এখন প্রায় মধ্যদুপুর। পুকুর পাড়ে একা বসে আছে নিশি। নেহালের দেয়া নুপুর পায়ে পড়ে, পুকুরের পানিতে পা ডুবিয়ে খেলছিলো সে, চোখে তার অশ্রুজল, ঠোঁটে বিদায়ের হাসি। অনেক দিন পর নেহালের সাথে দেখা হবে আজ, হয়তো শেষ দেখা!
“নাহ, একদম কাঁদলে চলবে না, নিজেকেই নিজে বুঝিয়ে চলে নিশি”
প্রায় আধ ঘন্টা পর সমস্ত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নেহালের আগমন।নিশি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে, সেই চিরচেনা মুখ। সর্বদা হাস্সোজ্জ্বল থাকা সেই মুখে আজ যেনো ক্লান্তির ছায়া ভর করেছে, আর হবেই না কেনো? আজ যে নেহাল এর গায়ে হলুদ আর কাল বিয়ে!
প্রায় আট বছর আগের কথা,পলাশপুর গ্রামে বেড়ে ওঠা সদ্য কিশোর-কিশোরী, নেহাল আর নিশি। নেহাল তখন এস.এস.সি দিবে আর নিশি সপ্তম শ্রেণিতে।পাশাপাশি বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও দুজনের মধ্যেকার সম্পর্ক মোটেও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলনা। দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন নেহালের বাবা মারা যান, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একদম ভেংগে পড়ে নেহালের পরিবার। নিশির পরিবার ছিল খুবই স্বচ্ছল। যদিও নিশির মা বাবা নেহালের পরিবারের সাথে একদম মিশতো না, কিন্তু নিশি ছিলো একদম অন্যরকম।নেহালের বাবা মারা যাবার পর থেকেই নিশির মনে নেহালের জন্য অদ্ভুত ভালোবাসার সৃষ্টি হতে থাকে।
একদিন স্কুলে যাবার সময়-
নিশি- “ভাইয়া আমি মিষ্টি বানিয়েছি, খাবেন?”
নেহাল-“অবশ্যই,,,,,,,,আহ অসাধারণ! তুমি বুঝি খুব ভালো রান্না করতে জানো?”
নিশি- “হ্যাঁ, ভাইয়া। আপনি কিছু খেতে চাইলে বলবেন, আমি করে দেবো।”
নেহাল- “কিন্তু তোমার মা-বাবা জানলে,,,,”
নিশি- “ভয় পাবেন না।ওরা জানতে পারবে না”
পরেরদিন একই ভাবে স্কুলে যাবার সময় নিশি নেহালের জন্য পায়েস রান্না করে আনলো।এভাবে প্রতিদিনই কিছু না কিছু নিয়ে আসতো, আর স্কুলের পুরোটা পথ তারা গল্প করে করে যেতো।
একদিন-
নেহাল- “শুন, নিশি”
নিশি- “জ্বি, নেহাল ভাই”
নেহাল- “চল পুকুর পাড়ে যাই”
নিশি- “এখন তো সন্ধ্যা হয়ে এলো নেহাল ভাই”
নেহাল- “চল, দুজনে মিলে জ্যোৎস্না দেখবো।”
নিশি-“আচ্ছা, চলেন”
নেহাল-“চোখ বন্ধ কর দেখি একটু”
নিশি-“(অবাক হয়ে)……. ওমা আমার পায়ে ধরছেন কেনো নেহাল ভাই?”
নেহাল-“তোকে নুপুর পড়িয়ে দিচ্ছি। দেখতো কেমন লাগছে?
নুপুরটা আমার বোনের ছিল রে, বোনের যেদিন জন্ম হয় কাকু বড় মুখ করে বলেছিলেন বড় হয়ে পড়বি এখন রেখে দে, সেই বোন আমার দুমাস ও বাঁচেনি। আর এই নুপুরজোড়া আমার বোনের স্মৃতি। আজ আমি তোকে দিলাম।তুই সবসময় পড়ে থাকিস। খবরদার একদম হারাবি না। এই নুপুরজোড়া আমার কথা তোকে সবসময় মনে করিয়ে দিবে।”
নিশি- “কিন্তু নেহাল ভাই,,”
নেহাল-“একদম কিন্তু না, তুই জানিস না আমি তোকে কতটা ভালোবাসি?”
