এশিয়া মহাদেশের ভৌগলিক অবস্থান,আয়তন, ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু ও জনসংখ্যা

  • এশিয়ার ভৌগলিক অবস্থান ও আয়তন

পৃথিবীর মোট স্থলভাগের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়ার আয়তন ৪ কোটি ৪৬ লক্ষ ১৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের আয়তন যোগ করলে কিংবা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশেকে একত্র করলেও এশিয়ার সমান হবে না। ৪৪২ কোটি ৭০ লক্ষ লোকের বাস এই মহাদেশে(২০১৪ এর হিসাব অনুযায়ী)। শুধু আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকেই যে এশিয়া বৃহত্তম মহাদেশ তাই নয়, এখানেই গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাচীন সভ্যতা। সুদূর অতীতে চীন, মেসোপটেমীয়, পারসীয়, হিব্রু এবং সিন্ধু সভ্যতা এখানেই গড়ে উঠে। এশিয়ায় যখন এসব গড়ে উঠে তখন ইউরোপ আমেরিকায় সভ্যতার আলো পৌঁছে নি। সভ্যতার উজ্জ্বল নিদর্শন চীনের মহাপ্রচীর ও ব্যাবিলিনের শূন্যউদ্যান এই মহাদেশেই অবস্থিত।

  • ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু

এশিয়া মহাদেশের ভূপ্রকৃতি বৈচিত্র্যপূর্ণ। এ মহাদেশের প্রায় এক- তৃতীয়াংশ অঞ্চল সমতল। এর উত্তরে যেমন আছে বরফ আচ্ছাদিত এলাকা সাইবেরিয়া, তেমনি পশ্চিমে আছে উত্তপ্ত মরুভূমি। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে নদী বিধৌত নিম্ন সমভূমি। এ ছাড়া এ মহাদেশের ভূপ্রকৃতির মধ্যে পূর্বদিকের আগ্নেয় দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। পৃথিবীর বৃহত্তম হ্রদ কাস্পিয়ান সাগর এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত। পৃথিবীর বড় নদী গুলোর সাতটিই এশিয়া মহাদেশে প্রবাহিত। সেই সাথে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ৮৮৫০ মিটার উঁচু মাউন্ট এভারেস্ট এ মহাদেশে অবস্থিত। ব্রিটিশ ভারতের জরিপ বিভাগের প্রধান স্যার জর্জ এভারেস্টের নামানুসারে শৃঙ্গটির নাম রাখা হয়েছে মাউন্ট এভারেস্ট। তবে এর উচ্চতা মেপেছিলেন এক বাঙালি, নাম-রাধানাথ শিকদার। এই পর্বতসমূহ ও নিকটবর্তী পর্বত সারা বছর বরফে ঢাকা থাকে। নেপালের তেনজিং শেরপা ও নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারি ১৯৫৩ সালে প্রথম এভারেস্ট পর্বত চূড়ায় আরোহণ করেন। বাংলাদেশের মুসা ইব্রাহীম, এম এ মুহিত, নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরীনও এই পর্বত চূড়ায় আরোহণ করেছেন।

এশিয়া মহাদেশের জলবায়ুও বৈচিত্র্যপূর্ণ। সারা বছর অধিক তাপ ও বৃষ্টিপাত এ জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য। বৃষ্টিবহুল গ্রীষ্মকাল ও বৃষ্টিহীন শীতকাল মৌসুমি জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ফিলিপাইন চীন ও জাপানের দক্ষিণাংশ মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত। বৃষ্টিহীনতা ও উষ্ণতার পার্থক্য মধ্য এশিয়ায় মরু অঞ্চলের জলবায়ু সৃষ্টি করেছে। শীতকালে বৃষ্টি কিন্তু গ্রীষ্মকালে সাধারণত বৃষ্টিহীনতা-এরুপ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

  • এশিয়ার জনসংখ্যা

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ষাট ভাগের বেশি মানুষ বাস করে এশিয়া মহাদেশে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা এর মধ্যে এশিয়ার লোকসংখ্যা ৪৪২ কোটি ৭০ লক্ষ। এ হিসাবে বিশ্বের প্রায় চার ভাগের তিন ভাগ লোকের বসবাস এই মহাদেশে। এশিয়ার মোট এলাকা পৃথিবীর মোট ভূভাগের তিন ভাগের এক ভাগ। তার মানে এই মহাদেশটিতে জনসংখ্যার চাপ বেশি। মধ্য এশিয়া, সাইবেরিয়া ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় তুলনামূলকভাবে কম মানুষ বাস করে। কিন্তু পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে ভারত উপমহাদেশের দেশগুলো ঘন জনবসতিপূর্ণ। জনসংখ্যা ও আয়তনে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় দেশ চীন, আর ছোট দেশ মালদ্বীপ

Related Posts