“আমি ভুলতে চাইনি তোমাকে”
শান্তার সাথে আমার কবে পরিচয় হয়েছিলো তা মনে নেই। হয়তো ১ মাস আগে হবে। সে একজন নার্স। আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলাম। তখন তাকে দেখি। প্রথম দেখাতেই তাকে ভালোলেগে যায়। আমার পছন্দের কথা তাকে বলার আগেই সে বুঝে নিয়েছিলো। সে কাছে থাকলে আমার ভালো লাগতো খুব। তবে ইদানিং আমার কেন যেন সবকিছু ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আসলে মাঝেমাঝে তার নামটাও বোধহয় ভুলে যাই। ভুলো এই মন নিয়েই আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। কারণ তাতে শান্তারও তেমন কোন আপত্তি নেই। আসলে শান্তার আমার কোন ব্যাপার নিয়েই কোন অভিযোগ নেই। এত ভালো মেয়েটা। তবে আমি তাকে সত্যিই অনেক ভালো বাসি, আর শান্তাও যে তা জানে; সেটা শান্তার মিষ্টি হাসি দেখলেই বুঝতে পারি। আমি আসলে বুঝে উঠতে পারি না, সে আমাকে কিভাবে সামলে নিয়ে চলে, আমার সমস্ত সমস্যাগুলো সমাধান করতে যেন ওর জুড়ি নেই। আমাকে যত্ন করে খাইয়ে দিবে, মুখ মুছে দিবে, ওষুধের ডোজগুলো সময়মতো দিতে কখনই ভুলবে না। দিনে-রাতে মিলিয়ে মোট ৫-৬ বার তার সাথে দেখা করার সুযোগ হয় আমার। পুরোটা সময় আমি কথা বলি, সে আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে। তবে অল্প কিছু কথা বলতেই আমি হাঁপিয়ে যাই, বুকে কষ্ট হয়। শান্তা আমাকে কথা বলতে বারণ করে। কিন্তু তাকে দেখলে কথা না বলে কি করে থাকা যায় তা আমার জানা নেই। আমার একটু আফসোস হয়। যখন সে আমার সেবাযত্ন করে,তখন তার চুলগুলো কপালের কাছে নেমে আসে। ইচ্ছে হয় হাতটা দিয়ে চুল গুলো সড়িয়ে দিই। সামান্য কিছু তার মুখটা আড়াল করুক, তা আমি চাই না। কিন্তু আমি তার চুলগুলো সড়াতে পারি না। আমার সেই ক্ষমতা নেই। আচ্ছা, শুনেছিলাম যে প্রেমিকারা নাকি অনেক ন্যাকামো করে, আবদার করে, রাগ-অভিমান করে, আর ঝগড়াতো তাদের করতেই হয়। কিন্তু শান্তা কেন এমনটা করে না? সে কি আসলে আমার উপর দয়া দেখাচ্ছে? হঠাৎ মাথাটা একটু চিনচিন করে উঠলো।
শান্তা আমার হাতে স্যালাইনের ইনজেকশন পুশ করছে। এমন সময় আমার কাকা এলেন। কিছু ওষুধ আর প্রেশক্রিপশনটা শান্তাকে দিলেন। আমার মাথাটা আবার চিনচিন করে উঠলো।
প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে –
রোগীর নাম: আরমান
রোগ: “শর্ট টার্ম মেমোমি লস”
আমার তেমন কিছুই ইদানিং মনে থাকে না। হঠাৎ হঠাৎ কিছু মনে পড়ে। তখন হালকা কষ্টের অনুভব হয়। যেমন এখন প্রেসক্রিপশনে “আরমান” নামটি লেখা দেখে কিছু মনে পড়ছে। আরমানের সম্পর্কে যা মনে পড়েছে তাই লিখছি। —
” আরমান গত মাসে জানতে পারে যে তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। রিপোর্টটা জানার পর তার মাথা আর তেমন কাজ করছিলো না। হরিবাজার বড় ব্রিজটা ক্রস করার সময় তার বাইক একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগে। সে অচেতন হয়ে পড়ে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর ডাক্তাররা আরমান ও তার ফ্যামিলিকে ২টি খারাপ সংবাদ দিয়ে তাকে ও তার ফ্যামিলিকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে ওয়ার্নিং দেন। ডাক্তাররা বলেন যে আরমানের ক্যান্সারের অবস্থা খুব খারাপ, সে খুব বেশি হলে ২-৩ মাস বাঁচবে। আবার বাইক এক্সিডেন্টের কারণে তার স্মরণশক্তি কমে গেছে এবং দিনদিন আরো কমতে থাকবে। ”
সত্যিই আরমানের জন্য খুব খারাপ লাগছে। মাথাটা আবারও চিনচিন করে উঠলো। আমি শান্তার দিকে কেন যেন তাকিয়েই আছি। শান্তা আমাকে ডাকছে আর বলছে, ” আরমান, তোমার কি হয়েছে, মাথায় ব্যাথা অনুভব হচ্ছে?…. আরমান……. আরমান……..”
“আরমান” নামটা শুনে আমার মাথায় চিনচিন করে ভীষণ ব্যথা করছে। হ্যাঁ, তাইতো। মনে পড়েছে, আমার নামইতো “আরমান”। আমার মনে পড়েছে। গতমাসেইতো আমার ক্যান্সার ধরা পড়লো, আর রিপোর্ট পাবার দিনই আমি বাইক এক্সডেন্ট করি। তারপর “রুপসী বাংলা হাসপাতালে”এ আমাকে ভর্তি করা হয়। সেখানেই শান্তার সাথে পরিচয় হয়। আমার মাথাটা আরো ব্যাথা করছে, সাথে বুকটাও যেন কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। অত্যাধিক কষ্টের সময় কি দুর্বিষহ স্মৃতিগুলো শনে পড়ে? তবে এখন কেন মনে পড়ছে? শান্তার সাথে আমার ভালোইতো সময় যাচ্ছিলো। সুখের সময়গুলো এতটা ছোট হতে পারে? শান্তা আমাকে ডেকেই চলছে। আমার চোখটাও কেমন যেন ভাঁড় হয়ে আসছে। শান্তার মুখটা কেমন যে অস্পষ্ট আর অচেনা হতে শুরু করলো। মনেহচ্ছে জীবনের চাইতেও মূল্যবান কিছু একটা ভুলে যেতে চলেছি। আচ্ছা, এই “শান্তা” মেয়েটা কে? আমার মনে পড়ছে না কেন? কে এই “শান্তা”?
গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো জানাবেন। “গ্রাথোর”এ এই প্রথম কোন গল্প লিখলাম। আশা করবো কমেন্টে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। পরবর্তী “রহস্য-রোমাঞ্চ-ভোতিক ও ভালোবাসার অণু-গল্প” পর্বে নতুন গল্প পেতে সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।