আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমরা এখন অনেকটাই ঘরমুখো হয়ে পড়েছি। কিছুদিন পূর্বে আমাদের উপর দিয়ে বয়ে গেল করোনাভাইরাসের দমকা হাওয়া। যা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে, যখন ঘরে থেকেই সব পাচ্ছি তো বাহিরে গিয়ে ঘুরাঘুরি করছি কেন। বর্তমানে অনলাইন ব্যবসা একদম সহজ হয়ে গিয়েছে যার কারণে বেশিরভাগ মানুষ এখন অনলাইন বিজনেসের প্রতি আগ্রহী। যেখানে করোনা ভাইরাসের জন্য পুরো বিশ্বের সবকিছু বন্ধ ছিল। সেখানে যারা অনলাইন বিজনেস করত তাদের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। যেমন বর্তমানে প্রসিদ্ধ ই-কমার্স সাইট alibaba.com এর দিনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে এই খবর শোনা গিয়েছে। তাই আপনাদেরকে আজ এমন পাঁচটি অনলাইন বিজনেসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো যা অত্যন্ত সহজ কিন্তু তার প্রফিট অনেক বেশি।
১. ই-কমার্স (E-commarse):
বর্তমানে এই পদ্ধতি অনেক প্রসিদ্ধ অনেকেরই এই নামটা শোনা শোনা লাগছে। সর্বপ্রথম প্রশ্ন হল ই-কমার্স এর অর্থ কি? এর বাংলা আভিধানিক অর্থ হলো ই-ব্যবসা অনলাইন ব্যবসা। আপনারা যারা ব্যবসা করেছেন তারা জানেন যে, প্রথমে আপনাদেরকে মূলধন অর্থাৎ চালান দিয়ে পণ্য কিনতে হয় যেমন আপনার ফলের ব্যবসা। তো আপনি 50 টাকা কেজি করে 100 কেজি আপেল কিনলেন এবং এগুলো আপনি দোকানে সাজিয়ে রাখলেন। এবং 80 টাকা দরে বিক্রি করলেন তো আপনি এখানে যে কাজটা করলেন তাকে ব্যবসা বা বিজনেস বলে কিন্তু আপনি যদি সেম কাজটা অনলাইনে করেন তাহলে তাকে বলা হবে ই-বিজনেস। তবে এখানে পার্থক্য হলো আপনার দোকান থাকা অবস্থায় আপনার কাছ থেকে কাস্টমার কিনে নিয়ে গেছে কিন্তু এখন আপনাকে কাস্টমারের নিকট পণ্য পৌঁছে দিতে হবে। ওখানে আপনার দোকান ছিল কিন্তু এখানে আপনার দোকান হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইট এবং আপনার ফেসবুক পেইজ এই ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজ এর মধ্যেই আপনার পণ্যগুলো সাজিয়ে রাখবেন এবং আপনার মনে করতো না এটাই আপনার দোকান।
যেভাবে করবেন:- প্রথমে আপনি আপনার চালান দিয়ে পণ্য ক্রয় করবেন যেমন আপনি যদি কাপড়ের ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনি কাপড়ের বিভিন্ন পাইকারি মার্কেট থেকে 100 টাকা দরে 1000 পিস কাপড় ক্রয় করবেন। এবং সেগুলো আপনার ঘরে বা গোডাউনে মওজুদ করবেন। অতঃপর আপনি আপনার পণ্যগুলোর মূল্য ও ডিটেইলস আপনার ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখবেন। এখন আপনাকে অর্ডার আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তো অর্ডার তাড়াতাড়ি আসার জন্য আপনি আপনার ওয়েবসাইটটি প্রমোট করুন। ফেসবুকে আপনার ওয়েবসাইটের পেজ খুলুন আপনার পোস্টগুলো বুস্ট করুন গুগলের অ্যাড সার্ভিস ব্যবহার করুন। সাধারণত ফেসবুক বুস্ট করলেই অর্ডার আসা শুরু হয়ে যায় গুগল পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন পরে না। এখন যেহেতু আপনার অর্ডার এসে পড়েছে এখন আপনার ডেলিভারি দেওয়ার পালা। এর জন্য আপনি বিভিন্ন ডেলিভারি সার্ভিস প্রোভাইড করে এরকম কোম্পানির সাথে ডিল করেন। এর মধ্যে রয়েছে পাঠাও, সহজ। অথবা আপনি কয়েকজন ডেলিভারি ম্যানকে চাকরিতে রাখুন। বা আপনি নিজেও ডেলিভারি দিতে পারেন যখন আস্তে আস্তে আপনার কোম্পানি বড় হবে তখন আপনি ডেলিভারি মন রাখবেন। এটা আপনার ইচ্ছা। মনে রাখবেন অনলাইনে যত ধরনের ব্যবসা আছে সব ব্যবসা থেকে বেশি লাভ রয়েছে এই ই-কমার্সে আপনি ধৈর্য ধরে কাজ করতে থাকুন। অবশ্যই সফল হবেন সেদিন আর পিছে ফিরে দেখতে হবে না।
২. রিসেলিং (Reselling): রিসেলিং মানে কি?
