বাংলাদেশের রাজনীতিতে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এ ধারাবাহিকতায় দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাই বারবার মুখোমুখি হয়েছেন নানা আইনি চ্যালেঞ্জের। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট এয়ার ভাইস মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) আলতাফ হোসেন চৌধুরী দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দীর্ঘ ১৬ বছরে তাকে ৮০০ বার আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে। এই সংখ্যাটি আসলেই অবিশ্বাস্য এবং প্রমাণ করে কিভাবে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বারবার ভুয়া মামলা দায়ের করে তাকে হয়রানি করা হয়েছে বলে তার অভিযোগ।
রবিবার ঢাকার কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আলতাফ হোসেন এ কথা বলেন। তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা চলছে, তা তিনিও নিশ্চিত নন। বিগত সরকার আমলে তাকে গ্রেপ্তার করে বারবার আদালতে হাজির করা হয়েছে, যা তাকে প্রায় প্রতিদিনই আদালতে উপস্থিত হতে বাধ্য করতো।
নিজের কারাগারে যাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “বহুবার জেলে গিয়েছি। একবার একটানা ১৮ মাস আটকে ছিলাম। পরে আরেকবার ৫ মাস ছিলাম। কারাগারে থাকাকালীন অনেক কষ্টকর স্মৃতি রয়েছে, যা এখনো মনে আছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যে সকল মামলা দায়ের করা হয়েছিল তা ছিল মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এসব মামলার আসল উদ্দেশ্য ছিল তাকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা। তিনি বলেন, “বিগত সরকার ছিল প্রতিহিংসাপরায়ণ, তারা নানা অন্যায় করেছে। তবে আমরা তাদের সাথে একই ধরনের আচরণ করতে চাই না। মানবিকতার কারণে আমরা চাই তাদের বিচার হোক আইনগতভাবে।”
আলতাফ হোসেন দাবি করেন, বিগত সরকারের সময় দুর্নীতি, ঘুষ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার পুরো সিস্টেমে ছড়িয়ে গিয়েছিল। তিনি অভিযোগ করেন, সেই সময় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায় থেকে নিম্নপর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতির জাল বিস্তার লাভ করেছিল।
শাসক গোষ্ঠী এতোটা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল যে, দেশজুড়ে নিরপেক্ষভাবে আইন ও বিচারকাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের আস্থা নষ্ট হতে থাকে। তিনি বলেন, “তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা বা গ্রেপ্তার নতুন কিছু নয়, তবে বর্তমানে এমন প্রচারও রয়েছে যে, বিরোধী দল ও তাদের নেতাকর্মীদের ওপর মামলা দায়েরের মাধ্যমে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বলছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়েরের সংস্কৃতি দেশের বিচারব্যবস্থার সুষ্ঠু কার্যক্রমে প্রভাব ফেলছে।