স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে বাংলাদেশের প্রথম সারির সাবান ম্যানুফাকচারার হিসেবে কসকো সাবান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো। এইটা বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সপারেন্ট গ্লিসারিন সাবান হওয়ার সুবাদে সর্বস্তরের মানুষের কাছে তুমুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।
কিন্তু নব্বই দশক পর্যন্ত কসকো সাবান একচেটিয়া ব্যবসা করলেও এরপরে ধীরে ধীরে এই সাবান টির জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। বর্তমান বাজারে এই সাবান টি একেবারে দেখা যায় না বললেই চলে। এক সময় এর তুমুল জনপ্রিয় এই সাবান ব্র্যান্ড টি কেন বর্তমানের বাজারে টিকটে পারছে তারই কিছু কারণ আমি তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
মার্কেটে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর আগমন – ১৯৪৮ সালে ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে কমান্ডার সোপ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রথম বাংলাদেশে কসকো সাবান বাজারে পদার্পণ হই। সেই থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তেমন প্রতিযোগিতায় পড়তে না হলেও এরপরে বিভিন্ন দেশি,বিদেশি সাবান এর ব্র্যান্ড দেশীয় বাজারে পদার্পণ করে। সেসব ব্র্যান্ড বাজারে যেভাবে নতুন নতুন কাস্টমার চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রোডাক্ট এর ভিন্নতা রেখে একেরপর এক বিভিন্ন রকমের সাবান মার্কেটে ছাড়ছিলো কসকো সাবান সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়ছিলো। তারা তাদের প্রোডাক্ট লাইনে কখনোই সেভাবে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করে নাই।
প্রচারণার অভাব-নব্বই দশকে যখন একেরপরে এক সাবান কোম্পানি দেশের মার্কেটে আসছিলো তখন কাস্টমার ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন ছিলো যথাযথ প্রচারণা। কিন্তু কসকো সাবান এর প্রচারণা তে বরাবরই অনাগ্রহ ছিলো। নব্বই দশক এর আগ পর্যন্ত তেমন প্রতিযোগিতা ছিলো না বলে তেমন প্রচারণা না করা স্বত্তেও ব্যবসায় তে তেমন সমস্যা হই নাই।
কিন্তু তুমুল প্রতিযোগিতার মুখে যথাযথ প্রচারণার অভাবে ধীরে ধীরে মার্কেট শেয়ার কমতে থাকে কসকো সাবান এর।তারা এতো বছরের পদচারণাই মাত্র দুই,তিনটা টিভিসি বানিয়েছে। অথচ অন্য ব্রান্ড গুলো প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় তারকা দের কাস্ট করে বিজ্ঞাপন বানিয়ে ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়িয়ে চলেছে।
প্যাকেজিং এ বৈচিত্র্যের অভাব- কসকো তাদের যাত্রার শুরু থেকেই প্রায় একই রকম প্যাকেট ডিজাইন ব্যবহার করে এসেছে। সেখানে অন্যান্য সাবান ব্র্যান্ড গুলো প্রতিনিয়ত যুগের চাহিদা অনুযায়ী তাদের প্যাকেজিং এ দৃষ্টিনন্দন পরিবর্তন এনেছে। এই টাও তাদের কাস্টমার এর আকর্ষণ ধরে রাখার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার একটি বড় কারণ।
কাস্টমার দের সঠিক তথ্য প্রদানে ব্যর্থতা – শুস্ক এবং সেনসিটিভ ত্বকের জন্য গ্লিসারিন সাবান এর প্রচলন অনেক আগে থেকেই ছিলো। কিন্তু কসকো গ্লিসারিন সাবান হওয়া স্বত্তেও বিভিন্ন হোটেলে হাত ধোয়ার কাজে এই সাবান এর প্রচলন অনেক বেডে যায়।মূলত গ্লিসারিন সাবান হিসেবে অনেক বেশি সময় ব্যাবহার যোগ্য এই কারনেই এমন টা হয়েছিলো।
অপরদিকে অন্য বিউটি সোপ গুলো তে ফেনা বেশি এবং ব্যবহার এর পরে সুগন্ধি অনুভূতি হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ এর মধ্যে ধীরে ধীরে এই ধারণা তৈরী হই যে কসকো সাবান শরীরে ব্যবহার এর জন্য অনুপযোগী। কসকো এই ভুল ধারণা দূর করার জন্য তাদের পক্ষ থেকে কখনোই কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই।
উপরোক্ত কারণ গুলো পর্যালোচনা করে আমরা বুঝতে পারি যে সময়ের সাথে সাথে নিজেদের ব্র্যান্ড ডেভলেব না করা এবং প্রচার,প্রচারণা তে ঘাটতি এইসব কারনেই কসকো সাবান এর জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছে এবং বর্তমানে এই সাবানের অস্তিত্বই হারিয়ে যেতে চলেছে বাজার থেকে।