আসসালামু আলাইকুম,
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন?
আশা করি ভাল আছেন, সুস্থ আছেন। সেই কামনাই করি।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর অ্যাসাইনমেন্ট এর মতই ২০২২ সালের এইচ এস সি পরীক্ষার্থীদের সরকার কর্তৃক অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান করা হয়েছে।
বরাবরের মতোই আজকে আমি এই পোস্টে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দেওয়া বাংলা অ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও একটি নমুনা উত্তর আপনাদের সুবিধার্থে লিখে দিব।
আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে।
ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ –
১.অপরিচিতা গল্প অনুসরণে কল্যাণী সংকট এবং এই থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তার মনোভাবের পরিচয়।
২. অনুপম এবং অন্যদের ভূমিকা ইতিবাচক হলে কল্যাণের জীবন কেমন হতে পারত, এর বিবরণ।
৩. বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই চেনাজানা কোন নারীর এগিয়ে চলার পথে প্রতিবন্ধক গুলো নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা।
৪. পঠিত গল্প ও চেনাজানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এগিয়ে চলার পথে সহায়ক ভূমিকা গুলি চিহ্নিত করা।
উত্তর নং ১-
অপরিচিতা গল্পে কল্যাণী সংকট হলো সঠিক সময়ে বিবাহ না হওয়া।
মেয়ের বয়স ১৫ শুনে লেখক এর মামার মন ভার হলো। কারণ তিনি মনে করলেন যে ওই মেয়ের বংশ কোন দোষ আছে। তখন আট থেকে দশ বছর বয়সের মধ্যে কন্যার বিয়ে দেওয়ার রীতি ছিল। এই সময়ের মধ্যে মেয়ের বিয়ে না হলে মনে করা হতো যে মেয়ের বংশ কোন দোষ আছে যে কারণে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। যে মেয়ের সাথে অনুপমের বিয়ের কথা চলছিল তার বয়স ১৫।১৫ বছর বয়সেও মেয়ের বিয়ে হয়নি এমনটি ভেবে অনুপমের মামার মন ভার হল।
২)অপরিচিতা গল্পে কল্যাণী ছিল বেশ সুন্দরী ও প্রাণচঞ্জল।
আর পিতা শম্ভুনাথ বাবু ছিলেন স্পষ্টভাষী ও একজন সুপুরুষ
ব্যক্তি, অন্যদিকে অনুপমের মামা বিয়ের পণ, যৌতুক সম্পর্কে
কোন প্রকার ছাড় বা আপস করতে রাজি নন। এখানেই গল্পের
কাহিনী জটিলতায় রূপ নেয়। রীতিমতাে বেশ আয়ােজনের
মধ্যে দিয়ে যদিও বিয়ের কাজ শুরু হয়েছিল, কিন্তু এক পর্যায়ে
দেনা পাওনা কারণে সব আনন্দ আয়ােজন এক মুহুর্তেই
ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় অথ্যাৎ যৌতুকের জন্য বিয়ে ভেঙ্গে যায়।এই
গল্পে অনুপমের চরিত্রের সীমাহীন দুর্বলতা ও শিক্ষকতাকে তিনি জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন আর শিক্ষা-দীক্ষার কারণে বিবাহ সংকট মোকাবেলা করেছেননিবুদ্ধিতার
পরিচয় পাওয়া যায়। অনুপম ও তার মামা ভুমিকা যদি
ইতিবাচক হতাে তাহলে কল্যাণীর সংসার সুখময় হতাে বলে
আমি মনে করি। বিবাহ ভেঙে যাওয়ায় প্রধান কারণ হলাে
অনুপমের দুর্বলতা ও তার মামা যৌতুক প্রবনতা।
উত্তর নং ৩-
পঠিত গল্প অনুসারে নারীকে এগিয়ে চলার পথে প্রতিবন্ধকতা গুলো হল-
ক. শিক্ষার অভাব খ. কুসংস্কার গ.ধর্মীয় ঘ. পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা
নারী উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় নিয়ে ব্যাখ্যা করা হলো-
‘ বিশ্বে যা কিছু আছে মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’
সাম্যবাদী কবিতা কাজী নজরুল ইসলাম এ সত্য উচ্চারণ করলেও আজও আমাদের সমাজে তার যথাযথ স্বীকারোক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও আজও মানুষের ধ্যান-ধারণার তেমন পরিবর্তন হয়নি। এখনো সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে নারীদের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়।
অশিক্ষা, কুসংস্কার এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর প্রথম আনে পরিবার থেকে হা নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন দুটি বিষয়ই একটি অন্যটির পরিপূরক। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নারী উন্নয়ন বিষয়টি বিশেষ ভূমিকা রাখে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলােতেই যেখানে নারীদের পদযাত্রায়
বারবার হোঁচট খেতে হয়, সেখানে তৃতীয় বিশ্বের একটি
