রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন ছাত্রনেতারা। আজ মঙ্গলবার বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানিয়েছেন, তাঁরা সরকারের কাছে সব রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেবেন। এই কাউন্সিলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা গত ছয় দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ছয়টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আলোচনা শেষে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে যথেষ্ট আলোচনা করেনি এবং সক্রিয়তার অভাব লক্ষ্য করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বোঝাপড়া এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নতুন রাষ্ট্রপতির বিষয়ে কি কোনও নাম ভাবা হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপের দাবিতে জোর দিয়ে নাসীরুদ্দীন বলেন, তাঁরা কাউকে নিয়োগ দিতে চান না; বরং সজ্জন ব্যক্তিদের নির্বাচন করার আহ্বান জানান।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন। বৈঠক শেষে মাসুদ রানা জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের গুরুত্ব অপরিসীম।
জোটের নেতারা বলেছেন, রাষ্ট্রপতির অপসারণের ব্যাপারে তাঁদের কোনও নৈতিক আপত্তি নেই, তবে প্রক্রিয়াটি কী হবে সে বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন। তারা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনার ব্যাপারেও আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন।
আলোচনায় রাষ্ট্রপতি পদে কাউকে মনোনয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়নি, বরং রাজনীতির বৈষম্যহীনতার প্রতিশ্রুতি জোরালো করা হয়েছে। নেতারা বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগের একক সম্পত্তি নয়, বরং এটির সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ মানুষের জীবনদানের ইতিহাস রয়েছে।
এছাড়াও, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া এবং বেসামরিক প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারের উচিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা, এমনটিও উল্লেখ করা হয়।
সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন বলেছেন, বিএনপি দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল, তাই ঐকমত্যের জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব রাজনৈতিক দলকে আস্থায় নিয়ে আলোচনা চালানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে হবে, কিন্তু সেই সঙ্গে আইনগত প্রক্রিয়াও অবলম্বন করতে হবে। তাদের বক্তব্য হলো, বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে হলে একটি কার্যকর পরিকল্পনা জরুরি।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা অতীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোকে অবৈধ মনে করেন এবং ভবিষ্যতে সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁদের মতে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো পরিবর্তন হয়নি, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপের জন্য তাঁদের আন্দোলন চলতে থাকবে।