ইতোমধ্যে সারাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী ছড়িয়ে পড়েছে। সারাদেশের মানুষ মৃত্যু ভয়ে তটস্থ। গ্রাম থেকে গ্রাম, শহরের পর শহর সবার মনে একটাই চাওয়া পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া।
আড়িয়াল খা নদীর তীরে গড়ে উঠা একটি গ্রাম। গ্রামটির শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো বেশ শান্তিতেই জীবনযাপন করতো। কিন্তু কে জানে তাদের শান্তি নষ্ট করার আয়োজন হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনী চলে আসবে। আড়িয়াল খা নদী বাংলাদেশের বড় বড় নদীর সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। নদীটি জালালপুর গ্রামের সুন্দর্যের প্রতীক হলেও এই নদীটিই এবার এ গ্রামের ধ্বংসের কারণ হয়ে গেল। পাকিস্তানি বাহিনীদের প্রতিদিনের চলার পথ হয়ে গেলো এ নদীটি। তাই এ গ্রামের সহজ-সরল মানুষ প্রতিনিয়তই ভয়ে ভয়ে থাকে। কখন জানি হানাদার বাহিনী এসে কাকে ধরে নিয়ে যায়। আতঙ্কে দিন কাটে জালালপুর বাসীর।
গতমাসের ২৫ তারিখে প্রথম যখন মিলিটারি এ গ্রামে আসে তখন গ্রামবাসীর মধ্যে এক উদ্দীপনা জেগে উঠেছিলো। গ্রামের সহজ-সরল মানুষেরা তাদেরকে দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছিলো। এদের মধ্যে সাকিল নামে ৯ বছরের এক বালকও এসেছিলো তাদের দেখতে। সে তাদেরকে দেখেই ভাবতে লাগলো, “তারা কারা? কেনই বা আসলো এই গ্রামে? তাদের কি উদ্দেশ্য? গ্রামের মানুষদের ক্ষতি করবে না তো?” তার ছোট্ট মনটায় আরো কত কি চিন্তা ভাবনা। তাদের সাথে ভাব জমানোর চিন্তাও তার মাথায় আসে। কিন্তু অপেক্ষা করতে হবে।
তারা গ্রামের মানুষের সাথে কেমন আচরণ করে সেই দিকটা দেখেই সে তাদের সাথে ভাব জমানোর সিন্ধান্ত নেয়। এদিকে গ্রামে হৈ চৈ পড়ে গেলো তাদের নিয়ে। কেউ বলছে তারা গ্রামের কোনো ক্ষতি করবে না, কেউ বলছে তারা গ্রামের মানুষদের মেরে ফেলবে। কিন্তু পরদিনই দেখা গেলো তাদের আসল রুপ। সময়টা ছিলো গ্রীষ্মকাল। চারিদিকে বাহারী সাজে গাছে গাছে ঝুলে আছে বিভিন্ন ধরনের ফল।
পাকিস্তানি বাহিনীদের একজন সদস্য রাকিব নামে এক ছেলেকে বলল তার বাড়ি থেকে কিছু ফল এনে তাদের দিতে। কিন্তু সে ফল আনতে অস্বীকার করায় তাকে অনেক মারধর করে। ঘটনাটা সাকিল দূর থেকে দেখছিলো আর পাকিস্তানিদের প্রতি তার রাগ বৃদ্ধি পেতে থাকলো। ওই ঘটনার পর গ্রামের মানুষের মনে তাদের প্রতি ঘৃণা ভয় ইত্যাদি কাজ করতে থাকে। তার পর থেকে প্রতিদিনই পাকিস্তানিদের এ গ্রামে আসা-যাওয়া চলতে থাকে।
তারা গ্রামের সবচেয়ে বড় মাঠটায় আস্তানা বসায়। সেখান থেকেই দিনের পর দিন গ্রামে গ্রামে তান্ডব চালায়।
সাকিল এক দুরন্ত স্বভাবের ছেলে। তার সাথে দুষ্টুমিতে পারে এমন ছেলে গ্রামে পাওয়া যাবে না। কিন্তু ছেলেটা দুষ্ট হলেও বেশ শৃঙ্খল। বড়দের কথা মান্য করে।
(বিজয়ের মাসে ইনশাআল্লাহ চলবে…….)