জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করে ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘদিন ধরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি সোমবার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “গণ-অভ্যুত্থান শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের দাবি নয়, এটি একটি গভীর বাস্তবতা। গত দেড় দশকে জনগণকে তাদের মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে—এমন প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। তবে বিএনপি মনে করে, “সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বয়ের তাগিদ
তারেক রহমানের মতে, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ছাড়া সংস্কার কার্যক্রম অর্থবহ হবে না। তিনি বলেন, “সংস্কার কার্যক্রমের সুফল পেতে জনগণের দৈনন্দিন দুর্দশা লাঘব নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্ভব।”
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, “গত দেড় দশকে ফ্যাসিবাদী শাসনের ফলে গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠতা হারিয়ে গিয়েছে। এটি ফিরিয়ে আনতে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতিদের নিয়ে একটি স্বাধীন মিডিয়া কমিশন গঠনের প্রস্তাব আমাদের সংস্কার পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
‘বাক্স্বাধীন রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার
তারেক রহমান জানান, বিএনপি এমন একটি রাষ্ট্র চায় যেখানে বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছি, যেখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে এবং মানুষ মুক্তভাবে মতপ্রকাশ করতে পারবে।”
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “তাঁদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে হলে আমাদের এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে স্বৈরাচারী শক্তি আর কখনও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত না হতে পারে।”
ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা
সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, “১৯৭৫ সালের আওয়ামী লীগ শাসন ও সাম্প্রতিক দেড় দশকের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র পরস্পরের শত্রু।” তিনি দাবি করেন, “গণতান্ত্রিক অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করতে বিএনপিই একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল।”
সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান
তারেক রহমান সাংবাদিকদের স্বাধীনতা রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “গণমাধ্যমের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সাহসী ভূমিকা ছিল, আর এটি ধরে রাখতে তাদের আরও সচেতন হতে হবে।”
এই সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ এবং বিশিষ্ট সাংবাদিকরা।