আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ চোখে পড়ে যারা কোনো নির্দিষ্ট কাজ ঠিকঠাক ভাবে হওয়া নিয়ে খুব খুতখুতে থাকে। কেউ হয়তো অতিরিক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে চান এইকারনে দিনে শতবার হাত ধোন,আবার কেউ কেউ বাইরে বের হয়ে দরজা তালা ঠিক করে দিলো কিনা,চুলা বন্ধ আছে কিনা,এসব নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করতে থাকেন এবং সে দুশ্চিন্তা থেকে বাচার জন্য আবার ঘরেই ফিরে আসেন।
এমন কাজ যে তারা একবার, দুইবার করেন তা নই বারবারই করতে থাকেন!এইরকম বৈশিস্ট্যের মানুষ দেখলেই আমরা সবাই মোটামুটি ধরে নেই উক্ত মানুষ টি শুচিবাই রোগে আক্রান্ত। কিন্তু এই রোগ টি কত ভয়াবহ সেটা সম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা অবগত? আমরা সত্যি বলতে এই রোগটি কে বেশ সাধারণ ভাবেই নেই।কিন্তু এই রোগটি মানুষের মধ্যে বাসা বেধে তিলে তিলে মানুষের কতটুকু সর্বনাশ যে করতে পারে তা চিন্তারো বাইরে।
তাই আজকে আমি চেষ্টা করবো OCD বা শুচিবাই রোগটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবার যাতে এই রোগ নিয়ে কিছু মানুষ হলেও অন্তত সাবধান হই। যারা শুচিবাই ব্যাধিতে ভুগে তাদের মধ্যে দুটি ব্যাপার বেশি কাজ করে। প্রথমত অবসেশন(Obsession) এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে কম্পালশন(Compulsion)। অবসেশন হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তি মূলত একটি ঘোরের মাঝে থাকে। কি করছে এবং কেন করছে তা সে জানে না কিন্তু, এতটুকু বুঝে যে তাকে সেটা করতে হবে। আর কম্পালশন হচ্ছে এমন একটি অনুভূতি যা রীতিমত ঐ ব্যক্তিকে বাধ্য করে কিছু করার জন্য। এক্ষেত্রে কোন কাজ ৩, ৬ বা ৯ সংখ্যক বার করে। একধরনের ভয় বা চিন্তা তাদের মনে বসে যায়, ফলে একি কাজ বারবার করে!
মূল ব্যাপার হলো এই রোগে আক্রান্ত মানুষ সবসময় Obsessive চিন্তা করবে এবং Compulsive আচরণ করবে।যার কারণে এই রোগ টি কে বলা হই Obsessive Compulsive Disorder(OCD). আমাদের দেশে এখনো এখনো এই রোগটি এতো খুবই হালকা ভাবে দেখা হলেও বৈশ্বিক ভাবে মোটেও এই রোগ এখন অতটাও হেলাফেলার বস্তু নই।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকার প্রথম দশ রোগের তালিকায় রয়েছে শুচিবাই।
প্রতিবছরই মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন জনিত কারণে অনেক মানুষ সুইসাইড করে। যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা না নেয়া গেলে শুচিবাই রোগটিও মানুষ কে ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনের দিকে নিয়ে যায়। তাই শুচিবাই আক্রান্ত যেকোনো মানুষেরই যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া খুবই প্রয়োজনীয় একটি ব্যাপার।
ওসিডি বা শুচিবাই’র চিকিৎসা
যেহেতু আপাত দৃষ্টিতে অন্য কোনো অসুবিধা দেখা যায় না, তাই সহজে এটিকে কেউ রোগ হিসেবে মানতে চান না। ভুক্তভোগীর ভেতরের কষ্টকে অনেক সময় অবহেলা করা হয় এই ভেবে যে, ‘ঐ চিন্তা’ না করলেই তো হয়। অনেক সময় সমস্যার ধরন ও এর ভেতরের বিষয়ের কারণে রোগী নিজেও তার সমস্যাটি প্রকাশ করতে চান না। ‘বলার মতো না’, এমনটা ভেবে নিজেই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চান।
যতো আগে চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততোই ভালো। ওষুধ ও সাইকোথেরাপি, দুটোই প্রয়োজনীয়। নির্দিষ্ট করে বললে, ক্লোফ্রানিল বা এসএসআরআই গ্রুপের যে কোনো ওষুধ, সেই সঙ্গে সাইকোথেরাপি ‘সিবিটি’ বা ‘কিউ এক্সপোজার ও রেসপন্স প্রিভেনশান’। তবে সিভিয়ার ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপিও কম কাজ করতে চায়।
তাই শুচিবাই কে আর অবহেলা বা মজা করার সুযোগ নেই।তাহলে সেই অবহেলা এর পরিনতি খুবই ভয়াবহ হলেও হতে পারে।
তাই আমাদের অন্য অনেক রোগের পাশাপাশি এই রোগটি নিয়েও সচেতন হতে হবে।