মাদারীপুরে অবৈধ শতাধিক ইটভাটার মধ্যে অধিকাংশ ইটভাটা কৃষি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে। সেখানে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। ভাটার আগ্রাসনের ফলে দিনদিন কমে যাচ্ছে চার ফসলি জমি। এদিকে জমির অভাবে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তবে এবিষয়ে বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে কার্যকরি ভূমিকা পালন করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার মোট এক লাখ ১২ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হাজার হেক্টর জমি কৃষিজমি হিসেবে চিহ্নিত করাগেছে। এর মধ্যে রয়েছে অতি উর্বর এক ফসলি জমি ১০ হাজার ৬৭৯ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৪৯ হাজার ৭২৬ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ২০ হেক্টর ১২৪ হেক্টর ও চার ফসলি ২৫০ হেক্টর।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, কৃষি ও কৃষিজমি নষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ইটভাটা। এ ছাড়া ভাটার দূষণ ও বিরূপ প্রভাবে আশপাশের জমির ফসলহানি হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি ফসলি জমি নষ্ট হয় এমন স্থানে যেন ইটভাটার লাইসেন্স দেয়া নাহয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলায় শতাধিক ইটভাটার মধ্যে অধিকাংশ ভাটাই অবৈধ। আর এসব ইটভাটার বেশির ভাগই স্থাপনা গড়ে উঠেছে ফসলি জমি বা এর পাশ ঘেঁষে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩-এর ৮(১) (ঘ) তে বলা আছে কৃষিজমিতে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। শুধু তা-ই নয়, ওই আইনের ৩(ক)তে বলা হয়েছে নির্ধারিত সীমারেখার (ফসলি জমি) এক কিলোমিটারের মধ্যেও কোনো ইটভাটার স্থাপনা তৈরী করা যাবেনা। তা ছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ ভাটা মালিকরা লঙ্ঘন করছেন বলে এমন অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ইট প্রস্তুত করার জন্য ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
মাদারীপুর ইটভাটা শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিলন চৌধুরী বলেন, আমাদের অধিকাংশ ভাটাতেই এখন আর কাঠ পোড়ানো হয়না। তবে হেমায়েত কাজীর ভাটা, রহিম খানের ভাটাসহ ৭/৮টি ভাটায় কাঠ পোড়ানো হয়। বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি এসব ভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেয়। কিন্তু নির্দেশ বাস্তবায়িত দেরিতে হলেও এখন তা দেখা যাচ্ছে। এখনো এসব ভাটায় দেদারছে জ্বলছে কাঠ। ইটভাটা মালিক শিল্প সমিতির পক্ষ থেকেও কাঠ পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
এ দিকে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, কোন কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটা করা যাবে না। আইনগতভাবে এটা নিষিদ্ধ। অবৈধ ইটভাটা থাকলে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
মাসুদ রেজা ফিরোজী, সাংবাদিক