বাংলা সিনেমার অভিনেতাদের ক্ষেত্রে নায়ক চরিত্রের বাইরে গিয়ে অ্যান্টিহিরো হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার প্রচেষ্টা সাম্প্রতিককালে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। সিয়াম আহমেদ, শরীফুল রাজ, মোশাররফ করিম, এমনকি সুপারস্টার শাকিব খান—তাঁদের অভিনয় যাত্রায় এই চরিত্র বৈচিত্র্যের উদাহরণগুলো এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
সিয়াম আহমেদ: রোমান্টিক হিরো থেকে অ্যান্টিহিরোর রূপান্তর
সিয়াম আহমেদ তাঁর অভিনয়জীবনে এক যুগ পূর্ণ করলেও, গত ছয় বছর ধরে শুধু সিনেমায় কাজ করছেন। প্রথম সিনেমা পোড়ামন ২ তাঁকে ‘লাভার বয়’ হিসেবে পরিচিতি দিলেও, তিনি ধীরে ধীরে সেই ছকের বাইরে যাওয়ার চেষ্টায় মগ্ন। ভিকি জাহেদের ওয়েব সিরিজ টিকিট-এ সিয়ামের নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় সেই প্রচেষ্টারই প্রমাণ। ভিকি বলেন, “সিয়ামের চরিত্রটি ছিল সম্পূর্ণ ডার্ক, যা তিনি দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এতে তিনি দেখিয়েছেন যে, রোমান্টিক হিরোর বাইরে অ্যান্টিহিরো হিসেবেও তাঁর দক্ষতা রয়েছে।”
মোশাররফ করিম: বৈচিত্র্যের প্রতীক
টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় মুখ মোশাররফ করিম বরাবরই বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ঢালিউড ও টালিউডের বেশ কিছু প্রকল্পে তাঁকে নেতিবাচক চরিত্রে দেখা গেছে। যেমন, ব্রাত্য বসুর হুব্বা কিংবা ইফতেখার শুভর মুখোশ। ইফতেখার শুভ বলেন, “মোশাররফ করিমের অভিনয় দক্ষতা তাঁকে যেকোনো চরিত্রে অনবদ্য করে তোলে। কমেডি, সিরিয়াস কিংবা নেগেটিভ—সব ক্ষেত্রেই তিনি অনন্য।”
শরীফুল রাজ: নতুন রূপে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
শরীফুল রাজের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ন ডরাই এবং পরাণ সিনেমায় তিনি নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। বিশেষ করে পরাণ-এ তাঁর নেতিবাচক চরিত্রটি দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। পরিচালক রায়হান রাফি বলেন, “রাজ চরিত্রের গভীরতা নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর মধ্যে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয়ের আগ্রহ স্পষ্ট।”
শাকিব খান: দুই যুগের ক্যারিয়ারেও নতুনত্ব
বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খান বরাবরই হিরো চরিত্রে অভিনয় করে এসেছেন, তবে তিনি অ্যান্টিহিরো হিসেবেও সফল। তুফান সিনেমায় একসঙ্গে রোমান্টিক হিরো এবং অ্যান্টিহিরো চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দেখিয়েছেন অভিনয়ের পরিধি কতটা বিস্তৃত হতে পারে। পরিচালক রায়হান রাফি বলেন, “শাকিব খান ছাড়া এমন চরিত্রে অন্য কাউকে কল্পনা করা সম্ভব নয়। তাঁর অভিনয় দক্ষতা চরিত্রকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।”
নতুন ধারার আকর্ষণ
বাংলা সিনেমার এই ধারা পরিবর্তন দর্শকদের জন্য একঘেয়েমি দূর করার পাশাপাশি অভিনেতাদের জন্য নিজেদের যাচাইয়ের সুযোগ এনে দিয়েছে। চরিত্রের বৈচিত্র্য শুধু গল্পকে সমৃদ্ধ করে না, বরং নায়কদের অভিনয়গুণে নতুন মাত্রা যোগ করে।