আমি প্রায়শই আমার দাদুর কাছ থেকে জীবন্ত গাছের গল্প শুনতাম। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগের কথা। তখন এরকম প্রযুক্তি ছিলনা। ছিলনা ভালো রাস্তা-ঘাট। আমার দাদু ও তার তিন বন্ধু মিলে একটা গ্রামে গিয়েছিল ঘুরতে। গ্রামের নাম ছিল সিমান্তপুর। সিমান্তপুর ছিল খুবই দুর্গম ও পাহারি এলাকায় ভরপুর। আমার দাদুর বন্ধুদের নাম ছিল রহমত, আকবর ও আমির। তখন তাদের বয়স ছিল ২২ অথবা ২৩ বছর।
যাহোক ঐ গ্রামে যেতে যেতে প্রায় সন্ধা হয়ে আসছিল। আসে পাসে কোন ঘরবারি নেই। তখন তারা ভাবতে লাগলো যে এখনও তো অনেক দুর । আমরা রাত কাটাবো কোথায়?। তখন রহমত এর দৃষ্টি ২ কি.মি দুরে পরলো। বললো যে ঝাপসা ঝাপসা কি যেন দেখা যাচ্ছে। আকবর বললো যে ওটা তো একটা গাছ মনে হয়।
সবাই মিলে চললো সেই গাছের কাছে। কিছুক্ষন চলার পরে তারা পৌছে গেল সেই গাছের কাছে। গাছটা দেখতে খুবই ভালো ও সুন্দর ছিল। তারা সবাই ওখানে খাওয়া দাওয়া করলো। তারা খুবই ক্লান্ত ছিল, তাই খাবার শেষ করার কিছুক্ষন পরেই ঘুমিয়ে পরলো। গাছটা ছিল খবই বর এবং অনেক পুরনো।
আনুমানিক রাত ১০টার দিকে আমার দাদু জাগা পেল। তখনই আমার দাদুর মনে একটা খটকা লাগলো।( কেননা আমার দাদু যতই ক্লান্ত থাকুক একঘুম এ রাত পার করে দেয়। সেই দাদু হঠাৎ করে জাগা পেল।) জাগা পাওয়ার পর সবাইকে ডাকলো কিন্তু কেহই উঠলো না। দাদুর মনে খুবই ভয় শুরু হলো। দাদু আবার তাদের ডাকলো। এবার তারা উঠে পরলো। দাদু তাদের বললো যে আমার সাথে এমন হইছে। সবাই ভয় পেতে লাগলো। এদের মধ্যে আমির ছিল খুবই সাহসি। আমির সবাইকে আবার ঘুমাতে বললো।
তারা আবার ঘুমিয়ে পরলো। হঠাৎ করে সবাই একটা আওয়াজ পেল। আওয়াজটা গাছের ভেতর থেকে আসছে। তখন আনুমানিক রাত ১২ টা বাজে। তারা মনে করলো যে তারা হয়তো ভুল শুনেছে। কিছুক্ষন পর আবার আওয়াজ আসলো গাছের ভেতর থেকে। মনে হলো যেন গাছ কিছু বলছে। তারা খুবই মনোযোগ সহকারে শুনলো এবং বুঝতে পারলো যে গাছ বলছে আমাকে বাচাও আমাকে বাচাও । তারা তো খুবই ভয় পেয়েগেল।
দাদু আমির কে বললো যে তুই তো খুবই সাহসি তুই কিছু কর। আমির সাহস করে গাছের একদম কাছে গেল এবং বললো যে তোমার কি হয়েছে। গাছ কিছু বললো না। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলো কিন্তু গাছ এবারো কিছু বললো না। তারা এবার আবার বসে পরলো গাছের কাছে। কিছুক্ষন পর আবার শব্দ আসলো “ আমাকে বাচাও।” তারা আবার ভয় পেল । আমার দাদু জিজ্ঞাস করলো “ কি হয়েছে তোমার?” এবার উত্তরে গাছ বললো আমি খুবই ভয় পাচ্ছি আমাকে তোমরা বাচাও। তারা সবাই মনে করলো যে গাছ কথা বলছে।
তখন তারা সবাই বিস্তারিত সুনলো। গাছ বললো যে, আমি আসলে কোন গাছ নই। আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ। বহু বছর আগে আমি এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি ভুল করে একটা মানুষকে ধাক্কা মেরে দেই । অর্থাৎ আমার চলার পথে একটা লোক আসে এবং তার সাথে আমার ধাক্কা লাগে। লোকটি মাটিতে পরে যায় এবং মারা যায়। সেই লোকটির মা তা দেখে আমাকে অভিশাপ দেয় এবং আমি গাছ হয়ে যাই।
লোকটি এটাও বলে যে আমাকে মুক্তি করতে ৩ জন লোক আসবে। তখন যদি তার আমার পাশে বিশ্রাম নেয় এবং আমাকে ভয় না পেয় আমার সাথে কথা বলে এবং আমাকে পানি দেয় তাহলেই আমি মুক্তি পাবে।
তার কথা শুনে তারা তিন জন অল্প অল্প করে গাছটিতে পানি দেয়। সাথে সাথেই মানুষে পরিনত হয়।