নিশি-“আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি নেহাল ভাই।
দুজনের মধ্যে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলনা।নিশি রোজ দুপুরে চুরি করে দুপুরের খাবার নেহালের বাড়ির উঠোনের এক আঙ্গিনায় রেখে আসতো।টিফিনের টাকা জমিয়ে নেহালের মায়ের জন্য ওষুধ কিনে আনতো।আর সন্ধ্যায় নেহালের বাড়িতে পড়তে যেতো নিশি, এস.এস.সি তে বোর্ডে তৃতীয় হবার সুবাদে খুব ভালো ভালো টিউশন পায় নেহাল।নিশিও ছিলো তার ছাত্রী। পড়ানো শেষ হলে দুজনে মিলে চাঁদ রাতে জ্যোৎস্নার আলো পোহাতো। দোলনায় দোল খেতে খেতে ভবিষ্যতের গল্প সাজাতো।তাদের কল্পনার দেশে নিশি আর নেহাল হচ্ছে রাজা আর রাণী।
নিশি- “আর আমাদের থাকবে একটা রাজপুত্র।
নেহাল- না, না, না রাজকন্যা
নিশি- আচ্ছা। রাজকন্যা, রাজপুত্র দুজনেই।
নেহাল- হা হা হা এবার হয়েছে।
অনেক রাত অবধি চলতো তাদের গল্প।আবার সকালে স্কুলে যাবার সময় দেখা হতো। ভালোবাসায় এতটুকু ঘাটতি ছিল না কখনোই।দুজনে মিলে ফুল কুড়াতে যেতো। একবার কদম ফুলের মালা গেঁথে নিশি নেহালকে উপহারও দিয়েছিল।নেহালের সে কি আনন্দ। এভাবে হাসি খুশি আর আনন্দের মধ্যে তাদের দিনগুলি কাটছিলো।
কেটে যায় পাঁচটি বছর। নিশির এইচ.এস.সি. পরীক্ষা শেষ হলো, এরই মধ্যে নিশির বাবার প্রমোশোন হয়ে ঢাকায় বদলীর চিঠি আসে।ঘরের দরজা বন্ধ করে নিঃশব্দে কান্না করতে থাকে নিশি।নেহালের সাথে কি আর দেখা হবে না?এসব ভেবে কান্না আর যেনো বন্ধ হয়না নিশির।খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয় নিশি।নেহালের সাথে দেখা হলেই চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারেনা নিশি। নেহাল বুঝায় আর দুবছর পরই তার অনার্স কম্পলিট হবে।ভালো চাকুরী পেয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে সে, তাও নিশির মন মানেনা, কীসের যেনো এক অজানা ভয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে সে।
অবশেষে বিদায়ের দিনে নেহালের চোখে চোখ রাখতে পারছিলো না নিশি।নেহালের মাকে সালাম করে বিদায় নিয়ে আসে সে।প্রায় ৫ ঘন্টা পর ঢাকায় এসে পৌঁছে নিশি।
নিশি ঢাকার একটা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলো। প্রচন্ড পড়াশোনার চাপ আর নেহালের সাথেও যোগাযোগ কমতে থাকে নিশির। একসময় জীবনের কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয় দুজনেই। যোগাযোগ হতোনা একদমই।
নেহাল সদ্য অনার্স কম্পলিট করা বেকার ছেলে।টিউশনের টাকা দিয়ে খুব টেনেটুনে চলতো সংসার।মা হঠাৎই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন।নেহালকে মা বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন, নেহালও সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা গিয়ে নিশির সাথে যোগাযোগ করবে।
প্রায় একমাস হতে চলল নিশির খুব জ্বর কেনো যেনো কমছেই না।তার উপর শরীরে প্রচন্ড ব্যথা, রক্তশূন্যতাও দেখা দিয়েছে নিশির।হঠাৎ একদিন রক্তক্ষরণ শুরু হলে হসপিটালে ভর্তি হয় নিশি। ডাক্তাররা খুব খারাপ কিছু ধারণা করছিলেন। নিশির ডায়াগনোসিস করা হয়, ডাক্তাররা যেটা ধারণা করছিলেন সেটাই সত্যি হয়। হ্যাঁ, নিশির ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। দিনের পর দিন ক্যামো দিয়ে নিশ্চল শরীর টাকে সচল করার বৃথা চেষ্টা।
একের পর এক চিঠি দিয়ে উত্তর না পেয়ে হতাশ হয় নেহাল। নিশির উপর মিথ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয় নেহালের। নিশির ফুফুও গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন। ফুফুর সাথে ঢাকা নিশির সাথে দেখা করতে যাবে বলে ঠিক করে নেহাল।
পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে আসে নিশির। একদিন ফুফুর ফোন আসে নিশির কাছে।
ফুফু- “ভালো আছিস মা?”
