আমার বাবা ছিলো এই এলাকার জমিদার । খুব নাম ডাক ছিলো বাবার । আমার মা ছিলো না সে আমার জন্মের সময় নাকি মারা গেছে । কিন্তু বাবা কখনো আমাকে মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি । যা চাইতাম তাই পেয়ে যেতাম । আমাদের টাকা পয়সা সম্পত্তির কোনো অভাব ছিলো না । আর আমি ছিলাম তার এক মাত্র মেয়ে । আর আমার কোনো ভাই বোন ছিলো না । তাই এই সব সম্পত্তি বলতে গেলে আমারই । আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে তার বন্ধুর ছেলের সাথে ।
তার নাম জনি দেখতে গায়ের রং শ্যামলা বর্ণের বেশ লম্বা চওড়া । কিছু দিন পর বিয়েটা হয়েও যায় ঠিকাঠাক মতো । সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিলো । হঠাৎ করে একদিন আমার বাবা হার্ট অ্যাটাক এ মারা যায় । এর পর আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরি । সুস্থ হতে প্রায় সপ্তাহ খানেক লেগে যায় । একদিন রাতে শুয়ে ছিলাম চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসছিলো । হঠাৎ দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় । আর উঠে আমি দরজা খুলে দেখি আমার স্বামী মদ খেয়ে মাতাল হয়ে আছে ।
আর ভেতরে এসেই আমাকে মারতে থাকে বলতে থাকে তোর বাপকে মেরেছি এখন এই সব সম্পত্তি আমার । আর সারা রাত আমার ওপর শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে । এক সময় আমি জ্ঞান হারাই । সকালে আমার আমার জ্ঞান ফেরে । আমার শরীরের ক্ষুব ব্যাথা করছিলো । ঠিক মতো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না । অনেক কষ্টে দরজার সামনে গেলাম গেয়ে দরজা খুলরা চেষ্টা করলাম দেখি দরজা খুলছে না । দরজা বাহির থেকে লাগানো । শয়তান টা বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দিছে । আমি চিৎকার করে অনেক ডাকা ডাকির পর ও কেউ সারা দিলো না । বাড়িতে তো অনেক কাজের লোক ছিলো কেউ কি আমার ডাক শুনলো না । শুনবে কি করে শয়তান টা তো সবাইকে টাকা দিয়ে কাজ থেকে বেড় করে দিছে । আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরি । একটু পর ঘুম চলে আসে । সন্ধ্যায় আমার ঘুম ভাঙ্গে কারো ডাকে । ঘুম থেকে উঠে দেখি শয়তান টা আমাকে ডাকছে । আমি তারাতারি উঠে বসলাম আর দরজার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলাম । যেই না দরজা আর কাছে গেলাম ওমনি সে আমার পথ আটকালো আর বললো-
জনি : তুই বের হয়ে গিয়ে সব বলে দে সবাইকে আর আমাকে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাক তাই না ।
কি ভেবেছিস তোকে এতো তারা তারি ছেড়ে দেবো । এই বলে জনি আমাকে সারা রাত শারীরিক নির্যাতন করে । অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে এক সময় আমি মারা যাই । রনি যখন বুঝতে পারে আমি মারা গেছি । তখন সে আমাকে এই ঘরের দেয়ালের মধ্যে আমাকে লুকিয়ে রাখে । তারপর ও সব টাকা পয়সা সয় সম্পতি নিয়ে শহরে চলে যায় । এর পর থেকেই আমি এই ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে আছি । আর আমার খুব কষ্ট হয় ( করুন স্বরে বললো মায়া ) এখানে থাকতে । আমাকে একটু সাহায্য করুন না আপনারা ( কান্না মাখা স্বরে বললো মায়া )
এসব শোনার পর রনি আর জসিম মিয়ার চোখে পানি চলে এসেছে । যা তাদের দেখেই বুঝতে পারলো মায়া । রনি আর জসিম মিয়া এতোক্ষণ মায়ার কথা শুনছিলো । ফজরের আযানের শব্দে তাদের দুজনের ঘোর কাটে । ঘোর কাটতেই দেখলো সেই মেয়েটি তাদের সামনে নেই । যেনো আজানের ধ্বনির সাথে মিলিয়ে গেছে । অতঃপর-
রনি : মেয়েটি কোথায় গেলো ? ( জসিম মিয়া কে উদ্দেশ্য করে )
জসিম মিয়া : জানিনা স্যার , এখানেই তো ছিলো !
