খুব ছোটবেলায় ভূত বিশ্বাস করতাম না, কিন্তু যবে থেকে বড় হয়েছি তখন থেকে কেমন যেন ভূতের ভূত একটি দুর্বলতা চলে আসছে। ছোটবেলায় ভয় না পেলে ও এখন আমি ভয় পাই, অনেক ভয় পাই ভীষণ ভয় পাই। ভয়টা যে কেন পাই সেটাই বুঝিনা। কিসের ভয় পাই খুঁজে পাইনা,। শুধু এটুকু বুঝতে পারি আমি ভয় পাচ্ছি,অনুভূতি শক্তির দ্বারা অনুভব করতে পারি আমার পিছনে হয়তো কেউ দাঁড়িয়ে আছে,।
স্বপ্ন দেখিনা বাস্তবে দেখি বুঝিনা কিন্তু যখন নিজের সাথে ঘটনাটি ঘটে তখন মনে হয় এরকম ঘটনা এর আগে আমার সাথে ঘটেছে। হতে পারে সেটি স্বপ্নে হতে পারে সেটি বাস্তবে। রাত্রি বেলাতে ভয়টা একটু বেশি পায়, দিনের বেলাতে মাঝে মাঝে ভয় পাই। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি সবাই শুধু একটি ঘুমের ওষুধ লিখে দেয়। সাজেশন হিসেবে শুধু বলে দেয় টেনশনটা একটু কম করবেন। আপনার মানসিক হেলুসিলেশন হচ্ছে।
আচ্ছা মানসিক হেলুসিলেশন টা কি? বুঝিনা ভাই ওটা দেখ তারাই বুঝতে পারবে। রোগটা আমার ভালোই হলো না। যত বড় হচ্ছি ততই রোগটি তার ক্ষমতা প্রকাশ করার শক্তি দেখিয়েছে। একা একা ঘুমাতে পারিনা ঘুমোতে গেলেই মনে হয় কেউ একজন আমার পাশে শুয়ে আমার গায়ে হাত বুলাচ্ছে। আমি লাইট জ্বালিয়ে দেখি কেউ নেই শুধু আমি একা, শুধু আমি একা। যখন নিজেকে একা দেখি তখন আরও বেশি ভয় করে। শেষমেষ লাইট টা জালিয়ে ঘুমোতে যাই। একদিন হলো কি আচমকা ঘুমের মাঝে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
কি যেন একটা স্বপ্ন দেখেছি। সেদিন সারারাত ঘুমাতে পারিনি। শেষমেষ বাড়ির পাশে এক বৃদ্ধ লোকের কাছ থেকে শুনি, আমাকে নাকি হাওলাত করেছে। কবিরাজি চিকিৎসা তো নাকি এতে প্রতিকার পাওয়া যায়। গেলাম কবিরাজের কাছে। কবিরাজমশাই কিছুক্ষণ বিচক্ষনতার দৃষ্টিতে আমার পুরো শরীর ভালভাবে দেখে নিয়ে কি যেন মনে মনে বলতে লাগল, কবিরাজের সে ভাষা হয়ত আমরা কেউ বুঝিনা, উনার পাশে বসে থাকা উনার ভক্তরা কিন্তু ঠিকই সে ভাষা বুঝতে পারে।তারা আমাকে বাইরে নিয়ে এসে নানান কিছু উপকরণ দিয়ে দিল বলতে গেলে বিশাল এক লিস্ট।লিস্টে যে সমস্ত জিনিসের নাম দেখলাম তা আমার পক্ষে সারা বাংলাদেশে ঘুরেও খুঁজে আনা সম্ভব না। শেষমেষ বাধ্য হয়েই কবিরাজের এক শিশু আমায় বলে উঠলো ভাই টেনশন নিয়েন না আমি মাঝে মাঝে দেশের বাইরে যাই সেখানে থেকে হয়তো নিয়ে আসতে পারবো তবে খরচটা কিন্তু আপনার দিতে হবে ভাই। খরচের কথাটা শুনে মনে হল এমবিবিএস ডাক্তার রা এসব কবিরাজের কাছে কিছুই না।
তবুও চেষ্টা করতে মন চাইলো যদি আমি এর থেকে পরিত্রান লাভ করতে পারি। বছর দুয়েক চিকিৎসার জন্য। প্রথম কিছুদিন সমস্যা হয়নি কিন্তু আস্তে আস্তে সমস্যাটা আরো বাড়তে শুরু করল।শেষমেষ বুঝতে পারলাম না থেকে বাঁচার জন্য আমি যা কিছু করেছি তার হয়তো সাতটি ভুল ছিল।প্রথম ভোল্টি আমি নিজে আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম কিন্তু বাকি ভুলগুলো কখনোই আর আবিষ্কার করতে পারিনি। এখন আমি কাঁদি, সন্ধ্যা হলেই কাঁদি, পূর্ণিমার রাত্রিতে কাঁদি, আবার রাত্রিতে জেগে থাকি সারারাত। কিছুদিন হলো ভয়টা আরো বেড়ে গেছে,। জানিনা কি করে পাবো এর পরিত্রাণ কারো জানা থাকলে বলে দিয়েন। আমি শুধু ভয় পাই। আমি স্কুলে যেতে ভয় পাই, আমি কলেজে যেতে ভয় পাই, আমি বিশ্ববিদ্যালয় যেতে ভয় পাই। আমি স্বাধীনভাবে কথা বলতে ভয় পাই, আমি আমার ভাইয়ের কথা বলতে ভয় পাই, আমি দেশকে নিয়ে কথা বলতে ভয় পাই, আমি আমার মাকে নিয়ে কথা বলতে ভয় পাই। আমি শুধু ভয় পাই আমার রোগটা শুধু ভয়ের।
