পৃথিবীকে বদলে দেয়ার ক্ষেত্রে যে আবিষ্কারগুলো সবচেয়ে বেসি আলোরন সৃষ্টি করেছে তার মধ্যে উরোজাহাজ আবিষ্কার অন্যতম । উরোজাহাজ আবিষ্কার মূলত এক তিব্র প্রতিদ্বন্ডিতার গল্প । এই দ্বন্ডের এক প্রান্তে ছিলেন উরোজাহাজ আবিস্কারের প্রতিকৃত উইলবার রাইট ও তার ভাই অরভিল রাইট এবং অপর প্রান্তে ছিলেন গ্লেইম কার্টিস নামের একজন মোটর স্যাইকেন নির্মাতা । নানা ধরনের বিপদ আর দুর্ঘটনায় জর্জরিত এই তিক্ত প্রতিযোগিতার ফল পৃথিবীর ইতিহাসকে বদলে দিয়েছিলো অভাবনীয় উপায়ে । চলুন তাহলে যেনে নেয়া যাক উরোজাহাজ আবিষ্কারের সেই রোমাঞ্চকর ইতিহাস । ১৯ শতকের শেষের দিকে উইলবার রাইট এবং তার ছোট ভাই অরভিল রাইট যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যের ডেটোন শহরে একটি স্যাইকেল কোম্পানি পরিচালনা করতেন । দুই ভাই একসাথে বাই স্যাইকেল মেরামতের কাজ করে বেশ স্বাচ্ছন্দেই জীবন কাটাচ্ছিলেন । তাদের উভয়েরই ছিলো অসম্ভব উদ্ভাবনী শক্তি । তারা তাদের কল্পনা শক্তির জোরে অসম্ভবকে সম্ভব করতে স্বপন দেখতেন । তৎকালীন সময়ে অনেকেই আকাশে বিমান উরাতে পারলেও তখনো পর্যন্ত কেও সেগুলুকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছিলো না । নিয়োন্ত্রনের অভাবে প্রতিটি বিমানের যাত্রাই সমাপ্ত হচ্ছিলো ভূপতিত হয়ে সর্ঘর্ষের মাধ্যমে । একদিন উইলবার খেয়াল করে দেখলেন পাখিরা উড়ার সময় তাদের পাখার ডগা বাকিয়ে তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রন করে । তার এই পর্যবেক্ষন নিয়ন্ত্রন উদ্দয়নের ক্ষেত্রে যুগান্তকারি পরিবর্তন নিয়ে আসে । উইলবারের এই তত্ব্য অন্যযায়ী উড়ার সময় বিমানের পাখা নাড়াতে পারলেই বিমান নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব । পরবর্তীতে এই ত্বত্তের নাম হয় wing warping বা পাখা মোচড়ানো । পরবর্তি ৩ বছর রাইট ভায়েরা পূর্ন আকারের ইঞ্জিনবিহীন বিমান নির্মানে মননিবেশ করেন । বিমান উড়ানোর পরিক্ষার জন্য প্রোয়জন প্রর্যাপ্ত বাতাস সেই সাথে দুর্ঘটনায় ক্ষতি লাঘব করতে দরকার বালুময় ভূমি । ১৯০২ সালের নর্থ ক্যারোলিনার রাজ্যে কিটিহক সমুদ্র সৈকতে প্রথমবারের মত রাইট ভায়েরা তাদের ইঞ্জিনবিহীন বিমান পরিক্ষা করে ব্যর্থ হন । ১৯০৩ সালে প্রায় ১০০০ ডলার খরচ করে “ দ্যা রাইট ফ্লায়ার” নামে নতুন ডিজাইনের একটি বিমান নিয়ে আবারো সেই সমুদ্র সৈকতের নিকট ফিরে যান রাইট ভাত্রিদয় । এবার তারা রাডার ব্যবস্থাকে উন্নত করার সাথে সাথে ৪ সিলিন্ডার সমৃদ্ধ ১২ অর্শ ক্ষমতার একটি ইঞ্জিনও জুরে দেন বিমানটিতে । সেইবারি প্রথম মানুষের অধরা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেন এই দুই ভাই । ১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর উইলবার রাইট পরিক্ষামূলক বিমান চালোনার ৪র্থ দিনে ৮৫২ ফুট উচুতে ৫৯ সেকেন্ড ভেসে থেকে রেকর্ড স্থাপন করেন । এ পরিক্ষার পরপরি রাইট ভাত্রিদয় তাদের আবিষ্কারের জন্য পেট্যান্টের আবেদন করেন । অন্যদিকে ওয়াইয়ো থেকে ৫০০ মাইল দূরে নিউয়র্কের হেমন্ট স্পোর্টে আরেক উদ্ভাবক গ্লেন কার্টিস বিভর ছিলেন বমান আবিষ্কারের নেশায় । পেশায় মটর স্যাইকেল ডিজাইনার কার্টিসের ছিলো মটর ইঞ্জিন সম্পর্কে প্রচুর অভিজ্ঞতা । তখন কার্টিস রাইট ভাইদের চিঠি লিখে জানায় তিনি তার উন্নত