয়ে আবার মোবাইলে মনোযোগী হলাম।
– খুব চলছে, না?
– কী চলছে?
– আমি কি বুঝি না? তোমার এক্সপ্রেশন সব বলে দিচ্ছে।
বৌ যেখানে কথা-ই বলেনি এই আটদিন, আজ কী হলো!
বাসর রাতে ‘আপনি’ আজকে হুট করে ‘তুমি’। আমি তারপর কথা বাড়াইনি। তৃতীয়ার নাম মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। আমি বারান্দায় যাবো, এ মুহুর্তে ছোঁ মেরে বৌ আমার মোবাইল কেড়ে নিলো। ফোন কেটে খুব ওয়াইল্ড একটা আলিঙ্গন। এরপর আমার কাঁধে হালকা করে একটা কামড় বসালো।