সুপ্রিয় পাঠক ও পাঠিকাগন,আসসালামু আলাইকুম। আশা করছি যে যেখানে আছেন সুস্থ আছেন নিরাপদে আছেন- এই শুভ কামনা নিয়ে আমি আমার আজকের লিখা শুরু করতে যাচ্ছি। আজকে আমি রক্তচাপ, উচ্চ রক্তচাপ এবং আমাদের হৃদযন্ত্রকে কিভাবে ভালো রাখা যায়– সে সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো।
রক্তচাপঃ
মানব দেহের রক্ত সংবহনতন্ত্রের অন্যতম প্রধান একটি অংশ হলো হৃদপিণ্ড। হৃদপিণ্ড এক রকমের পাম্প যা অনবরত সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন ঘটায়। হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে হৃদপিন্ড থেকে রক্ত ধমনির মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ধমনিপ্রাচীরে যে পার্শ্বচাপ সৃষ্টি করে ,সেটাকে রক্তচাপ বলে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মানুষের সিস্টোলিক রক্তচাপ পারদ স্তম্ভের ১১০-১৪০ মিলিমিটার এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ পারদ স্তম্ভের ৬০-৯০ মিলিমিটার । স্বাভাবিক রক্তচাপকে ১২০/৮০(mm Hg) এভাবে প্রকাশ করা হয় । স্ফিগমোম্যানোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে রক্তচাপ নির্ণয় করা যায়।
উচ্চ রক্তচাপঃ
সিস্টোলিক রক্তচাপ যদি সবসময় ১৬০ মিলিমিটার বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ সবসময় ৯৫ মিলিমিটার পারদস্তম্ভ বা তার বেশি থাকে তবে উচ্চ রক্তচাপ আছে বলে ধরে নেওয়া হয় । উচ্চ রক্তচাপকে ডাক্তারি ভাষায় হাইপারটেনশন বলে।
হাইপারটেনশন এর প্রকৃত কারণ আজও জানা যায়নি । তবে অতিরিক্ত শারীরিক ওজন, মেদবহুল শরীর, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া,অপর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম,ডায়াবেটিস,অস্থিরচিত্ত এবং মানসিক চাপগ্রস্ত,রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য – এমন ব্যক্তিদের মাঝে এ রোগের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
হাইপারটেনশন রোগীদের যেসব জটিলতার ভয় রয়েছে তা হলো – স্ট্রোক,প্যারালাইসিস,হৃদপিন্ড বড় হয়ে যাওয়া,হার্ট অ্যাটাক এবং ফেইলিওর, কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত প্রভৃতি।
রক্তচাপ প্রতিরোধে নিচের নিয়মগুলো পালন করলে উপকার পাওয়া যাবে-
১।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
২।দেহের ওজন ঠিক রাখা।
৩।চর্বিযুক্ত খাদ্য ( ঘি, মাখন, গরু ও খাসির মাংস,চিংড়ি ইত্যাদি) বর্জন করা।
৪।সুষম খাদ্য গ্রহণ করা । ( একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক সুষম খাদ্যের বিভাজন হলো– শর্করা-৬০%, আমিষ-১৫%, স্নেহ (সম্পৃক্ত)- ৫%, স্নেহ( অসম্পৃক্ত)- ২০% ।)
৫।অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ না করা ।
৬। ধুমপান না করা ।
৭।নিয়মিত ব্যায়াম করা।
৮।অতিরিক্ত লবণ না খাওয়া ।
৯।দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো।
১০।মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা মুক্ত করা।
হৃদযন্ত্র ভালো রাখার উপায়ঃ
অনেক কারনেই দেহে নানা ধরণের রোগ হতে পারে। তবে সঠিক খাদ্যব্যবস্থা ও জিবনপ্রণালি অনুসরণ করে হৃদযন্ত্রকে ঠিক রাখা যায়।
সেগুলো হলো-
১।উচ্চতা ও বয়স অনুসারে ওজন ঠিক রাখা । দেহের ওজন বেশি হলে হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে।
২। প্রাণি ও উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন মিশ্রিত খাবার খাওয়া উচিত।
৩।শর্করা , মিষ্টি , স্নেহজাতীয় খাদ্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । শাক-সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে।
৪। উদ্ভিজ্জ তেল গ্রহণ করা উচিত।
৫। সামুদ্রিক মাছ বেশি খেতে হবে কারণ তা কোরেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রবনণতা হ্রাস করে।
৬। সুষম খাদ্যে ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা যা আছে তা অপরিবর্তিত রাখা উচিত। তবে খাওয়ার লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৭। রসুন , তেঁতুল , ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ও অন্যান্য ফল নিয়মিত খেলে হৃদরোগের আশংকা অনেক কম থাকে।
কষ্ট করে সবটুকু পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো লাগলে জানাবেন । তাহলে পরবর্তিতে এরকম নতুন কোনো বিষয় নিয়ে লিখতে আগ্রহী হবো ।(আসসালামু আলাইকুম।)