উপকুলীয় করোনা যোদ্ধা রেখা রানীর মানবিক সহায়তা
রনজিৎ বর্মন ঃ অর্থ নাই,ক্ষমতা নাই,পদ নাই আছে শুধু মানবিকতা। আর সেই মানবিকতার সাহস নিয়ে করোনার এই মহামারিকালিন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে যেয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছেন উপকুলীয় এক করোনা নারী যোদ্ধা।
নিম্ন মধ্য বিত্ত পরিবারে জন্ম হলেও নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে মানুষের পাশে থেকে আজ সে সমাজে রাজনৈতিক যোদ্ধা নয় এক জন মানবিক যোদ্ধা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এই যোদ্ধা হল সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার শ্যামনগর ইউপির জাবাখালী গ্রামের গৃহবধু বিকাশ কুমার গাইনের স্ত্রী রেখা রানী(৩৫)। পিতার আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকার জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরই তার বাল্য বিয়ের স্বীকার হতে হয়।
রেখা রানী অতি সাধারণ পরিবারের গৃহবধূ হয়েও শুধু সদ ইচ্ছা ও মনোবল শক্তি নিয়ে শুধু গ্রাম নয় পাশ^বর্তী গ্রামেও করোনা কালিন সময়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন তার নিজ জাবাখালী গ্রামের ১৭০টি পরিবারে নিজে যেয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল,হাত ধোয়ার কেীশল, মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, বাড়ীতে অবস্থান করা, মাঝে মাঝে গরম জল সেবনকরা, লিফলেট বিতরণ সহ অন্যান্য বিষয়ে সচেতন করে চলেছেন। শুধু জাবাখালী গ্রাম নয় পাশাপাশি বেতাঙ্গি, নকিপুর গ্রামের সুন্দরবন গুচ্ছগ্রামেও যেয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করেছেন।
করোনার লিফলেট প্রাপ্তি বিষয়ে বলেন তিনি জাবাখালী গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি,নকশীকাঁথা মহিলা উন্নয়ন সংগঠনের গ্রুপ লিডার,জাবাখালী মহিলা সমবায় সমিতির সভাপতি,জাবাখালী গ্রাম সমিতির লিডার পদে থাকার কারণে বিভিন্ন সময়ে বেসরকারী সংগঠন নকশীকাঁথা,এনজিএফ, ব্রাক সহ অন্যান্য সংগঠনের মাধ্যমে এ গুলি পেয়েছেন এবং এলাকায় বিতরণ করেছেন।
তিনি নিজের অর্থ দিয়ে তার গ্রামের উপআনুষ্ঠানিক শিশু শিক্ষা স্কুলের ৫০ জন শিক্ষার্থীর হাত ধোয়ার জন্য ৫০ টি সাবান বিতরণ করেছেন। করোনা বিষয়ে তার সচেতনতার সৃষ্টির বিষয়ে বললেন টিভিতে দেখেছেন,শুনছেন,লিফলেট পড়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে ও ব্যক্তির মাধ্যমে জেনেছেন এবং সেগুলি সাধারণ মানুষের মাঝে আবার নিজে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় প্রায় ২০/৩০টি পরিবারে মাঝে ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করেছেন এবং ত্রাণ প্রাপ্তির জন্য দরিদ্রদের বাড়ী যেয়ে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করে ইউপি সদস্যদের সহায়তা করেছেন।
ছোটবেলা থেকে রেখার সব ধরনের কাজে অভ্যস্থ থাকায় বর্তমান সময়ে কৃষিতে ধান কাটা শ্রমিক সংকট রয়েছে তাই তিনি নিজে নকিপুর গ্রামের কৃষক কাজল গাইনের বোরো ধানের ২বিঘার জমির ধান সে সহ আরও কয়েকজন কেটেছেন ও মাড়াই করেছেন। এ ছাড়া জাবাখালী গ্রামের জাহাঙ্গীর গাজী ও নকিপুর গ্রামের আদম গাজীর বোরো ধানের জমির ধান কেটেছেন। এ ক্ষেত্রে কেউ তার পারিশ্রমিক দিয়েছেন কম বেশি আবার কেউ দেননি। কিন্ত পারিশ্রমিক নিয়ে তার কোন কথা ছিলনা।
রেখা রানীর এই সামাজিক পরিচিতির কারণে তার গ্রামে কোন প্রকার সামাজিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা হলে গ্রামবাসী তাকে খোঁজ নিয়ে অবহিত করেন এবং মিমাংসা করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন গ্রামে বসে যদি কোন সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে নিজে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান,উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সংসদ সদস্য পর্যন্ত অবহিত করার চেষ্টা করেন। করোনা কালীন সময়ে গোলযোগ করা যাবেনা ,জনসমাগম করা যাবেনা সে বিষয়ে অবহিত করছেন বলে জানান।
কৃষির উদ্ভাবক নারী সেটিও তিনি প্রমাণ করেছেন নকশীকাঁথা মহিলা সংগঠনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়ীতে ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরী করে বিক্রী করছেন,বাড়ীতে সবজি চাষ করছেন। হাঁস -মুরগী ও ছাগল পালন করছেন এর পাশাপাশি পুকুরে মাছ চাষ,ছোট পরিসরে নিজের পরিবারের ২বিঘা জমিতে চিংড়ী চাষ করছেন। নিজে বন্ধু চুলা তৈরী করেন এবং ব্রাক,ওয়াল্ডভিশন,সুশীলন,নকশীকাঁথা সহ অন্যান্য এনজিওর সহায়তায় জলবায়ু পরিবর্তন ,পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ক নাটকে অভিনয় করেছেন ও করে থাকেন।
তার সামাজিক পরিচিতির কারণে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শ্যামনগর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য পদে ভোট করেছিলেন।
স্বামী বিকাশ গাইন এক জন রাজ মিস্ত্রী। তার একটি পুত্র সন্তান ও কন্য সন্তান রয়েছে। ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন তার ও সন্তান রয়েছে। তার পরিবারের সকলে এই সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধ করেন বলে জানান। এ সকল সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে বলেন বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও নকশীকাঁথার পরিচালক চন্দ্রিকা ব্যানার্জীর অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন করোনার এই মহামারিতে বিত্তশালী ও সচেতন মানুষদের মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
ছবি-১।করোনা সচেতনতায় গ্রাম পর্যায়ে নিজে মাইকিং করছেন।
২। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে রেখা রানী নাটকে অভিনয় করছেন।
রনজিৎ বর্মন,
তাং-১৯.৮.২০২০
মোবা-০১৭১২৪৪৮৯৬০