রিসেলিংএর আভিধানিক অর্থ হল পুনরায় বিক্রি করা। এটাও ই-কমার্স এর মতই কিন্তু পার্থক্য হল ই-কমার্স এর মধ্যে চালান এবং লাভ সব আপনার। কিন্তু রিসিলিং এর মধ্যে লাভ আপনার বাকি চালান তার এমন নয় যে তার লাভ নাই তারও অবশ্যই লাভ আছে। সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে আপনি পণ্যের বিক্রেতা এবং পণ্যের ক্রেতা দুজনের মাঝে একজন মিডল ম্যান হিসেবে থাকবেন। অর্থাৎ দেখা যায় যে একটা কোম্পানি একটা পণ্য তৈরি করেছে এবং সে তা বিক্রি করার জন্য ক্রেতা পাচ্ছে না আবার একজন ক্রেতার এই পণ্যটি প্রয়োজন কিন্তু টা কোথাও পাচ্ছে না। সে কি তা কিনতে পারছে না এখানে আপনার কাজ হচ্ছে পণ্যটি বিক্রেতা থেকে ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। এর মধ্যে আপনার লাভ হল যে আপনি যে কোম্পানি থেকে নিয়েছেন সেই কোম্পানি এই পণ্যটির যেই দাম নির্ধারণ করেছে তার থেকে আপনি যত বেশি দামে বিক্রি করবেন তত টাকা আপনার লাভ। পূর্বোক্ত লেখাগুলো পড়ে অবশ্যই বুঝে গেছেন রিসেলিং কাকে বলে এখন আমি কিভাবে করবেন সে বিষয়ে আলোচনা করব:-
অনলাইন বিজনেস এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে রিসেলিং। বর্তমানে এই রিসেলিং বিজনেস আপনি একটি এন্ড্রয়েড ফোন দিয়েই করতে পারবেন। এবং বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমে করতে পারবেন। বরঞ্চ বর্তমানে বেশি প্রসিদ্ধ। রিসেলিং করতে পারবেন এমন পাঁচটি অ্যাপ এর তালিকা:-
1. Shop up resellar
2. Mesho
3. Shop101 Resellar
4. Daraz Selling
5. Uddom
এই অ্যাপগুলোর সিস্টেম হল:- আপনাকে অ্যাপসে ঢুকার সাথে সাথে স্টোর তৈরি করতে বলা হবে। এবং আপনাকে তাদের সমস্ত পণ্যের লিস্ট দেওয়া হবে আপনি এখান থেকে আপনার পছন্দের সামগ্রীগুলো সিলেক্ট করে আপনার স্টোর তৈরি করুন। বলাবাহুল্য প্রত্যেকটা পণ্যের সাথে দাম দেওয়া থাকবে এই দামটি হল পণ্যের আসল মূল্য। তো স্টোর তৈরি করার পর এবার আপনার পণ্যগুলোকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন মনে রাখবেন শেয়ার করার সময় অবশ্যই আপনি যত টাকা দিয়ে পণ্যটি বিক্রি করতে চান সেই দামটি লিখে দিবেন। যখন কেউ আপনাকে অর্ডার করবে তখন আপনি অ্যাপস এ গিয়ে তার নাম, এড্রেস এবং ডিটেলস সাবমিট করুন। এবং সাথে উল্লেখ করে দিন যে আপনি কত টাকা বেশি নিচ্ছেন তাতে কোম্পানির পক্ষ থেকে যে ডেলিভারি ম্যান যাবে তাকে যেন কোন ভোগান্তি না পোহাতে হয়। মনে রাখবেন আপনার লাভের টাকাও কোম্পানির ডেলিভারিম্যান পণ্যের দামের সাথে নিয়ে এসে কোম্পানিতে জমা দিবে এবং পরে কোম্পানি তাদের নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত অংশ আপনাকে পে করে দিবে যেই টাকা আপনার বলে গণ্য ছিল না।
