ওই ওই মার হারামজাদাকে।ওই শালারপুতরে ধর।
বাসার দিকে যাচ্ছিলাম এমন সময় মাঝ রাস্তায় কিছু লোক একটা ছেলেকে দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে মারছে।পুরো রাস্তায় জ্যাম লেগে গিয়েছে গন্ডগোলের কারনে।
আমি এসবের থেকে সবসমই দূরে থাকি। না না মারপিট করতে ভয় পাই এমনটা নয়! কেন যেন এসবে অনিহা চলে এসেছে। আহ! বিগত দিনগুলো মনে করলে খুব আরামবোধ হয় আবার বিরহে ভেসে যায় এ মন।উফ ছেলেগুলো এখনো মারছে লোকটিকে। না লোকটিকে ছুটিয়ে আনা প্রয়োজন।
ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তাদের চিনতে পারলাম,ভার্সিটি থাকাবস্থায় আমার সাথেই রাজনীতি করেছিলো,জুনিয়র আমার। তাদের কাছে যেতেই মইনুর আমাকে চিনতে পেরে সালাম দিয়ে পাশে দাঁড়ালো। বাকিরাও খুব কষ্টে চিনতে পেরেছে,যাক তবু তো চিনেছে।আমার বেশভূষা দেখে মাঝে মধ্যে আমি নিজেই দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। সে যাই হোক,
তাদেরকে প্রশ্ন করলাম,
– মইনুর এখানে কি সমস্যা? রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে হট্টগোল করছো কেন আর এই লোকটিকে মারছো কেন?
– ভাইয়া এ লোকটা বিপক্ষ পার্টির,সায়েদ ভাইকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেছে তার আইডি থেকে।
– ব্যাস হয়েছে।আর মারবে না,চলে যাও।সাইদের সাথে আমি কথা বলবো।
– জ্বী আচ্ছা ভাইয়া। ভাইয়া আপনি ভালো আছেন তো?
– হ্যা ভালোই আছি!
– আচ্ছা ভাইয়া আমরা আসি।ভালো থাকবেন।
তারা চলে যেতেই লোকটিকে নিয়ে রাস্তার পাশের একটি টঙে গিয়ে বসলাম।দু কাপ চা অর্ডার করলাম এমন সময়ই সায়েদের কল।
কল রিসিভ করতেই,
– কিরে নাহিয়ান,অনেক বড় নেতা হয়ে গেছোস তাই না!
– সায়েদ কি বলতে চাচ্ছিস সোজাভাবেই বল!
– আমার বিরুধী পক্ষের লোককে আমারি কর্মীদের হাত থেকে বাঁচালি।তুই কি সব ভুলে গেছোস?
– সায়েদ,আমি আগের মত ওসব করি না জানিস তুই তাই এসব বলা বাদ দে।আর ভুলে গিয়েছিস তুই,ভুলে যাইস না তোকে রাজনীতি আমি শিখিয়েছি।এটা মাথায় রাখবি আর আমি সাবেক হয়েছি মাত্র বছর দুয়েক হলো।
এখনো আমি শত শত ভাই তৈরি রেখেছি।এরা মানুষের উপকার করতে জানে, অপকার নয়।
– তোর ভুল নাহিয়ান। তোর দোষেই আজ তোর এ অবস্থা। কেন ওসব গড্ডালিকা প্রবাহে এগিয়ে গিয়েছিলি।নাহলে আজ আমার জায়গায় তুই থাকতি,আমরা সবাই তোকেই আশা করেছিলাম। কিন্তু তুই…
– সায়েদ আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না,আমি সব ভুলে একটু ভালো থাকতে চাচ্ছি।
আর তুই একটু আগেই বললি তোরা আমাকেই চেয়েছিলি তোর পদে তাহলে ভেবে আমার জায়গায় আমিই আছি,আমার আদর্শ অনুসরণ কর।এভাবে মাঝ রাস্তায় কোনো মানুষকে আঘাত করা আমার আদর্শে নেই।
– হ্যা ভুল হয়ে গিয়েছিলো। পরের থেকে আর এমন হবে না।
– হুম,ভালো থাকিস।
ফোন রেখে লোকটির দিকে তাকাতেই দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়েই আছেন।
উনিও কি আমাকে কোনো বনমানুষ ভাবছেন কিনা তা নিয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই।
উনাকে প্রশ্ন করলাম,
– ভাই কি দেখছেন এমন ভাবে!
