আচ্ছা, আমাদের মনে কি কখনো প্রশ্ন জাগেনা যে, পৃথিবীতে এতো সবুজ -শ্যামলতার গালিচায় জড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, আকর্ষনীয় নদীনালা, সাগর-সমুদ্র, ঝর্ণা-হ্রদ, রংবেরঙের পুষ্পউদ্যান, রসে পরিপূর্ণ ধরণী।
কিন্তু, এর মাঝে মরুভূমির মতো বিরস, শুষ্ক, ঠনঠনে, বসবাস অনুপযোগী বালুকাময় স্থানের সৃষ্টি কিভাবে হলো? নাকি মরুভূমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটা অংশ?
আসলে কথা হলো, একজন সুস্থ মানুষ পায়ে আঘাত পেলে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলাফেরা করে। কারণ সে পরিস্থিতির শিকার। ঠিক তেমনি কোনো জায়গা এমনি এমনি বা নিজে থেকে মরুভূমিতে রুপ নেয় না।
ভৌগোলিক, আবহাওয়া ও জলবায়ু বা প্রাকৃতিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাজনিত কারণে সুন্দর ও উর্বর এলাকাগুলো মরুভূমিতে পরিনত হয়ে যায়।
মরুভূমির কথা বললে কল্পনায় সামনে ভেসে ওঠে বিশাল-বিস্তৃত বালুকাময় এলাকা, শুষ্ক পাহাড়, মালভূমি, গাছ-পালাবিহীন প্রস্তরপুরী ও দূর্দম, পরিত্যক্ত বসতিহীন এলাকা।
আসলে, “মরুভূমি”শব্দটার বাংলা অর্থ করলেও ওরকমটাই দাড়ায়। “মরু”শব্দের অর্থ হলো, অনুর্বর, পরিত্যক্ত, জনশূন্য, অকর্ষিত, রসকষহীন, বসবাস অনুপযোগী এলাকা।
সাধারণভাবে বলতে গেলে”বিস্তীর্ণ বালুকাময় স্থানকে মরুভূমি বলে। “কিন্তু, মরুভূমির বিজ্ঞানসম্মত সংজ্ঞা দিলে এরকম দাড়াবে, “মরুভূমি হলো এমন একটা এলাকা, যেখানে বার্ষিক ২৫সেমি.বা ১০ ইঞ্চির বেশি বৃষ্টিপাত হয়না। ”
অর্থাৎ, বৃষ্টিপাত অতিমাত্রায় কম হয় বা হয়না বললেই চলে। এখন প্রশ্ন হলো মরুভূমিতে এতো কম পরিমাণে বৃষ্টি হয় কেনো? আসলে, মরুভূমির তাপমাত্রা বেশি তাই বৃষ্টি ভূমিতে পড়ার আগেই তাপ, তরঙ্গ-উর্ধ্বে উঠে বৃষ্টির পানিকে বাষ্পে পরিণত করে।
ফলে বৃষ্টির জলকণা ভূমিতে আসতে পারেনা। এখন আসল কথায় আসা যাক। মরুভূমি কিভাবে সৃষ্টি হলো বা এর উৎপত্তি কিভাবে হলো?
এখানে বলে রাখি, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড়ো মরুভূমি হলো আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি। যার আয়তন ৯২ লাখ বর্গকিমি.বা ৩৬ লাখ বর্গমাইল। অর্থাৎ এর আয়তন চীন ও আমেরিকার মতো দেশের সমান!
এই সাহারাতে আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগেও গাছপালা উৎপন্ন হতো, মাঠে বিচরণ করতো পশুপাখি, জীবজন্তু।
কিন্তু, কালের বিবর্তনে উর্বর বসবাসযোগী এলাকা হঠাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের অভাবে পুরো সাহারা অঞ্চল মরুভূমিতে পরিনত হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, পৃথিবী তার ঘূর্ণণ পথে ২৩.৪৪ডিগ্রি কোণে হেলে আছে। যা সবসময় একই থাকে না। ৪১০০০ বছর পর্যায়কালে ২২.১ থেকে ২৪.৫ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করে। মূলত পৃথিবীর ঘূর্ণণ অক্ষ সরে যাওয়ার কারণে সাহারাতে মরুকরণ শুরু হয়েছিল।
তবে মরুভূমি সৃষ্টির মূল পূর্বশর্ত হচ্ছে বায়ুপ্রবাহ। কারণ, কোনো জায়গার উপর দিয়ে একনাগাড়ে এক দিক থেকে বাতাস বয়ে গেলে সেখানকার মাটিতে কোনো রুপরস থাকে না, বাতাস সব শুষে নেয়।
তাছাড়া, বিষুবরেখা বরাবর মরুভূমি বেশি দেখা যায়। কারণ, সব মৌসুমে সূর্যরশ্মি এই অঞ্চলে খাড়াভাবে পড়ে। প্রশ্ন জাগতে পারে, মরুভূমিতে এতো বালি কিভাবে এলো? আসলে, মরুভূমিতে একটাসময় অনেক বড়ো বড়ো পাথর ছিলো। প্রচন্ড তাপমাত্রার কারণে পাথরগুলো সংকুচিত ও প্রসারীত হতে থাকে।
লক্ষ্য লক্ষ্য লক্ষ্য বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলার কারণে একসময় পাথরের গায়ে ফাটল ধরে ও আস্তে আস্তে ক্ষুদ্রাতিক্ষুুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে যায় ও বালুকণার আকার ধারণ করে।
পৃথিবীতে অনেক মরুভূমি আছে, তার মধ্যে ভয়ংকর কিছু মরুভূমি হলো :
আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি, তাকলামাকান মরুভূমি, মোহাভি মরুভূমি, আতকামা মরুভূমি ইত্যাদি। এছাড়াও আফ্রিকার অন্যান্য মরুভূমি, এশিয়া, আমেরিকার মরুভূমি, মরক্কোর মরুভূমি তো আছেই।
তবে, মরুভূমির শুষ্ক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এর বাস্তু-সংস্থান পৃথিবীর অন্যান্য এলাকার থেকে ভিন্ন ধরনের। মরুভূমির কিছু উদ্ভিদের মূল অনেক অনেক গভীরে গিয়ে পানি সংগ্রহ করে এবং সেই পানি কাজে লাগিয়ে বেঁচে থাকে।
আবার, কিছু উদ্ভিদের ডালপালা বাতাস থেকে আহরিত জলীয় বাষ্পের পানি সংগ্রহ করে। অন্যদিকে, কিছু উদ্ভিদ বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে এবং বৃষ্টি আসার সময় এরা দ্রুত ফুল-ফল দিয়ে মারা যায়। কিন্তু, এদের বীজ থেকে নতুন গাছ বেড়ে উঠতে
থাকে। আবার কিছু উদ্ভিদের স্পঞ্জের মতো ডালপালা থাকে, যেগুলো বৃষ্টির সময় পানি ধরে রাখে ও ভবিষ্যতে ব্যাবহার করে।