ফুলতলি আর কুলতলি সামনা সামনি দুটো শহর। এই দুই শহরকে ভাগ করে দিয়েছে মাঝখানের নদীতি। নদীতির নাম তলি। এই তলি নদীর মাঝিটিকে নিয়েই আজকে আমার গল্পটা। শুরু করি তাহলে–
আগেই বলেছিলাম কুলতলি আর ফুলতলি এক শহর ছিল আগে, নদীতির আগমনে তাদের বিভাজন হয়।এর ফলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব রয়ে যায় কুলতলিতে। আর অফিস,আদালত বৃদ্ধাশ্রম সব ফুলতলিতে। এই কারণে লোকজনের সবসময় এক পারাপার থেকে অন্য পারাপারে আসাযাবা লেগেই তাকে। খেয়া ঘাটের মাঝিটির নাম মুক্ত। আমি ডাকতাম মুক্ত দাদু। বয়স ৫০ এর কাছাকাছি কিন্তু তবুও তার গায়ে অনেক জোর ছিল বটে। তোমরা ভাবছ হয়তো এটা আবার কী গল্প সব খেয়া ঘাটের মাঝি ই তো প্রায় বৃদ্ধ হোন!আরে পুরোটা শুনে নাও তারপর বলিও যা বলার।
দাদু পেশায় ছিলেন একজন ডাক্তার। এইটা আমিও জানতাম না। এইটা জানতে পারি যখন আমাদের পরীক্ষা শেষে বাসায় ফেরার সময় এম সি কিউ মিলাছিলাম তখন। দাদু যে আমাদের এম সি কিউ উত্তর বলেদিছে আমি বিশ্বাস ই করতে পারছিলাম না। তারপর পর আমার আর দাদুর বন্ধুতো হল। পড়া শেষ করে আমি রোজ বিকেলে নদীর পাড়ে বসে দাদুর গল্প শুনতাম। জানতে পারলাম যে দাদুর আর কেউ নেয়। তিনি বিয়ে করেনি। তার মার মৃত্যুর পর তিনি খেয়া ঘাটের মাঝি হন।এই কথা শুনে আমি অনেকটা হকচকিয়ে গেলাম। তোমারই বলো যদি কোন ডাক্তার তামা মায়ের মৃত্যুর পর মাঝি হন এইকথা শুনলে কেমন লাগবে! সেদিন দাদুকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি উনি কেন হলেন খেয়া ঘাটের মাঝি! মার ডাকা ডাকির কারণে বাসায় চলে গেলাম। আমারও এইচ এস সি পরীক্ষা তাই কয়েকদিন ঘাটে যাওয়া আর হলোনা । অব্যশই যাওয়া আসার সময় দাদুর সাথে দেখা হত।কিন্তু এত লেকের ভিড়ে কী আর এতসব প্রশ্ন করা যায়।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমি আমার কাকুর বাড়ি চলে যায়। একমাস পর যখন ফিরছিলাম তখন দেখি যে দাদু নেই। এখন নতুন একটা মাঝি।দাদুর কথা জিজ্ঞাসা করাতে উনি বললেন দাদু অসুস্থ। আমি বাসায় পৌঁছে ব্যাগ রেখে রওনা হলাম হাসপাতালে। গিয়ে দেখি দাদুর অবস্থা অনেক সিরিয়াস। উনি দূর্বল হয়ে গেছেন। সারা শরীর ঠান্ডা।আমার মনে হচ্ছিল দাদু এখনি হয়তো মারা যাবেন। দাদুর হাত ধরে আমি বললাম দাদু তুমি কেন মাঝি হলে? তোমার তো সব ছিল। উনি বললেন ‘মা যদি হও রাজি বড় হলে আমি হব খেয়াঘাটের মাঝি’। এইতাই দাদুর শেষ কথা। দুই শহরেরে লোকজন একত্রিত হয়ে দাদুর দাহ্য কাজ শেষ করা হয়।
আসলে দাদু হতে চেয়েছিলেন মাঝি। তিনি তার মার জন্য ডাক্তার হন। তা মার স্বপ্ন ছিল তার ছেলে ডাক্তার হবে। তাই দাদু তার মার মৃত্যুর পর খেয়াঘাটের মাঝি হন।