– ভাই আপনিই কি নাহিয়ান,মুনতাসির নাহিয়ান।যার দাপটে পুরো চট্টগ্রাম কেঁপে উঠতো।যার বজ্রকণ্ঠে শুধু মানবসেবার বুলি বের হতো!
– নাম তা ছাড়া বাকি সবই অতীত ভাই।
সমাজ কাউকেই স্থায়ী দেখতে চায় না,এ এক কঠিন নিয়মতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। আপনি কারো ভালো চাইলে আপনার আপনজনই আপনাকে তা করতে বাঁধা দেবে।
– দাদা আপনার সম্পর্কে আমি অনেক শুনেছি। আসলে আমি সুদূর হতে শুধু আপনার কাছেই এসেছি।কিন্তু এখানে আসার পর সায়েদ আহমেদকে নিয়ে অনেক কটু মন্তব্য শুনে তার নামে কথা বলেছিলাম। তাই সে আমাকে মারার জন্যে লোক লাগিয়েছিলো তবে যত মারই খেয়ে থাকি না কেন আপনার দেখা পাওয়াতে আমি অনেক আনন্দিত।
– আপনি যেসব বলছেন তা সত্যই আমায় লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে!
– দাদা আপনি আমাকে সাহায্য করুন। কোনো নেতা,কোনো পুলিশ কি প্রশাসন আমাকে সাহায্য করতে পারবে না আপনি ছাড়া!
দয়া করে সাহায্য করুন।
– আমি এক নগণ্য আদিমী। আমি কিভাবেই বা সাহায্য করতে পারি বলুন।
– আপনার থেকে এ আশা করিনি দাদা,যে মানুষের জন্য রাতের পর রাত খেটেছে,নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে শুধুই মানুষের উপকার করেছে আজ সেই ব্যক্তিই তা অতীত বলে নিজের কর্তব্য থেকে সরে যাচ্ছে।
লোকটিকে আসলে কে? আমার সম্পর্কে এত কিছু কিভাবে জানলো আর কিইবা সাহায্যের জন্য আমাকে তার প্রয়োজন!আচ্ছা শুনেই দেখা যাক। আমি উনাকে নিয়ে ভার্সিটি চলে এলাম। আমাকে অনেকদিন পর দেখে আমার প্রিয় অনুজরা দৌড়ে এলো স্বাগত জানাতে।দূর হতে লক্ষ্য করলাম কিছু পুরোনো আমার বিরুধী রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে আছে,হয়তো সংশয়ে আছে আমার আসার উদ্দেশ্যে।
এসব পাত্তা না দিয়ে আমি লোকটিকে নিয়ে সোজা বিশাল মাঠের এক কোণে গিয়ে বসলাম। চায়ের ব্যবস্থা করে নিয়েছি প্রিয় অনুজকে দিয়ে কারন চা ছাড়া আমার কোনো কিছুতেই ভালো লাগে না,আর কথোপকথনে চা একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে বলে আমার ধারণা। ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরালাম। দু টান দেয়ার পর উনাকে সাহায্যের কথা বিস্তারিতভাবে বলতে বললাম।
– জ্বী আচ্ছা,আমার পরিচয় থেকেই নাহয় শুরু করা যাক। আমার নাম গোপাল রায়,বাড়ি যশোর।ওখানে একটি ফার্মেসি আছে আমার।
বাড়িতে একটিই মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে ছোট সংসার।সবই ভালো চলছিলো।মেয়ের ছোট থেকেই চট্টগ্রামে পড়াশুনার ইচ্ছে,বুঝেনই তো একমাত্র মেয়ে হলে যা হয় তাই মেয়েকে ইন্টারেই এখানকার একটি ভালো কলেজে ভর্তি করিয়ে দেই,হ্যা মেয়ের পয়েন্ট ভালো থাকার কারনে কোনো সমস্যা হয়নি। ইন্টারে খুব ভালো ফলাফলের কারনে এখানেই ভর্তি হতে পেরেছিলো। পড়াশুনায় ভালো তাই অধ্যাপকদেরও প্রিয় হতে লাগলো সে। এখানে ভর্তি হয়ার দ্বিতীয় বছরেই এখানের একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলো। জানেন আমার মেয়ে ছোট থেকেই আমাকে মিথ্যে বলেনি তাই তার সম্পর্কের কথাও লুকিয়ে রাখেনি,ঠিকই বলে দিয়েছিলো আমাকে। ছেলেটির চট্টগ্রামে অনেক দাপট ছিলো,রাজনৈতিক কারনে তাকে সবাই ওস্তাদ মানতো। ভালো ছেলে ছিলো সে,অন্যায়ের প্রতিবাদে কখনোই পিছপা হতো না।
