বাংলাদেশ এলডিপি (লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি) তাদের নতুন ৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছে, যেখানে দলটির চেয়ারম্যান হিসেবে শাহাদাত হোসেন সেলিম ও মহাসচিব হিসেবে তমিজ উদ্দিন টিটুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, অতিরিক্ত মহাসচিব এম এ বাসার এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মহিনউদ্দীন আহাম্মদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক প্রতিনিধি সভায় এ কমিটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।
এই নতুন কমিটি ঘোষণার সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার জন্য কিছু শক্তি সক্রিয় রয়েছে।” তার মতে, দেশে নতুন করে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে এবং এজন্য বিএনপি ও ১২ দলীয় জোটের নেতাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
জয়নুল আবদিন ফারুক তার বক্তব্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের উল্লেখ করে বলেন, “স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি ছিল সামনের সারিতে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছাত্র ও যুবকরা তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।” ফারুকের কথায় স্পষ্ট যে, সরকার পরিবর্তনের পরও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকলে বিরোধী দলগুলো রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান একটি দিনেই ঘটে যায়নি। এটি ছিল ১৫-১৬ বছরের একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ফলাফল।” হুদা উল্লেখ করেন, বর্তমানের এই স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার পেছনে অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগ রয়েছে, যা তরুণ প্রজন্মের কাছে উদাহরণ হিসেবে থাকবে।
সভায় এলডিপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “আমাদের দল ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে একত্র হয়ে রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভারতের প্রভাবের বিরুদ্ধে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি এবং দাবি জানিয়েছি, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হবে না যাতে আরেকটি স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে আমরা এক রক্তাক্ত আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এসেছি, যেখানে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখনো দেশে স্থিতিশীলতা আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
প্রতিনিধি সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। তারা সকলেই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি রাজনৈতিক রোডম্যাপ এবং আগামী জুনের মধ্যে একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানান।