আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন। আজ আমি আমার প্রথম গল্প বলতে চলেছি। ঘটনাটি শুরু হয়ে ছিলো আজ থেকে ৪ বছর আগে। আমাদের জীবন ভালোই কাটছিলো, সব স্বাভাবিক।হঠাৎ মা একদিন বললো তার ঢাকা শহর আর ভালো লাগে না, চারদিকে চেচামেচি, কোলাহল ইত্যাদি। বরাবরের মতো আমরা মায়ের কথায় কান দিলাম না। কিছুদিন পর বাবা অফিস থেকে ফিরে বললো
বাবা: আমাদের আর এই শহরে থাকা চলছে না।
আমি: কেনো, শহর আবার কি করলো তোমাকে?(একটু মজার ছলে)
বাবা: না, শহর কিছুই করে নি, করেছে আমার অফিস। বদলি! তাও এমন তেমন না, ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ
মা:(রান্নাঘর থেকে এসে) ভালোই তো হলো, রূপকেরও স্কুল শেষ, কলেজে না হয় সুনামগঞ্জই ভর্তি হবে। তাছাড়া আমার ভাই এর বাড়িও তো সুনামগঞ্জ শহরই।
বাবা: হুম, তাই ভালো হবে, অবশ্য এটা ছাড়া আর উপায়ই বা আছে কোথায়! চাকরি তো আর ছেড়ে দিতে পারবো না।
আমার আর কি করার, আমার তো আর আপত্তি করার সুযোগ নেই, আর আপত্তি করলেও শুনবে কে! আমি বলা চলে বাধ্য।
তারপর মাসের শেষে আমরা সুনামগঞ্জ এর পথ ধরলাম, জায়গা টা খারাপ না, ভালোই । বাবার অফিস শহরে, কিন্তু আমাদের থাকার বাসা শহর থেকে ২৩ কি:মি ভিতরে, অবশ্য বাবাকে মোটরসাইকেল দিয়েছে অফিস থেকে, তাতেই আসা যাওয়া করে। মাঝে মাঝে আমিও চালাই!!!
আমাদের বাসা টা আমার পছন্দ হয় নি। চারদিকে নিরিবিলি, কোনো আওয়াজ নেই, আর বাড়ির সামনে অনেক বড় জঙ্গল। এটা আগে নাকি বাগান বাড়ি ছিল। আমার পছন্দ না হলে কি হবে, মায়ের খুব পছন্দ হয়েছে।
মা: এমন একটা বাড়িই খুজতাম আমি, কত শান্তি।
আমি: আমার কাছে তো বিরক্ত লাগে, এত নিরিবিলি পরিবেশ এ গা ছমছম করে।
মা: তোর তো কত কিছুই করবে। যতসব বাজে চিন্তা মাথায় রাখিস।
মা যত যাই বলুক আমার কিন্ত ভয় ভয়ই লাগে।
কয়েক দিন ভালোই গেছে, কিছুই হয়নি। আসলে ক্লান্ত ছিলাম তাই হয়তো কিছু হলেও বুঝতে পারিনি। আমরা এখানে আসার দিন পাঁচেক পরের ঘটনা:- মোবাইলে নেটওয়ার্ক বাড়ির ভিতরে পায় না বেশি, তাই বাইরের জঙ্গল এর দিকে গেছিলাম হাঁটতে হাঁটতে, হটাৎ খেয়াল হলো অনেক ভিতরে চলে এসেছি, তাই বাড়ির দিকে চলে আসতে যাবো তখনই দেখলাম সোনালি বর্ণের একজন কেউ আমার বামদিক থেকে সরে গেল, আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি যে কেউ ছিলো আমার সাথে , এটা আমার মনের ভুল নয়। আমি সামান্য ভয়ই পেয়েছিলাম বলতে গেলে!! তবে পা চালিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসি।
মা: কিরে এত ঘামছিস কেন?
আমি: না এমনি। বাইরে অনেক গরম তো তাই,
মা: ভয় টয় পেয়েছিস নাকি?
আমি: আরে না, কিজে বলো, ভয় পাবো তাও আমি, এটা কি হয় নাকি(চেপে গেলাম)
মা: ভয় না পেলেই ভালো, অবশ্যই তুই বাসায় না থাকলে আমারই একটু গা ছমছম করে,
আমি: কি বলো!!!
মা: আসলে ও কিছু না, বড় বাড়ি তো, তাই একা একা লাগে, তার উপর আবার পুরানো বাড়ি। কিন্তু তুই ভয় পাস না কেমন,
এই বলে মা চলে গেলো,,,
আমি আর বললাম না যে আমি ভয় পাইছি, কিন্তু একটা জিনিস বোঝা গেল মা ও ভয় পায়!!! তাহলে কি মা কিছু দেখেছে আমার মতো? দেখলেই কি বলবে নাকি আমার, ঠিক ই আছে, বেশি শখ ছিল এখানে আসার, এখন মজা বুঝতে পারবে। কিন্ত ওই সোনালী রঙ এর লোকটা কে? আসলেই কি মানুষ? নাকি অন্য কিছু, আমি কেনো দেখলাম? আবার চলেগেল কেন? আবার কি দেখা হবে!! কে জানে।
কিন্তু আমি যে ভয় পেয়েছি এটা বুঝতে দেয়া যাবে না, আর এই সোনালী জিনিস টার রহস্য আমাকে বের করতেই হবে,,
পরের দিন…..
বাবা মামা কে নিয়ে আসলো বাড়ি তে,,, মামা বাড়ি টা দেখেই বাবাকে বললো
মামা: কি অফিসে চাকরি করেন যে এমন বাড়ি দিয়েছে থাকার জন্য, কোন দিন যেন ভেঙ্গে পরে আপনাদের উপর,,,
বাবা: আরে নাহ, ব্রিটিশ আমলের বাড়ি, এত সহজে ভাঙবে না,,
মামা: তবুও, এমনি আবেদন করেন এই বাড়ি বদলানোর, যেমন নিরিবিলি, আর গা ছমছম করা জায়গা, আপা আর ভাগিনা কিছু যদি দেখে(ভুত বুঝিয়ে) কেলেঙ্কারি অবস্থা হবে, সবাই শহরে মানুষ, এসব বিষয় এ অভিজ্ঞতা নেই
বাবা: আরে কিযে বলো, এ যুগেও কি মানুষ ভুতে বিশ্বাস করে নাকি,,, যুগ কত পরিবর্তন হয়েগেছে, এটা হলো কম্পিউটার, ইন্টারনেট এর যুগ, এ যুগে ভুত পাবে কোথায়!!!(হাসতে হাসতে)
মামা: যত যাই. বলেন না কেনো আমি কিন্তু ওই একটা কথাই বলবো,আপনারা শহরের মানুষ এসব বুঝবেন না, আমরা এখানে থাকি, আমরা এখনো কিছু কিছু জিনিস দেখি।
বাবা: হয়েছে হয়েছে, আমাকে বলেছো সমস্যা নাই, কিন্তু রূপক কে বলতে যেও না যেন!!! ও এমনিতেও রাজি না এই বাড়ি তে থাকতে।
আমি আমার রুম থেকে সবই শুনলাম তাদের কথাবার্তা, বুঝলাম মামা শক্তিশালী মানুষ হলেও ভুত এ বিশ্বাস করে!!!!
আমার কিন্তু ভয় কিংবা কৌতূহল হচ্ছে শুধু ওই সোনালী জিনিস টার বিষয়ে,
পরদিন সকালে:-
একজন মহিলা আসলো আমাদের বাড়িতে, মায়ের সাথে অনেক্ষন গল্প করলো, আমার মাও গল্পের মানুষ, অনেক গল্প করতে পারে, পরে জানতে পারলাম পাশেই ওনাদের বাড়ি, ওনার আমার বয়সই একটা ছেলে আর আমার চেয়ে দেড় বছরের ছোট একটা মেয়ে আছে, মেয়ে পরে ক্লাস নাইন এ,,, বললো বিকেলে তাঁদের বাড়ি যেতে,,,
বিকেলে মা সত্যি তাদের বাড়ি গেলো আমাকে সাথে নিয়ে,, ছেলেটা আমার সমবয়সী, খুব মিশুকে স্বভাব, আর মেয়েটা একটু কম কথা বলে, কিন্তু মিষ্টি করে হাসে!!!!
তাদের সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভালো হয়ে গেলো, আর ছেলেটার নাম রাফি, রাফি আমার ভালো বন্ধু হয়ে গেলো
আসছে ২য় পর্ব……