বিছানায় শুয়ে মোবাইল ঘাটছে আবির।তার উপরে এলোচুলে লেপ্টে আছে সাথী। হোম পেজ স্ক্রল করতে করতে টুং করে একটা ম্যাসেজ এল আবীরের ফোনে। রিফাতের ম্যাসেজ-“কই তুই?জলদি আয় ক্লাসে।আজকে লাস্ট ক্লাস”।
ম্যাসেজ টা সীন করে উঠে পড়ল আবির। তাড়াহুড়ো করে শার্ট প্যান্ট গায়ে জড়িয়ে জুতো খুজতে লাগল সে।সাথি তখনো আধঘুমে ঢুলছে।ঘুম ঘুম কন্ঠে কোন রকমে বলে উঠল
-কোথায় যাচ্ছ এত সকাল সকাল?
আবির মানিব্যাগটা পকেটে গুজতে গুজতে জবাব দিল
– লাস্ট ক্লাস আজকে।
– না গেলে হয় না?
-উহু।ক্লাস শেষ করে সবাই মিলে লাঞ্চ এ যাবে।
সাথী কিছু বলার আগে আবির তার ঠোট দুটোতে ঠোট ডুবাল। রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিল সাথির শরীরের ভাজগুলোতে।
আবির আর সাথীর প্রেম বছর খানেক হচ্ছে।ভার্সিটির এক আন্দোলনে পরিচয় তাদের। সেই থেকে কথা বলা আর তারপর প্রেম।বেশ ভালোই চলছে তাদের জিবন যাপন।মাস দুয়েক হচ্ছে আবির আর সাথি লিভ ইন এ আছে ।সারাদিনের সব ধকল আবিরের নিমিষেই মিটে যায় সাথীর আলিংগনে।
ক্লাস শেষ করে সবাই রেস্টুরেন্টে বসেছে।খাবার দাবারের পাট চুকিয়ে গল্পে ব্যস্ত সবাই।প্যান্টের বা পকেটে ফোন টা কেপে ঊঠল আবিরের।মোবাইল বের করে দেখে স্ক্রীনে এক খুদে বার্তা।
“কখন আসবে তুমি? “-সাথী।
ছোট একটা হাসি দিয়ে ফোনটা আবার পকেটে ঢুকিয়ে রাখল আবির।আড্ডা শেষে বিল মিটিয়ে সবাই রেস্টুরেন্ট ছাড়বে ঠিক তখনই পিছন থেকে একজন চেচিয়ে উঠল।সবাই ঘুরে তাকিয়ে দেখে ওহী মাটিতে হাটু গেড়ে বসে আছে।ফোনটা হাত থেকে পরে ছিটকে গেছে দূরে।বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে সামনে। সবাই গিয়ে ধরাধরি করে বসাল।কেউ একজন ফোন কানে তুলে নিয়ে হ্যালো হ্যালো করছ। কিন্তু ততক্ষনে লাইন কেটে গিয়েছে। ওহী ধাতস্ত হতে মিনিট দুয়েক সময় নিল।তারপর চোখ তুলে আবীরের পানে চেয়ে বলল
-নিশি সুইসাইড করেছে।
ওহীর কথা শুনে সবাই কেপে উঠল।মুহুর্তেই পিন পত্তন নিরবতা ছেয়ে গেল সবার মাঝে।
আবির কিছু বলা উঠার আগেই ওহী আবার বলল
– সদর হাসপাতালের মর্গে লাশ রাখা আছে।পুলিশ তোকে খুজছে।
আবিরের মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়ল শুনে। নিশি সুইসাইড করেছে?তার নিশি সুইসাইড করেছে?এই মাত্র মাস চারেক আগেই না নিশির সাথে সে ব্রেকাপ করল!মাত্র সপ্তাহ খানেক আগেও না মেয়েটা রেস্টুরেন্টে চেক ইন দিয়ে ডে দিল। কোন ভাবেই কিছু মেলাতে পারছেনা আবির৷ কোন কথা না বলে এক ছুটে গিয়ে পৌছাল হাসপাতালে।মর্গের দিকে আগাতেই একজন পুলিশ তার পথ আটকালো
-এক্সকিউজমি কোথায় যাচ্ছেন?
আবিরের মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। কোন রকমে বলে উঠল
– নিশি।
ইন্সপেক্টর ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল
-আপনি কি মি.আবির?
