তুঁতে বা কপার সালফেট অনেক মুদি দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু মুদি দোকানে কপার সালফেট বললে ওরা চিনবে না বুঝবেও না। তাই ওদেরকে অবশ্যই তুঁতে বলতে হবে। তুঁতে বললে ওরা চিনবে। তুঁতে দেখতে অনেকটা ফিটকিরি বা মিছরির মতো। মিছরির মতো হলেও তুঁতে দেখতে গাঢ় নীল বর্ণের। যেন এক টুকরো গাঢ় নীল বর্ণের মিছরি। গাঢ় নীল স্ফটিকের মতো তুঁতে বা কপার সালফেট পোকামাকড় দমনসহ অনেক কাজে লাগে।
যারা বই বাঁধাই করে তারা আটা বা ময়দার সাথে তুঁতে বা কপার সালফেট মেশায়। এতে বই পোকায় কাটতে পারে না। তুঁতে বা কপার সালফেটে থাকে তিনটি মৌলিক পদার্থ। কপার, সালফার এবং অক্সিজেন। তুঁতে বা কপার সালফেটের রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে CuSO4. এখানে Cu হচ্ছে কপার বা তামা, SO4 এর মধ্যে আছে S তথা সালফার বা গন্ধক এবং O তথা অক্সিজেন।
এই তিনটি মৌলিক পদার্থ মিলে তৈরি হয় তুঁতে বা কপার সালফেট CuSO4. তো এই তুঁতে বা কপার সালফেট CuSO4 থেকে কপার বা তামা কিভাবে সহজে আলাদা করা যায়? হ্যাঁ, তুঁতে বা কপার সালফেট থেকে তামা আলাদা করতে হলে আমাদের একটা মজার এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন হবে কিছু লোহার তার বা পেরেক। লোহার তার আমরা বিভিন্ন জিনিস বাঁধার জন্য ব্যবহার করি। আর পেরেক তো আমাদের অনেক কাজে আমরা ব্যবহার করি। লোহার তার বা পেরেক এর যেকোনো একটি হলেই আমরা এই দারুণ মজার ও চমৎকার এক্সপেরিমেন্টটি করতে পারবো।
তুঁতে বা কপার সালফেট থেকে তামা বের করার
আশ্চর্য সেই এক্সপেরিমেন্ট!!
প্রথমে একটি কাঁচের বাটি বা এরকম কোনো একটি পাত্রে একশো গ্রাম থেকে দেড়শো গ্রাম ওজনের একটি তুঁতে বা কপার সালফেটের টুকরো নিতে হবে। তারপর সেই তুঁতে বা কপার সালফেটের উপর চায়ের কাপের দুইকাপ পানি দিয়ে ভালো করে স্টিলের চামচ দিয়ে তুঁতে বা কপার সালফেট গুলিয়ে নিতে হবে।
ঘন নীল বর্ণের যে দ্রবণটি তৈরি হবে সেই দ্রবণে লোহার তার কিংবা লোহার তার না পেলে পরিস্কার নতুন দুটো পেরেক (দুই ইঞ্চি সাইজের হলে ভালো হয়) পুরোপুরি ডুবিয়ে দিতে হবে। এরপর সেই দ্রবণ আর নাড়াচাড়া করা যাবে না। এক জায়গায় স্থিরভাবে রেখে দিতে হবে। ঘন্টাখানেক পরে দেখা যাবে তুঁতে বা কপার সালফেটের দ্রবণ থেকে বুদবুদ উঠছে এবং লোহার তার কিংবা পেরেকের গায়ে তামা বা কপার জমছে।
এভাবে জমতে জমতে দেখা যাবে পুরো পেরেকটিই একসময় পুরোপুরি তামা বা কপারে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এই এক্সপেরিমেন্টটিতে একসময় লোহার তার কিংবা পেরেক পুরোপুরি গলে তামায় পরিণত হয়ে যাবে। আর তখন তুঁতে বা কপার সালফেটের নীল বর্ণের দ্রবণটি আশ্চর্যজনকভাবে বর্ণ পরিবর্তন করে সবুজ হয়ে যাবে।
এই সবুজ দ্রবণটি হচ্ছে ফেরাস সালফেটের FeSO4 দ্রবণ, যা এ বিক্রিয়ায় (CuSO4+Fe=FeSO4+Cu) উৎপন্ন হয়েছে। এখানে CuSO4 হচ্ছে তুঁতে বা কপার সালফেটের নীল দ্রবণ আর Fe হচ্ছে লোহার তার বা পেরেক আর FeSO4 হচ্ছে ফেরাস সালফেটের সবুজ দ্রবণ এবং Cu হচ্ছে এই এক্সপেরিমেন্টটির মূল বিষয় অর্থাৎ তামা। তো এভাবেই তুঁতে বা কপার সালফেটের নীল বর্ণের দ্রবণটি থেকে আশ্চর্যভাবে এই এক্সপেরিমেন্টটিতে তামা বের করা সম্ভব হবে।
সাইফুল হক : লেখক, সম্পাদক, গবেষক।