সময় পেড়োতে লাগলো আর তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হতে লাগলো। একে অপরকে খুবই ভালোবাসতো তারা। গ্রাজুয়েশনের শেষ সময়ে এসে মেয়ে বললো ছেলেটিকে নিয়ে বাড়িতে আসবে। আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। আমার মেয়ের হাসি মুখ দেখার বাসনায় তাকে বলে দেই এই ছেলের সাথেই তার বিয়ে দেবো। আমার মেয়ে খুশিতে আটখানা। ছোট ছোট কারনেই খুশি হয়ে যেত।জানেন তার হাসি ছিলো অতুলনীয়, এমন হাসি দেখার জন্য দুইজন মানুষ দিন রাত এক করে ফেলতে পারতো। এক আমি তার বাবা আর অপরজন ছিলো সেই ছেলেটি।
কিন্তু জানেন সুখ হয়তো সবার ভাগ্যে জোটে না। আমার মেয়ের কপালেও ছিলো না। আর তার সাথে জড়িয়ে যাওয়া আরো তিনজনেরও না। তার মা,আমি আর সে ছেলেটি।
একটি সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিতে পারে শুধুই তৃতীয় কোনো ব্যক্তি। শেষ বর্ষে গিয়ে আমার মেয়ের একটা বেস্ট ফ্রেন্ড হয় না ছিলো অনিক। আমার মেয়ের সাথেই একই ডিপার্টমেন্টে পড়তো। তার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো আমার মেয়ের আর তাই কাল হয়ে দাঁড়ালো। একদিন আমার মেয়ের প্রেমিক ক্যাম্পাসে আসতে দেরি করছিলো আর এমন সময় তার বেস্ট ফ্রেন্ড অর্থাৎ অনিকের সাথে দেখা। অনিক তাকে হাত ধরে ক্যাম্পাসের ভেতরে নিয়ে গিয়ে বেঞ্চে বসিয়ে এক হাত ধরে গল্প করছিলো। জানেন আমার মেয়েটা না অনেক বোকা ছিলো যার কারনে ওর এই হাত ধরা অবস্থায় তার প্রেমিক এসে দেখে ফেলে।
প্রেমিকের অনেক রাগ উঠে যায়, তার ব্যক্তব্য ছিলো যাকে এতোটা ভালোবেসেছিলাম সেই প্রতারণা করলো। প্রেমিক তা সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে কষে এক থাপ্পড় মেরে দিলো, তা দেখে যখন অনিক বাঁধা দিতে এলো তখন অনিককেও বেধড়ক মারধর করলো।
আপনি কিছু বলছেন না যে!
– আমার চোখে তখন নোনাজলের বৃষ্টি হচ্ছে আর অবাক হচ্ছি এসব শুনে।উনার প্রশ্নের জবাবে শুধু বললাম আপনি বলুন আমি শুনছি।
– আচ্ছা বেশ বেশ। প্রেমিকের শেষ কথা ছিলো, তুমি আমার সাথে এমনটা কেন করলা আমি জানি না আর তোমাকে এই নিয়ে প্রশ্নই করবো না। দয়া করে আমার সামনে আর কখনো আসবে না। কত বোকা মেয়ে,একবারো বলেনি যে সে ভুল করেনি,যা দেখেছো সব ভুল। যদি ওইদিন এমনটা বলতো তাহলে আজ হয়তো সবই সুখের হতো।