আবির মাথা নেড়ে সায় দিল।ইন্সপেক্টর একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে ধরিয়ে দিল আবিরের হাতে। আবির কাপা হাতে চিঠিটা খুলল।গুটি গুটি অক্ষরে সাজিয়ে লেখা
-“আমার জিবনটা হয়তো এভাবেই শেষ হওয়ার ছিল।বাবা মা তোমাদের প্রতি এত গুলো ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা আমাকে আদর যত্নে বড় করার জন্যে। আমি তোমাদের স্বপ্ন পূরন করতে পারিনি।পারলে আমাকে মাফ করে দিও। আবির তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি সব টা আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি। তোমার বিচার সেই করবেন। আমার সুইসাইডের জন্যে কেউ দায়ী না।সবাই ভালো থাকবেন। আমাকে মনে রাখবেন।
-ইতি
নিশি”
চিঠিটা পরে ডুকরে কেদে উঠল আবির। মেয়েটা অনেক বেশিই ভালো বাসতো তাকে।টানা দুই বছরের সম্পর্ক ছিল তাদের।হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো,রাত জেগে পূর্নিমা দেখা,নদীর ধারে বসে নানা কাজের গল্প করা,অসুখ হলে সারারাত জেগে জলপট্টি দেওয়া কোনটাই বাকি রাখেনি মেয়েটা।সবকিছুই ভালো চলছিল।কিন্তু সাথীর সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে যেন সব পালটে গেল আবিরের জীবনে।ধীরে ধীরে সাথীর প্রতি তার উইকনেস কাজ করতে লাগল।নিশি শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট মেয়ে।নিজের ভালোবাসার প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস।চোখের সামনেও তাই আবির আর সাথির ঘনিষ্ঠতা তার মনে তেমন দাগ কাটতে পারেনি।ব্যাপারটা বুঝতে পারে আবির অবহেলার বেড়াজাল বুনল। দূরত্ব বেড়াতে লাগল নিশির সাথে। ভেবেছিল ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়ে সম্পর্কটা শেষ করে দিবে।টুপ করে সব দোষ চাপিয়ে দিবে নিশির ঘাড়ে।নিশি দু একদিন কেদে এগিয়ে যাবে সামনে। কিন্তু বিধি বাম।হুট হাট করে নিশি সুইসাইড করে বসল।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে ফিরে এল আবির। পুরো মেস ফাকা। কেউ নেই। সবাই নিশিকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছে।কিন্তু হাসপাতাল অথরিটি কাউকে লাশ দেখতে দিচ্ছে না। সুইসাইড করার কারনে নাকি লাশের চেহারা প্রচন্ড রকমভাবে বিকৃত হয়ে গিয়েছে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রুমের দরজা নক করল আবির। ভেতরে সাথী থাকার কথা৷ বার দুয়েক ধাক্কাতেই দরজা আপনা আপনি খুলে গেল। রুমের ভেতরটা অন্ধকার।জায়গায় জায়গায় পানির মত কিছু তরল পরে আছে।আবির রুমের লাইট জ্বালানোর চেস্টা করল।কিন্তু লাইট জ্বলছে না। আবির বাধ্য হয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে টর্চ জ্বালালো।পুরো রুমের জিনিসপত্র ওলট পালট করা।যেন কোন ধস্তাধস্তি হয়েছে।পুরো মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে আছে রক্তের বন্যা।আতকে উঠল আবির।কাপা কাপা হাতে উতসের দিকে আলো ফেলতেই তার পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল। রুমের এক কোনায় সাথি পড়ে আছে।তার গায়ে অসংখ্যা ক্ষতের চিহ্ন।যেন কেউ প্রচন্ড বাজেভাবে আঘাত করেছে তাকে। মাথার এককোনা টেবিলের সাথে লাগানো। হয়তো আছাড় খেয়ে সেখানে ধাক্কা খেয়েছে।মাথার এক কোনায় ফুটো হয়ে সেখান থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত ঝরছে।আবির এগিয়ে গিয়ে সাথীর কাছে গিয়ে বসল।দুহাতে তার মাথাটা নিয়ে বেশ করে ঝাকাল।কিন্তু সাথীকে একচুলও নাড়াতে পারল না। উঠে দাড়াতে যাবে ঠিক তখনি কিছু একটা প্রচন্ড বেগে আঘাত করল আবিরের মাথায়। নিমিষেই যেন আধার ঘনিয়ে আসল চোখের সামনে।