এখন আর চিকিৎসা চিকিৎসা কিছু করিনা। সবকিছু বাদ দিয়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে মনে হয় বেশীদিন বোধহয় আর বাঁচবো না। জীবনের শেষ প্রান্তে যে আমার এইভাবে শেষ হবে কিনা জানিনা। মাঝে মাঝে কিছু গল্প লিখি লিখতে ভয় করে। যদি আমি আবার রাত্রি বেলা ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উ!ঠি!। এখন সত্যি কথাটা বলা ছেড়ে দিয়েছি সত্যি কথা বলতে ভয় লাগে মিথ্যা কথা বলতেও ভয় লাগে তাহলে আমি করবোটা কি। আমার মনের মধ্যে শুধু ভয় আর ভয়। আস্তে আস্তে আমি ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলেছি। এখন আগের মত আর ভয়টা করে না মনে হয় ওষুধ টা আস্তে আস্তে ভালোর দিকে যাচ্ছে।
এখন রাত্রিবেলা একা একাই বাইরে যাই। ভয়টা কমে গেছে। তবে জানি না কতদিন ভয়টা আমার চলে যাবে, আবার কখনো কখনো ফিরে আসতে পারে। আমার গুরুজন বলেছিল এত ভয় কিসের। ভয় কে জয় করো তা না হলে জীবনে এগোতে পারবে না, থমকে দাঁড়াবে তোমার জীবন হারিয়ে যাবে তোমার প্রতিভা, তুমি মানুষ থেকে অমানুষে পরিণত হবে, তুমি বিশ্বাসই থেকে অবিশ্বাসীদের তালিকায় চলে যাবে, তুমি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যেতে পারবে না আর। তুমি হারিয়ে যাবে তুমি ফুরিয়ে যাবে তুমি নিঃশেষ হয়ে যাবে। ভয় পেয়ো না। কিসের ভয়, কবি বলেছেন নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই ওরে ভয় নাই ওরে ভয় নাই। তবুও মাঝে মাঝে হে ভয় দেখানো ভূতের আমাকে ভয় দেখায়।
একটু একটু ভয় এখনো রয়ে গেছে। একজন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম ভালোমানের একজন ডাক্তার। বলেছেন আসলে আমি ভয় পাই না ভয়টাই আমার চরিত্রে বসে গেছে। মেডিটেশন করতে হবে। তো এখন থেকে মেডিটেশন করছি। এটা আসলে মেডিটেশন টা আমি বুঝিনা কীভাবে মেডিটেশন করে সেটাও জানি না। এমনিতেই আমার অসুখটা ভালো হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে রাত্রিবেলা বাইরে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় কিছু একটা গাছের উপরের দিকে জোরে বসে আছে দেখলাম, আমি জিজ্ঞেস করলাম ওই তুই কে? হাত-পা তখনও কাঁপছে আমার। আমি আবার প্রশ্ন করলাম।
কিছুক্ষণ পর অদ্ভুত প্রাণীটি আমাকে উত্তর দিল। আমি তোর অসুস্থ বিবেক, আমি তোর দুর্বলতা, আমি মানুষের মস্তিষ্কে চড়ে বসে মানুষকে তার মনুষত্বের দিকে নিয়ে যেতে বাধা দেই। আমি মানুষকে বোকা বানিয়ে দেই আমি মানুষকে বানিয়ে দেই কাঁচের পুতুল। আমি হলাম সেই ভয়। আমি দৌড়ে বাড়িতে চলে এলাম।আর কখনো রাত্রিবেলা একা একা বাড়ির বাইরে যাইনা। কারণ আমি ভয় পাই। কারণ আমি ভীতু। আমি ভয় কে জয় করতে পারিনি। যতক্ষণ ভয় কে জয় করতে না পারা যায় ততক্ষণ ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্ব করি বেঁচে থাকি এখন। জানিনা কোন একদিন হয়তো এই ভাইটি আমার জীবন থেকে চলে যাবে। আমি আবার সুস্থ মানুষ হয়ে জীবন উপভোগ করব। দোয়া করবেন আমার জন্য। #মমিন সাগর#