নিশি-“ভালো থাকার চেষ্টা করছি ফুপি।”
ফুফু-” শুন, নেহাল তোর সাথে দেখা করতে চায়।আগামীকাল আমি আর নেহাল আসছি তোদের বাসায়।”
নিশি-“কি বলছো কি ফুপি? আমি চাই না আমার এ অবস্থা নেহাল জানুক।প্লিজ তুমি ওকে বাসায় এনো না, প্লিজ ফুপি!”
ফুফু- “নেহাল যে আসতে চায়, কি করব বল?
নিশি- “তুমি ওকে আমার মেডিকেল ক্যাম্পাসে দিও যেও ওখানেই দেখা করব আমরা।”
ফুফু-” পাগল তুই? এতো দূর থেকে আসছে ছেলেটা তোর মা বাবার সাথে দেখা করতে দিবি না?”
নিশি- “বাড়িতে এলে আমার অসুখের কথা জেনে যাবে ফুপি।আমি চাই না ও জানুক। আর আমার মা বাবাকে কখনো দেখেছো নেহালের সাথে ভালো করে কথা বলতে?”
ফুফু- “তুই যা ভালো বুঝিস।”
নিশি- “আমি কাল ক্লাসে যাবো। তুমি ওখানেই নিয়ে এসো নেহালকে।”
নেহালের আসার কথা শুনে বুকটা কষ্টে ভারী হয়ে উঠে নিশির।”নেহাল কি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে? স্বল্প মেয়াদের এই জীবন নিয়ে নেহালকে বিয়ে করে আর কষ্ট দিতে চাইনা। নাহ, নেহালকে বলা যাবেনা আমার অসুখের কথা, একদমই না!”
পরের দিন অসুস্থ শরীর নিয়েই নিশি মেডিকেলের ক্লাসে গেলো। আজ নেহালের আসার কথা।ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নেহালের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে নিশি। কতোদিন পর নেহালের সাথে দেখা হবে তার! কিন্তু কিছুতেই বুঝতে দেবে না সে নেহালকে তার অসুখের কথা। প্রায় ঘন্টাখানেক পর ফুফু আর নেহাল এসে হাজির।
ফুফু-“তোরা কথা বল আমি বাসার দিকে রওনা হই।”
নিশি- “আচ্ছা ফুপি”
নেহাল- “কি খবর তোর? ভুলে গেলি আমাকে? এতো শুকালি কিভাবে রে? চোখটা ডেবে গেছে।মাথায় হিজাব পড়ছিস, বড় হয়ে গেলি দেখতে দেখতে”
নিশি-“নেহাল ভাই, তোমার নিশি আর ছোট্টোটা নেই গো।কিছুদিন পর সে ডাক্তার হবে তার যে অনেক দায়িত্ব। ”
নেহাল- “বড় পাকা কথা বলতে শিখে গেছিস।
আর শোন আমি বি.সি.এস. দিবো সামনেই।দোয়া করিস। ভালো একটা চাকরী পেলেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।”
নিশি- “(কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো।খুব কষ্ট করে চোখের পানি আটকালো সে)
শোনো না নেহাল ভাই, এদিকে আসো।”
নিশি নেহালকে নিয়ে তার ক্লাসমেট রাতুলের কাছে নিয়ে গেলো।
নিশি-“দেখো রাতুল, এ হচ্ছে আমার নেহাল ভাই।আমরা এক গ্রামেই বড় হয়েছি।”
রাতুল- “ওহ, ”
নিশি- “নেহাল ভাই, এ হচ্ছে রাতুল। দেখো তো আমার সাথে ভীষণ মানিয়েছে না? আমরা রিলেশনে আছি প্রায় ১ বছর। ডাক্তার যখন হচ্ছি ডাক্তার ছেলেকেই বিয়ে করি, কি বলো?”
