ভারতের মেঘালয় থেকে বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার লেংগুড়া ইউনিয়নে এসে নেমেছে অপূর্ব সুন্দর এক নদী নাম তার গনেশ্বরী । ভারত থেকে বাংলাদেশের যে স্থানটিতে এসে প্রবাহিত হয়েছে গনেশ্বরী অর্থাৎ একেবারে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের “নো ম্যান্স ল্যান্ড” সেখানে অবস্তথিত ১৯৭১ সালে শহীদ হওয়া ৭ শহীদের মাজার । এ যেন এক বিশাল মেহগনী গাছে আবৃত নিরব স্বর্গ রাজ্য । নেই কোন গাড়ির শব্দ নেই মানুষের কোলাহল । সব সময় পূবালী বাতাস বয়ে চলে সেই যায়গায় আর পাখীর কলকাকলী তো আছেই । সেখানে বসে খানিকখন দেখে নিতে পারেন মেঘালয়ের পথ ঘাট পাহাড় ও বিশাল বিশাল মেহগনী গাচ্ছের সারি, সাথে গনেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ পানির কলকলানী শব্দে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারেন প্রকৃতির মাঝে । ইচ্ছে হলে সেই স্বচ্ছ পানিতে নেমে ভিজিয়ে নিতে পারেন নিজের কোমল পা দুখানী । গনেশ্বরী নদী যখন ভারত থেকে নেমে এসেছে তখন সে একা আসেনী সাথে করে নিয়ে এসেছে সিলিকা বালি ও নূরি পাথর যা কিনা সবসময় বিদ্যমান সেই নদীর বুকে । নদীর পার ঘেষে আছে সরূ পাকা রাস্তা হাটতে পারেন সেই পথ ধরে । খানিক হাটলে ফুলবাড়ি বাজার তার ঠিক পূর্ব পাশে আছে কিছু টিলা ,ফুলবাড়ি পার্ক বা মমিন টিলা, শশ্মান খলা টিলা, খার খাওয়া ঘাট , সেখানে বিশাল সিলিকা বালুর চড়, যদি সময়টা হয় বিকেল বেলা তাহলে আপনি মনের অজান্তেই বসে পরবেন সেই বলুর চড়ে । যদিওবা লেংগুড়া ইউনিয়নে রাতে থাকার মত কোন হোটেল নেই । তবুও যদি সম্ভব হয় সময়টা যদি চাঁদনী রাত হয় তাহলে কষ্টকরে খানিক সময় কাটিয়ে আসতে পারেন গনেশ্বরী নদীর বালুর চড়ে । শুনশান নিরবতা আপনাকে কিছু দিতে পারুন আর না পারুন খনিকের জন্য কবি, গায়ক বা গায়িকা বানিয়ে দিবে এটা হলপ করে বলতে পারি । সেই নদীতে কিছু কিছু স্থানে অনেক গভীর জলরাশি আবার কোথাও হাটু জল । দুপুর বেলা যদি সেখানে গিয়ে থাকেন, তাহলে গোসোল করে হালকা করে নিতে পারেন ক্লান্ত দেহখানী । সিলাকা বালীর নদীর স্বচ্ছ পানি সকল ক্লান্তি ধুয়ে দিবে আপনার শরীল থেকে । বলা চলে এখনই সময় গনেশ্বরী নদীর ভরা যৌবনের , বছরের প্রায় অধিকাংশ সময়ই গনেশ্বরী নদী তার বিভিন্ন রুপ ধারন করে, কখনো উজান থেকে নেমে আশা ঘুলা জন দিয়ে ভরে রাখে নিজেকে, কখনো স্বচ্ছ পানি দিয়ে মাঝা মাঝি ভরে রেখে নিজের গৌরবকে ধরে রাখে । একটা যায়গা আছে যেখানে সব সময় বিশ থেকে ত্রিশ ফুট পানি থাকে , সেই যায়গাটাকে (লস্করের ডুবা) বা বেলতলী বলে আবার কখনো হাটু পানিও থাকে না । তখন বালি দিয়ে বাধ দিয়ে স্থানীয় কৃষকেরা তাদের কৃষিকাজ সম্পন্ন করে । কিন্তু অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাস গনেশ্বরী নদী নিজেকে যেন তার যৌবনের সৌন্দর্যে আরো সৌন্দর্য মন্ডিত করতে থাকে । সাথে স্থানীয় খেটে খাওয়া মানুষের মাঝ বাড়িয়ে দেয় তার সাহায্যের হাত । কেও পাথর তুলে কেও তুলে বালি ।
এখানে সেখানে দেখতে পাবেন পুরুষ-মহিলা ভেদাভেদ ভুলে পাথর তুলছে গ্রমের মেহনতি মানুষ । ইচ্ছে করলে ঘুড়ে বেড়াতে পারেন নদীর পাড়ের আদিবাসী হাজং সম্প্রদায়ের গ্রামে । সেখানে আদিবাসী হাজং পাড়ার নামগুলোও ভিন্ন ধরনের গ্রাম একটা হলেও পাড়া হিসাব করে দেখা যায় নয়া পাড়া, চাউকোনা, খার খাওয়া, দাহাপাড়া নামের স্থান বিদ্যমান আদিবাসী হাজং সম্প্রদায়ের পাড়াটিতে । দেখে নিতে পারেন আদিবাসী হাজং সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি জীবন ধাঁরা ।।
কিভাবে যাবেনঃ দেশের যে কোন স্থান থেকে প্রথমে ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর, সেখান থেকে সিএনজি অথবা বাস যোগে বিরিশিরি, বিরিশিরি থেকে মোটর সাইক্যাল অথবা অটো করে সরাসরি লেংগুড়া ।
অথবা ময়মনসিংহ থেকে বাস যোগে নেত্রকোনা , সেখান থেকে বাস অথবা মোটর সাইক্যাল যোগে কলমাকান্দা , কলমাকান্দা থেকে সরাসরি লেংগুড়া ।
বলে রাখা ভাল লেংগুড়াতে থাকার কোন ব্যবস্থানেই । তাই যদি থাকতে চান তাহলে নেত্রকোনা হয়ে গেলে কলমাকান্দা আর দূর্গাপুর হয়ে গেলে দুর্গাপুর অথবা বিরিশিরি থাকতে হবে । ধন্যবাদ ।