জানেন এখান থেকে বাড়ি যাওয়ার আগে পর্যন্ত একবারো থেমে যায়নি তার কান্না। না সে কান্না ছিলো না,তা ছিলো প্রবল অভিমান ও বুকের ভেতরের চাপা কষ্ট যা নোনাজল হয়ে ঝড়ছিলো। বাড়িতে এসে দুইদিন কাউকেই কিছু বলে নি তবে মশাই জানেন তো মেয়েরা বাবাদের কাছে কিছুই গোপন করে না। য়হিকই আমাকে বলেছিলো। এরপর থেকে আমার মেয়ে একদম চুপ,আমার সেই পুরোনো মেয়েটা সে হাস্যজ্বল বাচ্চাটি বুকের ভেতরে তার প্রেমিকের দেয়া কষ্ট গুলো লালন করতে লাগলো। আমাদের বাড়ির পেছনে ছোট একটা নদী আছে,প্রতিদিন বিকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে গালে তার প্রেমিক থাপ্পড় মেরেছিলো ওই গালটি চেপে বসে থাকে। একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন এভাবে বসে থাকে? সে বলেছিলো এ গালে আমার ভালোবাসার মানুষের ছোয়া আছে। আমি অনেকবার তাকে বলেছিলাম চল তোর প্রেমিকের সাথে কথা বলে আসি, তুই না হলেও ওকে আমি বুঝিয়ে নিয়ে আসি।কিন্তু প্রতিবারই তার জবাব না বোধক ছিলো। সে বলছিলো তার প্রেমিক তার কাছে আসবেই, সে জানে তাকে ছাড়া আমি যেমন প্রতি মুহূর্তে বিরহের আগুনে জ্বলছি ঠিক তেমনি সেও আমাকে ছাড়া থাকতে পারছে না।
তাকে প্রশ্ন করেছিলাম তাহলে সে যদি তোকে ছাড়া থাকতে না পারে তাহলে আসছে না কেন তোর জন্যে? সে বলেছিলো,বাবা মেনে নিলাম ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে তবে আমরা তো মিটমাট করার অবকাশটুকুও পাইনি তাই আমি যেমন অভিমান করে আছি ঠিক তেমনি সেও আমার উপর অভিমান করে আছে। বুঝেন মশাই আমার মেয়ের তার প্রেমিকের জন্য রয়েছে অগাদ বিশ্বাস,ভালোবাসা,শ্রদ্ধা। আমার মেয়েটা যেন কেমন হয়ে গিয়েছে, তাকে এমন কষ্টে আর দেখতে পারছি না আমি তাই ছুটে এলাম আপনার কাছে। আমি জানি এ আপনি ছাড়া কেউই পারবে না বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন। এতক্ষণে এই প্রথমবারের মত উনি কেঁদে উঠলেন। এরপর ছুটে এসে আমার হাত দুটি ধরে বললেন, দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। এক অসহায় বাপ আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থী, আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।
– আপনি সব কিছুই বললেন কিন্তু সেই অধমের নামটা বললেন না,জানি হয়তো বলে দেয়ার প্রয়োজন নেই। কারন সে অধম যে আপনার সামনেই বসে আছে বাবা।
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন আমি জানি সেই ছেলেটি তুমিই তাই তোমার ঘটনার সত্যতা তোমার ভুল গুলো সোজা তোমার কাছেই বলেছি। দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে দিও না,অনেক আশা নিয়ে এসেছি।
– বাবা, কেমন আছে অদ্রিতা?
– ভালো নেই বাবা,সে ভালো নেই। দুই দুটো বছর কেটে গেলো কিন্তু সে একদম আগের মতই তোমাকে ভালোবাসে,তোমাকে অনুভব করে। সে তার মনে বদ্ধকল্প যে তুমি আসবেই। কিন্তু সে ভেবে দেখেনি যদিনা তুমি না জেনে থাকো তোমার ভুল গুলো কোথায় তুমি কখনোই আসবে না তাই আমি এসেছি।
– আমরা কালই বাড়িতে যাবো।ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে আমার।চলুন আমার সাথে আমার বাসাতেই আজ রাত অয়াড় করে দেবো।
– তোমার বাবা-মা কোথায়?
– আজ রাতেই হয়তো দেখাতে পারবো।আমার বারান্দা থেকে খুব সুন্দর ভাবেই তাদের দেখা যায়। আমি প্রতিদিনই তাদের সাথে কথা বলি।
অদ্রিতার বাবার বুঝতে বাকি রইলো না আমার বাবা-মা গত হয়েছেন।
– এসব কবে ঘটেছে?
