গতকাল বিষুদবার। ঘুরে এলাম বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদ আবদুল জব্বারের স্মৃতিবিজরিত শহীদ জব্বার নগর থেকে।প্রকৃতিতে এখন শীতকাল। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী এখন মাঘ মাস। হিমশীতল হাওয়ারর মধ্যে পাঁচবাগ টু রাওনা ইউনিয়নে যেতে হুটহাট পরিকল্পনা করে বসলেন জাকারিয়া সুবল ও নাইমুল। পরিকল্পনাহীন কোনো কাজ ভালো লাগবে জানা ছিল না৷অতঃপর সকাল এগারোটায় আমি সহযাত্রী মোশাররফ হোসেন আসিফ, জাকারিয়া সুবল অপরদিকে নাইমুল ও মোজ্জামেলের হোন্ডা দিয়ে আমরা পাঁচ জনের একটি দল রওনা হয়৷ এশিয়ান হাইওয়ের পিচ ঢালা রাস্তা।
রাস্তারপাশে জনবসতি খুব ই কম আর রাস্তায় যানবাহন নেই বললেই চলে। দুই বছর আগেও এ এশিয়ান রাস্তাটা ছিল ফসলের মাঠ। ছিল থৈ থৈ পানি। কেউ কি ভেবেছিলেন এ ফসলের মাঠ -বিল এর মধ্য দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ের মতো এতো বড় রাস্তা হবে! সত্যিই অবাক করার বিষয় । রাস্তার মাঝ দিয়ে যাচ্ছি। শীত-দুপুরেে মিঠে রোদের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে বুঝলাম এশিয়ান হাইওয়ের প্রকৃতি তার নিজের ভংগিমায় আজ সেজেছে।
আহ! কি অপরূপ দৃশ্য। সর্ষে ফুলের হলুদ বিছানার সৌন্দর্য আর ভুরভুর গন্ধ উপভোগ করার জন্য কিছুক্ষন না দাঁড়িয়ে পারলাম না। চার পাঁচ মিনিটের জন্য ব্রেক নিয়ে সহযাত্রীদের নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলাম। এ মাঘ মাসে হিমশীতল হাওয়ার মধ্যে সর্ষে ফুলের রূপ বারবার মুগ্ধ করে।
যাত্রা শেষে দুপুর দেড়টায় পৌঁছালাম জব্বার নগর। থমথমে পরিবেশ।
এবার আসি ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগারের কথা। গ্রন্থাগারে ঢুকতেই চোখে দেখি মনোরম পরিবেশে। যে কাউকে মুগ্ধ করবে। এই স্মৃতি গ্রন্থাগারের ভেতরে আলমারিতে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ,দর্শন, সাহিত্য, ধর্ম, কবিতা, উপন্যাস ও গল্পের বই। এছাড়াও রয়েছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী। লাইব্রেরিয়ান সাহেব আমাদের দলকে জানান এই গ্রন্থাগারে মোট বইয়ের সংখ্যা ৪ হাজার ১০০টি বই আছে । তবে আলমারি লক করার বিষয়টি ভালো লাগেনি। বই হোক নির্দিষ্ট জায়গায় উন্মুক্ত। তিনি আরও জানান সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে শুক্রবার ও শনিবার । বাকি পাঁচ দিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা ।নিরাশার কথা হচ্ছে গ্রন্থাগারটি সব সময় পাঠক শূন্যই থাকে।তারচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কোনো দৈনিক পত্রিকা আসে না৷ আমার মনে হয় কিছু উদয়ীমান তরুণ বই পড়া, নিয়মিত পাঠচক্র, বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির আয়োজনের মাধ্যমে গ্রন্থাগার প্রাণবন্ত করতে পারে।
এবার আসি স্মৃতি ও জাদুঘরের কথায় :
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্বেও স্মৃতির যাদুঘরে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের একটি স্মৃতির চিহ্ন পাওয়া যায় নি। এবং কি নেই কোনো আবদুল জব্বারের দুর্লভ ছবি। যা আমাদের পুরো দলকে হতাশ করেছে। হতাশ না হওয়া ছাড়া উপায় নেই কারণ নামটার সাথে কোনো সাদৃশ্য খুঁজে পেলাম না।
গ্রন্থাগর ও জাদুঘরের পাশেই ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি বিদ্যালয় ও সরকারিভাবে নির্মিত শহীদ মিনার । যা বর্তমানে গফরগাঁও উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার৷
উল্লেখ্য, ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামে ১৯১৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাসেন আলী শেখ। মাতার নাম সাফাতুন নেছা। আবদুর জব্বার ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার সমাবেশে যোগ দেন। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল জব্বার গুরুতর আহত হন। পরে ওই রাতেই (২১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
শহীদ আবদুল জব্বারের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০০৮ সালে
ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তোলা হয়। আর গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে জব্বার নগর। দারুণ মুহূর্ত বন্ধুদের সাথে উপভোগ করার পর – বাড়ি ফেরা। জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইন থেকে থেকে ‘বেলা শেষে সব পাখি নীড়ে ফেরে’।