উন্নয়নশীল দেশের নারী হিসেবে বাঙালি নারীদের প্রতিটি
পদক্ষেপে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখােমুখি হতে হয়।
অশিক্ষা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা
নারী উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। অথচ সময় পরিবর্তনের সঙ্গে
সঙ্গে নারীরা আজ শুধু রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ নেই, নারীরা পৌঁছে
গেছেন বিমানের ককপিট থেকে পর্বতশৃঙ্গে। দশভুজা নারী
ঘরে-বাইরে নিজেকে আলােকিত করছেন নিজ প্রজ্ঞা আর
মেধা দিয়ে। বর্তমানে এমন কোনাে পেশা নেই যেখানে নারীর
মর্যাদাপূর্ণ উপস্থিতি নেই। দেশে এখন প্রধান দুটি রাজনৈতিক
দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দু’জন নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকার
একজন নারী। বর্তমানে সবক্ষেত্রেই রয়েছে নারীর পদচারণা।
নারীর সমাধিকার ও নারীমুক্তির কথা যতই বলা হোক না কেনউন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল সব দেশেই নারীরা কম-বেশি
সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার। সামাজিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও
নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র সবক্ষেত্রে প্রায় একই।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই নারী, কিন্তু নারীর
অগ্রগতি ও উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে। খুব অল্প সংখ্যক নারীর
মধ্যেই। তাদের অনেকেই নিজের সিদ্ধান্তে স্বাধীনভাবে
চলাফেরা করতে পারেন না এবং নিজের বস্তুগত ক্ষমতার
পরিসরও স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে বাধাগ্রস্ত হন। নারীশিক্ষার
বিষয়টি আমাদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক
উন্নয়নের সঙ্গে অপরিহার্যভাবে জড়িত। নেপোলিয়ন
বলেছিলেন, ‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত
জাতি দেব।’ এ বিষয়ে আরবিতেও। একটি প্রবাদ আছে,
একজন পুরুষ মানুষকে শিক্ষা দেওয়া মানে একজন ব্যক্তিকে
শিক্ষা দেওয়া। আর একজন নারীকে শিক্ষা দেওয়া মানে একটি
গােটা পরিবাৱকে শিক্ষিত করে তােলা।’ তাই নারীশিক্ষার গুরুত্ব
বর্ণনাতীত। তথাপি শিক্ষা ক্ষেত্রেও এ বৈষম্যের কোনাে শেষ
নেই। যদিও শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে এখন নারীদের অংশগ্রহণ
শতভাগ।
মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন।
বাংলাদেশের সংবিধান দ্বারাও তা স্বীকৃত। কিন্তু প্রায় ৫০
বছরেও তা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। নারীবান্ধব
কর্মক্ষেত্রের অভাব ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পিছিয়ে
দিচ্ছে নারীর উন্নয়ন যাত্রাকে। প্রচার মাধ্যমগুলােতে নারীর
নেতিবাচক উপস্থাপন বন্ধ হতে হবে। নারী কোনাে পণ্য নয়।
নারীদের নিজেদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নারীপুরুষের সমান স্বার্থ রক্ষাকারী আইন প্রবর্তন ও আইনের সঠিক
বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। নারীশিক্ষা ও নারীর মত
প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। নারীকে তার কাজের যথাযথ
স্বীকৃতি দিতে হবে। নারীর কাজকে ছােট করে দেখা চলবে না।
নারীর কাজের মূল্যায়ন হতে হবে। সর্বোপরি, নারীর প্রতি
ইতিবাচক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নকে
ত্বরান্বিত করতে পারে।
৪/
পঠিত গল্প অনুসারে নারীকে এগিয়ে চলার পথে সহায়ক ভূমিকা-
১/ সর্বোত্তম নারীর অংশগ্রহণ বাড়ালেই চলবে না, কাজের গুণগত উন্নয়ন জরুরী
২/কোন দেশের উন্নয়নের জন্য নারীর উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ। নারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে গিয়ে আনতে হবে।
৩/ নারীর আনুষ্ঠানিক কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করা করা।
৪. কর্ম ক্ষেত্রে লিঙ্গ সংবেদনশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
৫.মেয়ে ও ছেলের সবার শিক্ষা স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. নারীবান্ধব আইন যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
ধন্যবাদ।
সকল ধরনের এসাইনমেন্ট প্রশ্ন পেতে রাখা ডটকম এর সাথেই থাকুন।