৩. ওয়েবসাইট থিম ডেভেলপ:- আপনি ওয়েব সাইট ডেভেলপ করেও অনলাইন বিজনেস করতে পারেন। যেমন আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপার এবং ডিজাইনার আপনি আপনার এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অনেক বড় একজন বিজনেসম্যান হতে পারবেন। কারণ দেখেন অনলাইনে যে কোন ধরনের বিজনেস করতে হলে ওয়েবসাইট প্রয়োজন । এক হিসেবে অনলাইন বিজনেস এর মাথা হিসাবে ধরা যায় ওয়েবসাইটকে অর্থাৎ অনলাইন বিজনেস এর মাথা হল ওয়েব সাইট মাথা ছাড়া যেমন দেহ চলে না সেরকম ভাবেই ওয়েবসাইট ছাড়া অনলাইন বিজনেস চলতেই পারেন। এক হিসেবে দেখা যায় অনলাইন বিজনেসের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় কাঁচামালের ব্যবসা আপনার সেই হিসেবে আপনার ব্যবসায় লস হওয়ার সম্ভাবনাই নেই বর্তমানে ওয়েবসাইট তৈরীর খাতে লোক অনেক কম এবং ওয়েবসাইট এর চাহিদা অনেক বেশি।
যা যা করতে হবে আপনাকে: – প্রথমত আপনাকে অবশ্যই ওয়েব ডেভেলপ এবং ডিজাইন জানতে হবে এবং ইউনিক ডিজাইন করার মতোই স্কিল থাকতে হবে। অথবা আপনি বিভিন্ন ওয়েব ডেভলপার এবং ডিজাইনারদের হায়ার করতে পারেন বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে আপনি এমন অনেক ওয়েব ডেভেলপার পাবেন যারা কাজ করতে আগ্রহী। আপনি তাদের দিয়েও কাজ করাতে পারেন। এখন সর্বপ্রথম আপনাকে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। যার মধ্যে আপনি আপনার তৈরি করা ওয়েব থিমগুলোর ডিটেলস এবং এমাউন্ট এন্ট্রি করে রাখতে পারবেন। আপনি বিভিন্ন ক্যাটাগরির ইউনিক ১৫/২০ টা ওয়েবথিম ডিজাইন করে সাইটগুলো কে আপনার ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখুন। অতঃপর বিভিন্ন প্রসিদ্ধ ইউটিউবার এবং ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটটি প্রমোট করুন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনি আপনার বিজনেস কে সফল ভাবে দাঁড়া করাতে সক্ষম হবেন। এবং বস্তায় বস্তায় টাকা কামাতে পারবেন। আর এখানে প্যাকেজিং ডেলিভারি দেওয়ার ঝামেলা ও নেই।
৪. এফিলিয়েট মার্কেটিং: এটা একটা পণ্য প্রচার করার মাধ্যম। এর পদ্ধতি হল:- ধরেন কোন কোম্পানি কোন নতুন পণ্য বাজারে আনল। এখন তারা তাদের পণ্য প্রচার করার জন্য প্রসিদ্ধ ব্লগার এবং ইউটিউবারদের পার্সেন্টেজ এর মাধ্যমে হায়ার করে। যদি আপনি ভাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হন এবং আপনার হিউজ পরিমান ফলোয়ার থাকে তাহলে আপনি এই বিজনেসটা করতে পারেন। তবে আপনার অবশ্যই ইউনিক এবং অভিনব পন্থায় কন্টাক্ট করার স্কিল থাকতে হবে যাতে আপনার কন্টেন্ট পরে মানুষ এই পণ্যটি ক্রয় করে। যেভাবে করতে পারবেন:- আপনাকে বিভিন্ন বড় বড় ই-কমার্স ওয়েবসাইট এ কন্টাক্ট করতে হবে যেমন:-
