ম্যালেরিয়া থেকে মুক্তি দিয়েছে যে বিজ্ঞানী

ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলছে তখন।গুলি ও বোমার আঘাতে সৈন্যরা মারা যাচ্ছে । উত্তর ভিয়েতনাম চীনের সমর্থন আর দক্ষিণ ভিয়েতনাম আমেরিকান সমর্থন । রাজনৈতিক শক্তির এই যুদ্ধে আরও একটি ধাক্কা লাগে।সে মরণ ঘাতকের নাম ম্যালেরিয়া। প্রচলিত ওষুধ দিয়ে ম্যালেরিয়া সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয়। আমেরিকা দ্রুত একটি ড্রাগ উদ্ভাবন করে যার নাম ম্যাফলোকুইন। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ ভিয়েতনামি যোদ্ধাদের ম্যাফলোকুইন দিয়ে উদ্ধার করা হচ্ছে। তবে উত্তর ভিয়েতনামের সেনাদের কী হবে? যুদ্ধে কোন মিত্রতা নেই। তাই ম্যাফলোকুইন চীন সমর্থিত উত্তর ভিয়েতনামে যাচ্ছে না।

ভিয়েতনামী নেতা হো চি মিন এবং চীনা নেতা মাও সেতুং একই রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। সুতরাং তারা উত্তর ভিয়েতনামের সৈন্যদের বাঁচাতে একত্র হলেন। মাও সেতুং তার দেশের বিজ্ঞানীদের সমাধানের জন্য নির্দেশ দিলেন। পুরো চীন থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি প্রকল্প। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘প্রজেক্ট ৫২৩’। কারণ, কাজটি ২৩ মে ১৯৬৭ সালে শুরু হয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা গবেষণার প্রতি মনোনিবেশ করলেন। ঠিক তখনই ৩৯ বছর বয়সী এক মহিলা অন্যরকম চিন্তা করেছিলেন যার নাম ইউইউ। তিনি প্রথমে প্রচলিত ভেষজ ওষুধ নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন।
লাইব্রেরিতে প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো একটি বই পেলেন। একটি গাছের নির্যাস দীর্ঘকাল ধরে সেই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে জ্বর নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেই গাছের আঞ্চলিক নাম চিংহাও (Qinghao)। তবে নিরাময়ের হার খুব কম। অক্লান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে কাঙ্ক্ষিত যৌগটি বিচ্ছিন্ন করলেন।তিনি নিজিই নাম দিলেন চিংহাওসু (Qinghaosu)। আরটিমিসিনিন (Artemisinin) ইংরেজিতে সেই যৌগের সাধারণ নাম হয়ে যায়।

তিনি প্রথম নিজের গবেষণার ফলাফল ১৯৭২ সালের ৮ মার্চ নানজিংয়ে উপস্থাপন করেছিলেন। যৌগটি ইঁদুর এবং বানরের উপর সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। এখন এটি মানুষের পরীক্ষার পালা। তবে কে স্বেচ্ছাসেবক হবে? ইউইউ কারও জন্য অপেক্ষা করেনি। তিনি নিজেই প্রথম ওষুধ সেবন করেছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্রের পাশাপাশি, মানুষের জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য অপরিসীম সাহস প্রয়োজন।

১৯৭৫ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। কয়েকশত বিজ্ঞানী সৈন্যদের বাঁচাতে যে পরশ পাথরের সন্ধান শুরু করেন, যুদ্ধের শেষের দিকে পাথরটি পাওয়া গিয়েছিল। তবে তাতে কী! বিশ্বে আরও অনেক ম্যালেরিয়া রোগী রয়েছেন। আরটিমিসিনিন সারা বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ হয়ে রইল। তাঁর আবিষ্কার আরও নতুন ওষুধের পথ প্রশস্ত করেছে।

Related Posts