আজ যে গল্পটি শুরু করেছি জানেনা গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে কি। কিন্তু আমার কাছে ঘটনাটি অনেক কষ্টের। কারণ এই ঘটনাটি ঘটার পরে আমি হারিয়েছি আমার এক প্রিয় বন্ধুর। সবাই যদি একটু সচেতন থাকতো তাহলে হয়তো আজ আমার বন্ধু আমার কাছে থাকতো। যারা ছবি উঠতে পছন্দ করেন। তারা হয়তো এই গল্পটি শুনার পর একটু রাগ করবেন। কিন্তু কিছু করার নেই আজ এই ছবিটার জন্য আমার বন্ধুটি হারিয়ে গেল আমাদের কাছ থেকে। আমার বন্ধুটি যখন পানিতে ডুবে যাচ্ছিল তখন তার বন্ধুরা ছবি উঠছিল। আশাকরি এই গল্পটি আপনারা শুধু গল্প হিসেবে নেবেন না একটু হলেও ভেবে দেখবেন। আর সমাজ থেকে সুন্দর করে করার জন্য এই গল্পটি থেকে কিছু শিক্ষা নেন। এমনই অসাবধানতার কারণে হয়তো অনেক মায়ের বুক খালি করে চলে যাচ্ছে এমনই অনেক আবির। তারা আর কোনদিন তার মায়ের কোলে ফিরে আসবে না।
আবির তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে সন্তান। তারা ছিল দুই ভাই-বোন ওই ছিল বড় আর ওর একটা বোন ছিল। তারাবো বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করত।
সে মরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো অ্যান্ড্রয়েড ফোন ইউজ করেন।
চলুন এবার গল্পটি শুরু করে জানোনা গল্পটি আপনাদের কাজ কতটা ভালো লাগবে কিন্তু এই গল্পটি বলতে যে আমি যে কতটা কষ্ট পাচ্ছি। সেটা আমি হয়তো নিজেও বোঝাতে পারবো না। জানেনা গল্পটা শেষ পর্যন্ত লিখে শেষ করতে পারবো কি। তারপরও চেষ্টা করছি পারে কি শেষ করতে।
এটি ছিল যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একটি মর্মাহত ঘটনা। এই ঘটনায় যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে একজন ছাত্র হারিয়ে যায়। হারিয়ে যায় বিএনসিসির একজন সদস্য।
আবির অনেক ভালো একটা ছেলে। তার এমন কোন শিক্ষক বা প্রতিবেশী নেই যে তাকে ভালো বলেনি মারা গেছিলো পানিতে ডুবে।
আমাদের বন্ধুদের মধ্যে দুইজন পড়তো যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। একজন আবির আর একজন আশিক। তারা দুইজন একসাথে কলেজে যাতায়াত করতো। আমরা জানি বছরে একবার প্রতিটা কলেজ থেকেই বনভোজনে নেয়া যাওয়া হয়। যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকেও এমনই এক বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু আবির আর আশিক চিন্তা করলো ওরা বনভোজনে যাবে না। স্যার এরা যতই শাব্দিক করা বনভোজনে যাবে না।
কিন্তু বনভোজনের দুই থেকে তিন দিন আগে আবিরের কি হয়েছিল জানিনা। সে হঠাৎ করে বনভোজনে যেতে চাইলো। সে বাসায় আসলো এবং তার আব্বুকে বলল বনভোজনে যাব কিছু টাকা দাও। কিন্তু তার আব্বু কিছুতেই তাকে যেতে দিল না। এমন সময় প্রত্যেকটা সন্তানই যা করে তার আম্মুর কাছে যে কান্নাকাটি করে। আর কোন মাই তার সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে পারেনা আবিরের আম্মু পারেনি তাই হয়তো তাকে বনভোজনে যাওয়ার জন্য টাকাটা নিজেই দিয়েছিল।
সেদিন বিকালে সে যশোরের জন্য রওনা দেবে যাওয়ার সময় তার যত পুরনো বন্ধু ছিল সে সবার সাথে দেখা করল। হয়তো এটাই তার শেষ দেখা হবে তাই সে সবার সাথে দেখা করে গেছিলো।
আমরাও জানতাম না সে আর ফিরে আসবেনা। বনভোজনে যাওয়ার আগের দিন সে কলেজে গেল এবং স্যারের কাছে বনভোজনের জন্য টাকা দিতে কিন্তু স্যার কিছুতে টাকা নিতে রাজি হল না। কারন সে তার টাকা দেওয়ার সময় অতিক্রম করেছে। তারপরও অনেক জোর করার পর স্যার টাকা নিল।
টাকা দিয়ে সে ম্যাচে ফিরে আসলো। তার পাশেই ম্যাচে তার এক ফ্রেন্ড থাকতো সন্ধ্যার দিকে সে তার কাছে গেল আমি দুজন গল্প করছি গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো তারপরও কেন জানি না আবিরের নিজের ম্যাচে ফিরে আসতে একটু ইচ্ছা ছিল না, তারপরেও রাত হয়ে গেছে মেসির গেট দিয়ে দেবে তাই সে চলে আসতে বাধ্য হলো।
পরের দিন সে খুব সকালে কলেজে চলে গেল। আর ওখান থেকে বনভোজনের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