– বছরখানেক হলো বাবা-মা তারার দেশে গিয়েছেন বলে আকাশের দিকে তাকালাম।
– চলো চলো,খুব ভোরে আমার গাড়ি ধরতে হবে।
– জ্বী চলুন।
ভোরে ভোরে সোজা যশরের বাসে উঠেছি কারন রাস্তা ভেঙে ভেঙে যাওয়ার মত হাতে সময় নেই। বাস যতই এগিয়ে যাচ্ছিলো আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছিলো। সন্ধ্যার আগে আগেই পৌছে গেলাম উনার বাড়িতে।অদ্রিতার মায়ের সাথে শুধু দেখা করেই তাকে খুজতে লেগে গেলাম। হুট করেই মনে পড়লো এ সময় তো সে নদীর পাশে বসে থাকে। ব্যাগ থেকে সুন্দর করে বায়ুনিরোধক একটা ছোট্ট ব্যাগ বের করলাম তাতে অদ্রিতার প্রিয় বেলি ও কাঁশফুল নিয়ে এসেছি। চট জলদি নিজের জামা বদলে তার দেয়া নীল পাঞ্জাবিটি পড়ে নিলাম।
অদ্রিতার বাবা থেকে নদীটি কোথায় জেনে নিয়ে দৌড়ে ছুটে গেলাম। আমি যেন আর পারছিলাম না তাকে না দেখে।নদীর পাড়ে এসে দেখি পাড় লাগোয়া কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বাম গালে হাত দিয়ে নদীর ঢেউয়ের দিকে উদাশ নয়নে তাকিয়ে আছে আমার প্রেয়সী অদ্রিতা। হ্যা প্রশ্ন জাগতেই পারে সে হিন্দু আর আমি মুসলিম তবে কিভাবে সম্ভব আমাদের মিলন। তবে আমি বলবো ভালোবাসতে ধর্মের প্রয়োজন নেই। না আর কথা বলে সময় নষ্ট নয়,তার পেছন করে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি যে তার পিছনে প্রথমে সে আঁচ করতে পারেনি তবে পরমুহূর্তেই হুট করে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে তাকালো। আমাকে দেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়েই থাকলো।আমিও তাকিয়েই ছিলাম। যেন আমরা আবার নতুন করে একে অপরকে দেখছি, চিনছি।
কত সময় পাড় হলো জানিনে তবে তার কথায় হুশ হলো,
– আমার বেলী আর কাঁশ ফুল কই?
এত আনন্দিত আমি অনেকদিন পর হলাম,যেন এখনো আমরা দেখা করতে এসেছি আর রোজকার মত তার বায়না ধরছে সে।
– আমি পিছনের থেকে তার প্রিয় ফুল গুলো নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আবার সরিয়ে দিলাম।
অদ্রিতা আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো, এদিকে এসো,আমি ফুল গুলো তোমার খোপায় বেঁধে দেই।
সে আমার দিকে এগিয়ে এলো আর আমিও তার খোপায় বেলীফুল গুঁজে দিলাম আর কাঁশফুল তার কানের উপরে বসিয়ে দিয়ে বললাম, অদ্রি কিভাবে বুঝলে আমি এসেছি?
– এ যে খুব সহজ আমার জন্যে। একই সাথে দুই মাতাল করা ঘ্রাণ। এক নাহির আর এক বেলীফুলের। তোমার উপস্থিতি যে আমার চিরচেনা।
– ওইদিন যদি একবার চেষ্টা করতে বুঝাতে তবে কি এত কষ্টের গ্লানি বইতে হতো?
– না তবে তুমিও যে ভুলে গিয়েছিলে নিজে থেকে কিছু বলার অভ্যেস আমার নেই।
– হুম ঘাট মানছি। তবে কি এভাবেই দূরে সরে থাকবে। আমার বাহুবন্ধনের পেষ্টনে নিজেকে প্রকৃত শ্বাশত নারী রূপে কি দেখতে চাও না!
এ বলার দেরি আর অদ্রিতা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠলো।
তার ঘনকালো কেশের ঘ্রাণে আমি ডুবে যাচ্ছিলাম অজানায়,তার কান্নার শব্দে তাকে সামনে ধরে তার রক্তি চন্দ্রিমার ন্যায় ওষ্ঠ্যযুগলকে আপন করে নিলাম।
গোধূলি বেলায় দুই ছায়া মানব-মানবীর একান্ত দৃশ্য দর্শকবৃন্দের কাছে তুলে ধরার শক্তি এ লেখকের নেই। তবে শত ভুল বুঝাবুঝিই হোক না কেন,যতই দূরে থাকুক না কেন ভালোবাসার মানুষটি,শুধু ভালোবেসে,শ্রদ্ধায় ও বিশ্বাসই পারে এর এক সুখকর সমাপি দিতে।
পরিশেষে বলবো,তবু আজ ভালোবাসা হোক।