ইঞ্জিনের সাহায্যে বিমানের আরও উন্নতি সাধন করতে পারবেন । ততদিনে বিমানে রাইট ভাইদের প্যাটেন্ট মঞ্জুর হয়ে যায় । এবং ভাল ইঞ্জিনের প্রয়োজনীয়তা সর্তেও তারা কার্টিসের সহযোগীতার প্রস্তাপ নাকোজ করে দেয় । এর ফলে কার্টিস হতাশ হবার পরিবর্তে রাইট ভাইদের আগেই উন্নত বিমান তৈরির সংলল্প করেন । আর এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ন অন্যতম এক উৎকর্ষতার লড়াই । ১৯০৭ সালে একটি কোম্পানি কার্টিসের বিমান নির্মানের জন্য বিনিয়োগ করে । এই কোম্পানির প্রধান অংশীদার ছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত বিজ্ঞানী “ আলেকজেন্ডার গ্রাহামবেল । রাইট ভাইদের উরোজাহাজ নকশার প্যাটেন্টের কারনে তারা একই ডিজাইনের বিমান নির্মান করতে পারছিলেন না । তাই গ্রাহামবেলের কোম্পানির মূল উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ন নতুন নিজস্ব নকশায় বিমান তৈরি করা । সে লক্ষে কাজ করে wing warping বা পাখা মোচড়ানো পরিবর্তে কার্টিস এক নতুন উপায় আবিষ্কার করেন । তিনি এর নাম দিলেন Ailerones ছোট পাখা । কার্টিসের এই ছোট পাখা গুলো ছিলো কবজায় লাগানো ছোট ছোট ফ্লেপ যা বিমানের প্রধান পাখার সাথে সংযুক্ত থাকতো । ফ্লেপ উঠা নামা করিয়ে কার্টিস বিমানকে স্থিতিশিল করতে সক্ষম হন । বর্তমান বিমানের ডিজাইনেও এই ফ্লেপ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে । Ailerones এবং ৪০ অর্শ খমতার ইঞ্জিন সম্পন কার্টিসের বিমানের নাম দেয়া হয় “জুন বাগ” তারা প্রমান করতে চাইলেন তাদের ডিজাইন রাইট ভাইদের চাইতেও অনেক বেশি কার্যকর । দ্যা সাইনটিফিক আমেরিকান কনটেস্ট নামে একটি প্রতিযোগিতায় বিমান চালানোর জন্য গ্লেন কার্টিস ও রাইট ভাইদের নমন্ত্রন জানানো হয় । কিন্তু রাইট ভায়েরা তাদের দিজাইন চুরি হওয়ার ভয়ে প্রতিযোগিতায় যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন । অন্য দিকে প্রতিযোগিতার মাত্র একদিন আগে জুনবাগের পরিক্ষামূলক উড্ডয়নের সময় গ্লেন কার্টিস দুর্ঘটনায় পরে অল্পের জন্য প্রানে বেচে যান । নিজের মানসম্মানের কথা ভেবে তিনি তার সহকর্মীদের কাজে লাগিয়ে দেন একদিনের মধ্যে জুনবাগের মডেলের আর একটি বিমান তৈরি করতে । ১৯০৮ সালের ৪ জুলাই নিউইয়র্কে প্রায় ২ মিনিট ভেষে থেকে এবং প্রায় ১ কিঃমিঃ পারি দিয়ে গ্লেন কার্টিস রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান । তার এই অভাবনীয় স্যাফললে রাইট ভাইদের আবিষ্কার হুমকির মুখে পরে যায় । তখন রাইট ভায়েরা পাল্টা পর্দশনীর আয়োজন করে । এরপর অ্যামেরিকান সেনাবাহিনী রাইট ভাইদের সাথে ২৫ হাজার ডলারের একটি চুক্তি করেন । ১৯০৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর টানা ৬২ মিনিট উড্ডয়ন করে অরভিল রাইট তৎকালীন সময়ের সকল রেকর্ড ভেঙে দেন । ১২ টি সফল উড্ডয়নের পর শেষ আনুষ্ঠানিক উড্ডয়নের জন্য টম সেলফিস নামের এক সামরিক অফিসার অরভিল রাইটের সাথে বিমানে উঠেন । সামরিক বাহিনীর জন্য প্রদর্শীত এই আয়োজন শেষ হয় একটি মারাত্বক দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে । প্রপেলার ভেঙে গিয়ে মাটিতে আছেরে পরে বমানটি । অরভিল অল্পের জন্য প্রানে বেচে গেলেও সামরিক অফিসার টমসেলফিস ইতিহাসের প্রথম ব্যাক্তি