নেহাল- (ভীষণ অবাক হয়ে যায়)
নেহালের দু চোখে প্রচন্ড ঘৃণা দেখতে পাচ্ছিলো নিশি।
নেহাল- “হ্যাঁ রে, তাইতো এক বছর যাবত আমার সাথে একটি বার যোগাযোগ করারও চেষ্টা করলি না। এই তোর কারণ। খুব মানিয়েছে তোদের। ভালো থাকিস।”
নেহাল চলে যায়।কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে নিশি।
রাতুল- “শুধু শুধু মিথ্যে বলে ছেলেটাকে কষ্ট না দিলেই পারতি নিশি।”
নিশি- “আমার কিছু করার ছিলো না রে।”
হঠাৎ নিশি মাথা ঘুরে পড়ে যায়৷ হসপিটালে ভর্তি করানো হয় নিশিকে। ক্যামো চলতে থাকে আর জীবন থেকে একটি একটি করে যেনো দিন কমতে থাকে নিশির।
বাড়ি এসে নিশিকে মন থেকে মুছে ফেলে নেহাল একেবারেই। প্রচন্ড ঘৃণা করতে শুরু করে তাকে। একমাত্র মায়ের দিকে তাকিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে উঠে নেহাল।যেভাবেই হোক এবার বি.সি.এস টা পাশ করতেই হবে তাকে।
কেটে যায় কয়েক মাস। নিশির শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে।
নেহাল বিসিএস এ পাশ করে।মায়ের পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয় তার। নিশিও খবর পায়।বুঝতে পারে তার আর বেশী দিন বাকি নেই। শেষ বারের মতো একবার নেহালকে দেখার তীব্র ইচ্ছা হয় তার।
মা বাবাও মেয়ের ইচ্ছেগুলি এখন আর ফেলতে পারে না। নিশি আজ বাড়িতে যাচ্ছে অনেক দিন পর। নেহালের মা কে সালাম করে ঘরের চারপাশে তাকিয়ে নেহালকে খুঁজতে থাকে নিশি। কিন্তু তাকে খুঁজে পায়না। আর কিভাবেই বা পাবে? দুদিন পর তার বিয়ে, বড্ড ব্যস্ত সে।
আজ নেহালের গায়ে হলুদ। শরীরটা একদম ঠাই দিচ্ছে না নিশির। তাও নেহালের বাড়িতে গিয়ে হলুদের ডালি সাজিয়ে দিতে থাকে নিশি।
নিশি-” নেহাল ভাই, আজ আমার সাথে একটু দেখা করবেন পুকুর ঘাটে?”
নেহালের চোখে তখনো ঘৃণার আগুন দেখতে পাচ্ছিলো নিশি।
এখন প্রায় মধ্যদুপুর। নেহালের দেয়া নুপুর পড়ে পুকুরের পানিতে পা ডুবিয়ে খেলছিলো সে।হঠাৎ কেনো যেনো খুব ভালো লাগছিলো তার। বারবার মনে হচ্ছিলো পৃথিবীর মায়া আর বেশিদিন তাকে বহণ করতে হবে না। পুকুরের পানিতে পা ডুবিয়ে পুরোনো কথা মনে পড়তেই মিটিমিটি হাসছিলো সে। নেহাল দূর থেকে তার হাসি দেখতে পেলো। আর মনে মনে ভাবলো আমার বিয়ে হচ্ছে তাও বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই তার মাঝে। বাহ! নতুন রিলেশনে গিয়ে খুব সুখেই আছে সে!
