দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় এবং জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে পরিচালিত আন্দোলনগুলোর স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ হিসেবে সরকার ঘোষিত “গণভবন স্মৃতি জাদুঘর” প্রকল্পে ১৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার (২ নভেম্বর), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলাম জানান, গণভবনকে স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরের এই উদ্যোগ স্বাধীনতার ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এদিন গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি জানান, নতুন এই জাদুঘরে একদিকে যেমন নিপীড়িত মানুষের কষ্ট ও প্রতিবাদের স্মৃতিগুলো তুলে ধরা হবে, তেমনি এখান থেকে জনগণের শক্তি এবং তাদের সংগ্রামের ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। এ সময় উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, আগামী জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে, যাতে জনগণের অধিকার রক্ষায় পরিচালিত সংগ্রামের নানা ধাপ ফুটিয়ে তোলা হবে।
নাহিদ ইসলাম আরও জানান, এ জাদুঘরে “আয়নাঘর”-এর রেপ্লিকা তৈরি করা হবে, যা হবে একটি বিশেষ আকর্ষণ। এতে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের নিদর্শন সংরক্ষণ করা হবে। গণভবনকে “গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর”-এ রূপান্তরিত করার এই পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের একটি বড় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরবর্তীতে যেই সরকার ক্ষমতায় থাকুক না কেন, এই জাদুঘরটি সুরক্ষিত রাখা হবে এবং এর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দেন উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, “এই জাদুঘর শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য একটি নিদর্শন হয়ে উঠবে। এটি হবে ফ্যাসিবাদ এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয়ের একটি প্রতীক।” এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য জনগণকে মনে করিয়ে দেওয়া যে, ক্ষমতার আসল মালিক জনগণই এবং নির্যাতনকারীদের পরিণতি আসলেই কেমন হতে পারে।
জাদুঘরটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, বিগত ১৬ বছরে যেসব মানুষ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, গুম কিংবা খুন হয়েছেন, তাদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে। এতে থাকবে ইতিহাসের সংরক্ষিত দলিল, ভিডিও ক্লিপস, ছবিসহ বিভিন্ন ডিজিটাল উপস্থাপন। এসব উপাদানের মাধ্যমে দর্শকরা শুধু অতীতের ঘটনাবলীর সাক্ষী হবেন না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মও সেখান থেকে শিক্ষা নিতে পারবে।
এই জাদুঘরটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে। এতে ব্যবহৃত হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যা দর্শকদের সামনে আন্দোলনের ইতিহাসকে আরও জীবন্ত করে তুলবে।