হিসেবে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যবরন করেন । পা এবং পাজরের হার ভেঙে অরভিল রাইট তার বাকিটা জীবন কাটায় অত্যন্ত যন্ত্রনায় । ১৯০৯ সালে নিউইয়র্কে একটি বিশাল উৎসবের আয়োজন করা হয় যার প্রধান আকর্ষন ছিল বিমান উড়ানোর পর্দরশনী । সে সময় আমেরিকার ৯০ শতাংশ মানুষী কোন বিমানকে উড়তে দেখেনি । জনসাধারনের সামনে উইলবার রাইট বিমান উড়িয়ে মানুষের মনে বিশ্বময় স্থাপন করেন । তখনো পর্যন্ত এটিই ছিলো মানুষের সামনে প্রথম বিমান চালানো । অন্যদিকে কার্টিস তার পুরনো ডিজাইন গুলোকে সমন্নয় করে নতুন নতুন ডিজাইন বানাতে থাকেন । সে সময় কার্টিস পানি ও আকাশে চালোনার উপযোগী সী প্লেনের প্রবর্তন করেন । এছারা আকাশ থেকে বোমা বর্ষনে বিমানো কার্টিসের নির্মান । গ্লেন কার্টিসের এই আবিষ্কার সামরিক উড্ডয়ন কে আমুল বদলে দেয় । এসব আবিষ্কারের পাশাপাশি রাইট ব্রাসার্স এবং গ্লেন কার্টিসের আইনি লড়াইয়ও চলছিলো সমান তালে । পেটেন্ট রক্ষার জন্য লড়তে লড়তে উইলবার রাইটি ১৯১২ সালের এপ্রিল মাসে মাত্র ৪৫ বৎসর বয়সে টাইফয়েট আক্রান্ত হয়ে মারা যান । ১৯১৪ সালের জুলাই মাসে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয় । এবং প্রথম বারের মত এই যুদ্ধ মাটি ছেড়ে আকাশে পৌছে যায় । ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে জার্মানি প্রায় ৫০ হাজার বিমান নির্মান করে । কিন্তু এদিকে রাইট ভাইদের পেটেন্টের কারনে আমেরিকায় বিমান শিল্প তখনো থমকে ছিলো । ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযেদ্ধে জরানোর পর আমেরিকান সরকার প্রথমি হস্তক্ষেপ করে বিমান ব্যবসার যুদ্ধ থামাতে । বিমানের পেটেন্ট শেয়ার করার জন্য অ্যামেরিকান সরকার অরভিল রাইটকে বাধ্য করে । এর ফলশ্রুতিতে গ্লেন কার্টিস ৭ হাজার নতুন ডিজাইনের গ্লেনি ফাইটার বিমান বিক্রি করে রাতারাতি সবচেয়ে বড় বিমান নির্মাতা সংস্থার মালিক বনে যান । যুদ্ধের পর কার্টিসের সাফল্য চলতেই থাকে । এবং ১৯২০ সাল নাগাত তিনি প্রায় ৩২ মিলিয়ন ডলারের মালিক হন । বর্তমান বাজার মূল্যে যা প্রায় ৩০০ মিনিয়ন ডলারেও বেশি । অপরদিকে অরভিল রাইট এক সময় বিমান ব্যবসা থেকে অব্যহতি নেন ।
Related Posts
NEC Corporation, formally known as Nippon Denki Kabushiki Gaisha, has been an integral part of Japan’s technological evolution for decades.…
কম্পিউটার! বর্তমান যুগে এই শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। টেবিলের ওপর টিভির মত দেখতে একটি যন্ত্র আর টেবিলের নিচে বাক্সের…
আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন: ন্যানো টেকনোলজি কি, ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায়. ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে, উৎপত্তি এবং…
টিনএজে বলতে কাদের বোঝায় তা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। মনস্তত্ত্ববিদরা তাদেরকে আলাদা প্রজাতি হিসেবেই বিবেচনা করে। তারা একই…
প্রোগ্রামিং হল নির্দেশনা তৈরি করার প্রক্রিয়া যা একটি কম্পিউটার বুঝতে এবং কাজ করতে পারে। আজকের বিশ্বে, কম্পিউটার আমাদের জীবনের একটি…
5 Comments
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
Ok
Thanks.
বেশ ভালো পোস্ট।
❤️
Nice