নিশি- “নেহাল ভাই ”
নেহাল-” ন্যাকামো করতে হবে না, যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।”
নিশি- “কাল তোমার বিয়ে নেহাল ভাই। নতুন জীবনে অনেক সুখী হইয়ো।আর (নুপুর জোড়া খুলে) আর কখনো তোমার সাথে দেখা হবে না হয়তো।নেহাল ভাই, তোমার বোনের শেষ স্মৃতিটুকু যে আমারও স্মৃতি বহন করবে। আজ থেকে নুপুর জোড়া তোমার কাছে রেখে দাও নেহাল ভাই।”
নেহাল-” হয়েছে আর বলতে হবে না।প্লিজ এবার থামো। আর তোমার স্মৃতি দিয়ে কি করবো আমি? ঢের হয়েছে তোমার ন্যাকামো।
একথা বলে নুপুর জোড়া না নিয়েই হনহন করে চলে গেলো সে।”
নিশি-“(মনে মনে) ভালো থেকো নেহাল ভাই।”
সন্ধ্যা হয়ে এলো। নেহাল ভাইয়ের গায়ে হলুদ আজ। নিশির শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। কি যেনো মনে করে ডায়রীতে দু মিনিট কলম ছোঁয়ালো, আর নুপুর জোড়া খুলে ডায়রীর পাতার ভাজে রেখে দিলো নিশি। একটুপর হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলো নিশি৷ কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলো, কিন্তু সারারাত ব্যাথায় ছটফট করছিলো সে।
পরের দিন সকালে নেহালের বরযাত্রা রওনা হয়।নিশি বারান্দা দিয়ে নেহালের যাত্রাটুকু শেষ বারের মতো দেখছিলো।হঠাৎ মাটিতে ঢলে পড়ে নিশি। নিশির বাবা মা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে পৌঁছানোর কিছু সময়ের মধ্যেই মারা যায় সে।
বিকেলে নতুন বৌ কে নিয়ে বাড়িতে ফেরে নেহাল।চারদিকে কেমন যেনো স্তব্ধতা ভর করছিলো।কিছু বুঝতে পারে না সে। থমথমে একটা পরিবেশ। মা যেনো কিছু লুকাচ্ছিলো। হঠাৎ নিশির ফুফু নেহাল কে ধরে বলে উঠে নিশি আর নেই রে। নেহাল বিশ্বাস করতে পারছিলো না। দৌঁড়ে সে নিশিদের বাড়িতে নিশির ঘরে ছুটে যায়। টেবিলের উপর হঠাৎ তার চোখে পড়ে সেই নুপুর জোড়া ডায়রীর কোনো এক পেইজের ভাজে আটকে আছে।
ডায়রী খুলে পড়তে থাকে নেহাল-
” জানো নেহাল ভাই? তোমার বিয়ে নিয়ে আমার কতো স্বপ্ন ছিলো? সেই স্বপ্নে তোমার পাশে কিন্তু আমিই ছিলাম। জানো তো স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না। আমার বেলায় ও তেমনি হলো। এই দুরারোগ্য ক্যান্সার আমার সব স্বপ্ন কেড়ে নিলো”
মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে নেহালের৷ নিজের প্রতি ঘৃণা ধরে যায় তার। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকে নেহাল।
সন্ধ্যা হয়ে এলো। নিশির লাশ ও পৌঁছে গেছে বাড়িতে।
এখন বাদ-এশা। নিশির জানাযা শেষ করে কবর দেয়া হলো তাকে।
কোথা থেকে যেনো এক অস্ফুট ধ্বনি শুনতে পায় নেহাল-” ভালো থেকো নেহাল ভাই, নিজের যত্ন নিও”
হয়তো মনের ভুলেই শুনেছে সে, হয়তো কল্পনা!!!
রাত বাড়তে থাকে, জ্যোৎস্নার আলোয় কবরটা আলোকিতো হয়ে উঠেছিলো। সেখানে হয়তো নিশি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হাজার বছরের জন্য!!!
#নাঈমা