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে আবির চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করল একটা ঝুপড়ি ঘরে।ঘরটার চারদিকে টিনের বেড়া দেওয়া। মাথার উপর ঝুলছে লো পাওয়ারের একটা বাল্ব।আরো ভালোভাবে চারদিকে তাকাতেই বুঝতে পারল তার হাত পা বাধা।চিতকার করবে তারও উপায় নেই।মুখে কাগজ গোজা।নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করতে লাগল আবীর। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না।উলটো হাত পা ছিলে গিয়ে রক্ত ঝড়া শুরু হয়ে গেল।ক্লান্ত হয়ে দম নিতে লাগল আবির।ঠিক তখনি একটা ধারালো কিছু চলে গেল পিঠ বরাবর।ব্যাথায় কেকিয়ে উঠল সে।কিন্তু তাতে ক্ষত কমল না উলটো বাড়তে লাগল।সেই সাথে বাড়তে লাগল হিলের খটখট শব্দ। হাতের ব্লেড চালাতে চালাতে সামনে ঝুকে দারাল একটা নারীমুর্তি।ভুত দেখার মত চমকে উঠল আবির।নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছেনা তার।ভাষা খুজে পাচ্ছেনা আবির। আবির কে চমকে দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল নিশি। হাসি থামিয়ে বলে উঠল
-কি ভাবছ?ভুত?না আমি ভুত না। আমি রক্তে মাংসে গড়া মানুষ।ভাবছ আমি মারা গেছি তাইনা?কাম অন আবির। টাকা দিলে মানুষ পর্যন্ত গুম হয়ে যায় একটা লাশ জোগার করা কোন ব্যাপার!!দুই বছর তোমার সাথে থেকেছি৷ প্রতারনা না হোক।কিন্তু নিজের পাওয়ার কে কাজে লাগানো বেশ করে শিখেছি।
আবির চোখ বড় বড় করে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে। নিশি এগিয়ে গিয়ে পাশের টেবিলের উপর থেকে একটা চিমটা আর বেশ কিছু সুচ নিয়ে আসল।ডান হাতের ব্লেড টা দিয়ে একনাগারে আবীরের পুরো শরীরে ইচ্ছামত পোচ দিল।ভেতরে ভেতরে গগন বিদারী চিতকার দিয়ে উঠল আবির। কিন্তু বাইরে শুধু শোনা গেল হালকা গোংগানী।নিশি চিমটা দিয়ে চামড়াটা টেনে টেনে তুলে লাগল আর সুচ দিয়ে গেথে দিল পাশে।
আবিরের চোখ ছলছল হয়ে আছে। অনেক কথা বলতে চাচ্ছে সে। কিন্তু সুযোগ হচ্ছে না তার। নিশির চোখ দুটো চকচক করছে খুশিতে। ঠোটে ঝুলছে বাকা হাসি।
-তোমার পারসোনাল লাইফ নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। তুমি হাজারটা মেয়ের সাথে রাত কাটাও তাতেও আমার কোন আপত্তি নেই।কিন্তু আমার সাথে চিট করার কি দরকার ছিল তোমার!আমাকে জানাতে পারতে যে আমাকে তোমার দরকার নেই।
কথাটা বলতে বলতে ডান হাতের পাচটা আংগুল এ কোপ বসালো নিশি।একে একে সবগুলো আংগুল খসে পরে গেল হাত থেকে।মুহুর্ত দেরী না করে আবার কোপ বসালো বাম পায়ের গোড়ালিতে।বার বার ব্যাথায় কেকিয়ে উঠছে আবির।প্রচন্ড আর্তনাদ আর চিতকার এ তার প্রান পাখি খাচা ছাড়ার উপক্রম। টুপটুপ করে রক্ত ঝড়ে পরছে তার শরীর থেকে।চিৎকার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে সে।কিন্তু নিশি এখনো থামে নি।একটা কাটা চামুচ নিয়ে আবিরের চোখে সজোরে ঢুকিয়ে দিল সে।শেষ রক্ষে টুকু হলো না আবিরের।মুহুর্তেই সামনে ঘনিয়ে এল নিকষ কালো আধার।
.
.
-Excuse me Ma’am. Please turn your phone off.
-yeah sure.just a moment please.
এয়ার হোস্ট্রেসের কথা শুনে ওপাশ থেকে ওহী বলে উঠল
-তুই কানাডা পৌছে আমাকে কল দিস।
-হ্যা তা দিব। ওপাশে সিব ঠিক তো?
-হ্যা সব কিছু প্লান মাফিক হয়ে গেছে।সবাই রুমে ফিরে আবিরের রুমে সাথির লাশ দেখে পুলিশ কে ইনফর্ম করে।পুলিশ রুমের ফিংগারপ্রিন্ট আর বাকি সব কিছু থেকে কনফার্ম করেছে আবির অতিরিক্ত ড্রাগ নেওয়ায় ব্যালেন্স হারিয়ে সাথীকে মার্ডার করে।রেল লাইনের উপর তার ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে সবাই এটাই ধরে নিয়েছে হয়তো সে সুইসাইড করেছে otherwise it was an accident. So case closed. আর মেডিক্যালি তুই ডেড সো তোর উপরে কোন দোষ আসে নি।that’s it.
– great.thanks ohi.i owe you a lot.
-উহু।এটা তার প্রাপ্য ছিল।আবির শুধু তোর না আমার বোনেরও জীবন নষ্ট করেছে।ওর জন্যে আমার বোন এখন মানসিকভাবে অসুস্থ।আবির যা পেয়েছে সেটা তার প্রাপ্য। হালকা হেসে ফোন রাখল নিশি।প্লেন উড়ল দিল নতুন ঠিকানায়।