লেখার শুরুতেই ফুসফুস সম্পর্কে একটু ধারনা দিই। ফুসফুস আমাদের শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। আমাদের বুকের বাঁ দিকে রয়েছে হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ডের দুই পাশজুড়েই ফুসফুসের অবস্থান। ফুসফুসের কাজ শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্য করা এবং জীবাণুমুক্ত বায়ু হৃৎপিণ্ডে পৌঁছানো, আর সেই বায়ু হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেনযুক্ত করে সারা দেহে পাঠানো। মানুষের দেহে দুটি ফুসফুস থাকে। দুটি ফুসফুসকে একত্রে বলা হয় ব্রংকাস। শ্বাস নেওয়ার সময় তা বেলুনের মতো ফুলে যায় এবং শ্বাস ছাড়ার পর আগের অবস্থায় ফিরে আসে। তাই ফুসফুসকে দেহের বেলুনও বলা হয়। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি মিনিটে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় ১২ থেকে ১৮ বার। আর শিশুরা নেয় ২০ থেকে ৩০ বার। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানসিক অবস্থার কারণে এর পরিবর্তন হতে পারে।
ফুসফুস স্পঞ্জের মতো নরম ও কোমল। এটি হালকা লালচে রঙের হয়। স্বাভাবিক পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দুটি ফুসফুসের ওজন একত্রে হয় প্রায় ১.৩ কিলোগ্রাম। ফুসফুস দুই ভাঁজবিশিষ্ট প্লুরা নামক পর্দা দ্বারা আবৃত। দুই ভাঁজের মধ্যে এক প্রকার রস নির্গত হয়। ফলে শ্বাসক্রিয়া চলার সময় ফুসফুসের সঙ্গে বক্ষগাত্রের কোনো ঘর্ষণ লাগে না। কিন্তু শরীরের এই ফুসফুস নামক অঙ্গটি কিন্তু আদরযত্ন না পেলে বিগড়ে বসে। এর জন্য দরকার নিয়মিত কিছু সুষম খাদ্য। সকল চিকিৎসকই এই প্রসঙ্গে একমত যে ফুসফুস চাঙ্গা রাখতে ধূমপান ত্যাগ করাই প্রাথমিক শর্ত। কিন্তু তা ছাড়াও এমন কিছু খাবার রয়েছে, যা নিয়মিত খেলে ফুসফুসের স্বাস্থ্য থাকে তরতাজা। সেগুলো নিম্নে আলোচিত হলো :
১। বেরি:
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি কিংবা ব্ল্যাকবেরিতে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন। ফুসফুস যখন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কমজোর হয়ে পড়ে, নিয়মিত এই ফলটি খেলে বেরির মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ফুসফুসের অবস্থার সেই অবনতির মাত্রা অনেকাংশে হ্রাস করে।
২। লবন:
খাবারে অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার ফুসফুসের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক। ফলে রান্না করা খাবারে পরিমিত মাত্রার লবন ব্যবহারে সুস্থ থাকবে ফুসফুস।
৩। সবুজ শাক-সবজি:
শাক-সবজি শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জন্যই জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। সমীক্ষায় জানা যায়, সবুজ শাক-সবজি ফুসফুসের ক্যানসারের আশঙ্কা প্রবলভাবে হ্রাস করে। ফলে পালংশাক, মেথি, ব্রোকোলি, সবুজ ক্যাপসিকাম, প্রভৃতি এবং নানা মরসুমি সব্জি আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকা জরুরি।
৪। লাল রঙের ফল এবং সবজি:
বিশেষজ্ঞদের মতে লাল ক্যাপসিকাম, টমেটোর মতো সব্জি ও ফলে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ফুসফুসের পক্ষে উপকারী। শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে টমেটোর রস বেশ কার্যকরী। তাছাড়া লাল রঙের ফল ও শাকসব্জি সেই সমস্ত রোগীর জন্যও বিশেষ দরকারি, যারা দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের সমস্যায় জর্জরিত।
৫। কফি:
শ্বাসনালীর প্রদাহ হ্রাস করতে কফিও আমাদের কাজে লাগে। এতে রয়েছে পলিফেনল, যা ফুসফুস চাঙ্গা রাখতে বিশেষ সহায়ক। তবে অতিরিক্ত কফি পান ক্ষতিকারক।