1. Amazon
2. Alibaba
3. Daraz
4. Pickaboo
5. Alesha Mart
যদিও বর্তমানে এই ই-কমার্স কোম্পানি গুলোর ওয়েবসাইটে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে জয়েন করার জন্য অপশন দেয়া থাকে।
আপনার যা করতে হবে:- আপনি যখন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে জয়েন করবেন। তখন আপনার কাজ হবে তাদের পণ্যগুলো রিভিউ করা। এবং তারা তাদের থেকে পণ্য ক্রয় করার জন্য যেই লিংক টা আপনাকে দিবে সেটা আপনার ব্লগ হলে রিভিউ লিখার পর তাদের দেওয়া লিংকটি দিয়ে দিন। আর যদি ইউটিউবার হন তাহলে রিভিউর মাঝেই বলে দিবেন যে পণ্যটি ক্রয় করার লিংক ডেসক্রিপশনে পেয়ে যাবেন। এখন যদি ওই লিংকে ক্লিক করে কেউ পণ্য কিনে তাহলে পণ্যের দাম থেকে আপনি একটা পার্সেনট পেয়ে যাবেন। তবে এফিলিয়েট বিজনেসের জন্য সবচেয়ে ভালো সার্ভিস amazon.com এর তারা তাদের মার্কেটারদের বিভিন্ন সময় অনেক আকর্ষণীয় অফার দিয়ে থাকে। আর যদি আপনি শুধু বাংলাদেশে করতে চান তাহলে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো দারাজ।
৫. বিজ্ঞাপন: বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় বিজনেস বিভিন্ন প্রসিদ্ধ ব্লগার এবং ইউটিউবার রা শুধু বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা উপার্জনের জন্য তারা ব্লগিং এবং ইউটিউবিং করছে। আবার আপনার ক্রিয়েট করা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস এ বিজ্ঞাপন দিয়ে ও এই পদ্ধতিতে বিজনেস সম্ভব। যেমন আপনার একটি প্রসিদ্ধ ইউটিউব চ্যানেল বা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস রয়েছে। যার মাধ্যমে আপনি বিজ্ঞাপন প্রচার করেন। এখন একটি কোম্পানি তাদের নতুন কোনো পণ্য বাজারে এনেছে। এখন তাদের প্রয়োজন হলো এই পণ্যের প্রচার-প্রসার করা। তখন তারা প্রচারের জন্য বিভিন্ন প্রসিদ্ধ ব্লগার এবং ইউটিউবার খোঁজ করবে। তখন আপনি তাদের সাথে চুক্তি করবেন বা তারাই চুক্তি করবে আপনার সাথে যে আমাদের এই পণ্যের বিজ্ঞাপন এতদিন আপনার প্লাটফর্মে থাকবে এবং আমরা আপনাকে প্রতিদিন এত টাকা করে দিব। তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার সাইটটাকে গ্র করতে হবে। যদি আপনার সাইটে ট্রাফিক ভাল হয় তাহলে আপনি গুগল এডসেন্স থেকে ও একই পদ্ধতিতে আয় করতে পারবেন।
সারকথা আপনি অনলাইনে বিজনেস করে বস্তাভর্তি টাকা আয় করতে পারবেন। তবে আপনাকে লাগাতার ধৈর্য এবং পরিশ্রম করতে হবে। মনে রাখবেন ধৈর্যের ফল কখনো তিক্ত হয়না।