রনি : বাড়ি মালিকের সম্পর্কে আর কি কি জানেন ?
জসিম মিয়া : আর কিছু জানি না স্যার আমি । যা কিছু জানতাম সব তো আপনাকে বলে দিছি ।
রনির সবকিছু কেনো যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে । মাথাটা কেমন চিন চিন ব্যাথা করছে । আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে হয় তো জ্ঞান হারাবে রনি । তাই সে জসিম মিয়া কে নিয়ে রুম থেকে বেড় হয়ে যায় । রুমটিতে কেনো জানি রনি তালা না লাগিয়ে চলে আসলো ।
অতঃপর রনি তার রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো । কিন্তু রনির কিছুতেই আর ঘুম আসছে না । চোখ বন্ধ করলেই শুধু সেই মায়ার চেহারা ভেসে উঠে । সারাদিন আজ রনির ঘরে বসেই কাটলো । সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে আস্তে আস্তে গভীর রাত ঘনিয়ে এলো । কিন্তু রনির চোখে আজ একটুও ঘুম নেই । শুধু মায়ার কথাগুলো নিয়ে ভাবছে । এসব কি হচ্ছে তার সাথে কিছু বুঝতে পারছে না রনি । আবার ও তার মাথায় চিন চিন ব্যাথা করছে । তাই রনি এবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলো । একটু পর রনি গভীর ঘুমে তলিয়ে যার । হঠাৎ রনির কানে ভেসে আসে কে যেনো তাকে রনি রনি বলে ডাকছে । তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা একটু পর আবার ও রনির নাম ধরে কে যেনো ডাকছে । রনি এবার বিছানা থেকে উঠে বসলো । এর পর দরাজা খুলে বেড় হলো । বের হতেই দেখতে পেলো পাশের রুমে কে যেনো ঢুকলো । তাই রনি সেই রুমের ভেতরে গেলো । ভীতরে গিয়ে অন্ধকারে রনি কিছু দেখতে পাচ্ছে না । আর কিছু একটার শব্দ পাচ্ছে যেনো দেয়ালে কেউ হাতুড়ি পেটা করছে । রনি এবার তার ফোনের ফ্যাশ লাইটটি অন করলো । ফোনের আলোতে ঘরে মোটামুটি সবই দেখা যাচ্ছে । রনি একটু ভেতরে গেলো গিয়ে দেখতে পেলো । ওই মেয়েটি কালকে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো । ঠিক সেখানে একটা লোক হাতুড়ি দিয়ে দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করছে । কিন্তু লোকটি দেয়ালের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলো তাই তার মুখটি দেখা যাচ্ছিল না । অতঃপর রনি একটু রাগি স্বরে বলে উঠলো কে ।
এই কে এখানে আর কি করছেন ? লোকটি কোনো জবাব দিচ্ছে না । এবার রনি সামনে গিয়ে লোকটি কাঁধে হাত দিলো । হাত দিতেই রনি বুঝতে পারলে লোকটির শরীর খুব ঠান্ডা । রনি জোর করে লোকটির মুখ তার দিকে ঘুরিয়ে নিলো । লোকটি মুখ ঘরাতেই রনি দেখতে পেলো লোকটির চোখ দুটি বের হয়ে রয়েছে , গলা দিয়ে রক্ত পরছে । তার গলায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ছুরি বসানোর দাগ । তার মুখে চামরা পুরে ঝলসে গেছে কপালের হার দেখা যাচ্ছে । এই সব দেখে রনি আর ঠিক থাকতে পারলো না । একটা চিৎকার দিয়ে রনি সেখানে জ্ঞান হারায় ।