দুঃখিত আপনাদের সাথে শেয়ার করা হয়নি বনভোজনে কোথায় যাচ্ছিলে টা। সে বনভোজনের যাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি কুষ্টিয়ার শিলাইদহে।
তারা সকাল সকাল রওনা দিয়েছিল আর যশোর থেকে । কুষ্টিয়া পৌঁছাতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। তাই তারা সকাল সকালে পৌঁছে গেছিল। যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে যাত্রা শুরু করে তারা তাদের পিকনিক স্পটে পৌঁছে গেল। ওখানে যে স্যার এদের সাথে অনেক ঘোরাঘুরি করল।
ঘোরাঘুরি করে তারা নিজেদের পিকনিক স্পটে ফিরে আসলো। এসে তারা বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করল যে তারা নদীর ওই পারে যাবে। ওখানে যে ফুটবল খেলা করবে। যেই চিন্তা সেই কাজ একটা নৌকা ভাড়া করলো সবাই মিলে। তারা 19 জন বন্ধু ছিল সবাই মিলে নদীর অপর পাড়ে গেল ওখানে বালিরচর ছিল। চরে সবাই ফুটবল খেলা করলো।
ফুটবল খেলা করে তার অনেক ক্লান্ত হয়ে গেল কারণ সকাল থেকে তারা কিছুই খাইনি। আর গায়ে অনেক ভালো লেগে গেছে। তাই তারা ভাবল নদীতে নেমে পরিষ্কার হবে। সবাই মিলে নদীতে লাগলো। যে অনেক আড্ডা দিল ছবি উঠল এভাবে তাদের সময় চলছে।
আপনাদের আবিরের বিষয়ে আরেকটি তথ্য জানিয়ে রাখি। আবির সাঁতার কাটতে জানতো না। এমনকি সে কখনো পুকুরে গোসল করেনি।
সবাই নামল ছবি উঠছে। ও নদীতে নেমেছে। আর আমরা জানি কুষ্টিয়ার নদী থেকে বালি উত্তোলন করা হয় । আর যেখান থেকে বালু উত্তোলন করা হয় সেখানকার জায়গাটা একটু ঝরঝরে হয়ে যায় ওর ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল । ও বাড়িতে আটকে গেছিল অনেক লাফালাফি হাত ছোড়াছুড়ি করছিল কিন্তু তার কোন বন্ধু খেয়াল করেনি। সবাই ছবি উঠায় ব্যস্ত ছিল।
সেদিন বারোটা নাগাদ আমাদের আরেকটি বন্ধু মেহেদী নাম সে আমার কাছে ফোন দিল দিয়ে বলল আবির কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, আমি ওকে বললাম পাগল হয়ে গেছিস। যশোর থেকে হারাবে কি করে । তখনই আমরা আবিরের ফোনে ফোন দিলাম। আদরের ফোন টেবিলের এক বন্ধু ধরল আর তার কাছ থেকে আমরা সব কিছু জানতে পারলাম। সে বলল আগের কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা ভাবলাম হয়তো পাশে কোথাও গিয়েছে পরে খুঁজে পাওয়া যাবে না তখনও জানতাম না সে পানিতে ডুবে মারা গেছে।
তার খোঁজাখুঁজি চলল কোনোভাবেই তাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। আর কুষ্টিয়ায় কোন ডুবুরি ছিল না তাই খুলনা থেকে দুপুরে নিয়ে যেতে হয়েছিল।
দুপুরের 4 ঘণ্টা খোঁজার পর তাকে উদ্ধার করল। রাত আটটা নাগাদ আমরা খবর পেলাম যে আবির মারা গেছে। আমরা জানতাম যে ওর লাশ সর্বপ্রথম কলেজে নিয়ে আসা হবে । আমরা তৎক্ষণাৎ ওর কলেজে চলে গেলাম। আমরা ওখানে রাত একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম কিন্তু লাশ আসলো না। তাই আমরা মেসে ফিরে আসলাম। আমাদের সবার মন অনেক খারাপ ছিল।
পরের দিন সকাল দশটায় যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে করে জানাজা হল। আর আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমরা নিজেদের বাসায় না যে ওর বাসা থেকে গেলাম সবাই যে দেখে অনেক মানুষের ভিড়ে। আর আবিরের মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে। কারণ তার সন্তান মারা গেছে। আমরা ওর বাড়ি পৌঁছানোর 30 মিনিট পর অ্যাম্বুলেন্সে করে ওর লাশ আসলো। লাশ আসার সাথে সাথে অনেক মানুষের ভিড় হয়ে গেল কে দেখার জন্য। তাই আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে ওর লাশের কফিন গিয়ে দাঁড়ালাম এবং আস্তে আস্তে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিলাম। তারপর ওখানে ওর জানাজা হল।
তারপর ওর লাশ ওর মামা বাড়িতে নিয়ে আসা হলো আর ওখানে তার লাশ দাফন করা হবে। আমরাও সাথে আসলাম। ওখানে ওর তৃতীয় পর্যায়ের জানাজা শেষ হল তারপর লাশ দাফন করা হলো।
হয়তো সবাই যদি একটু সচেতন থাকতো তাহলে আজ আমরা আমাদের বন্ধুকে হারাতাম না।