লেখক – হৃদয় হাসান
মা, ও মা
তুমি কেমন আছো?
ওপরের ফুলবীথিকায় একলা তুমি দিব্যি সুখে আছো।
ও মা,
তুমি নেই, তবুও যে আমি বেশ আছি।
নতুন মা আমায় যে খুব ভালো খেতে দেয়।
পচা গলা ভাত, নষ্ট তরকারি আর টকে যাওয়া ডালে দিব্যি পেট ভরে যায় আমার।
মা, ও মা তুমি জানো
তোমার ছোট্ট খোকা আজ নিজ হাতে কাপড় ধুতে পারে।
বাড়িশুদ্ধ সকলের কাপড় যে মা আমায় ধুতে হয়।
জানো মা
পড়তে না বসার দুস্টুমিতে খাওয়া তোমার হাতের মিষ্টি শাসনটুকু আজ খুব করে মিস করি।
আজ যে আমার আর পড়তেই হয়না।
খুব ভালো সময় হয়না মা।
বই,খাতা,কলম কিছুই যে নেই মা।
তোমার দেয়া সুন্দর সেই ব্যাগটাও যে নতুন মা পুড়িয়ে দিয়েছে সব স্মৃতির সাথে।
জানো মা,
আমার নতুন ছোট্ট ভাইটি আমার খুব ভালোবাসে।
তাচ্ছিল্যভরে দেয়া লাথির মাঝে থাকা ভালোবাসাটুকু আমি বুঝি মা। বুকের মাঝে লাগা তার পায়ের সেই আঘাতটুকু আমি অনুভব করি মা।
তোমার মনে আছে মা?
স্কুলে যাওয়ার প্রতিটা দিন আমায় জুতো পড়িয়ে দিতে? আমি পড়তে পারতাম না বলে আমায় বকতে?
আজ আমি আমার ভাইকে জুতো পড়িয়ে দি।
মাঝে মাঝে ওর বন্ধুদেরকেও পড়িয়ে দি।
তোমার দেয়া বিছানায় আজ আমার ভাইটি যখন সুখনিদ্রায় কোনো অপ্সরী স্বপ্ন দেখে,
সিঁড়ির নিচের হিমশীতল শানে পাতা ছেড়া মাদুরে আমি দিব্যি ঘুমিয়ে যাই।
জানো মা,
পছন্দের জামা না পেলে কেঁদে ভাসিয়ে দেয়া তোমার দুলাল আজ জামার জন্য কাঁদে না।
প্রতি ঈদে পাওয়া ভাইয়ের পুরোনো ছোট কাপড়ে দিব্যি সেই নতুন কাপড়ের ঘ্রাণ ভেসে আসে।
সেই কাপড়ে তোমার ছেলেকে যেন রাজপুত্তুর মনে হয় জানো।
রাজ্যহীন এক রাজকুমার।
মা জানো
এখনো আকাশের সেই বজ্রপাত আমায় ভয় দেখায় ভীষন। বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়ে যায় মোর মনের প্রতিটা জানালা।
তোমার পড়নে থাকা শেষ শাড়িটি আজও বুকে জড়িয়ে এক অনাবিল সুখ অনুভব করি মা।
চুরি করে আনা তোমার এই শেষ স্মৃতিটুকুই আমার বাঁচার শেষ অস্তিত্ব।
নয়ত পুড়িয়ে দিত যে
তোমার শরীরের সেই মিষ্টি ঘ্রানটুকু যে জুড়িয়ে আছে শাড়ির আঁচলে,সেই আঁচলতলে যে নিজেকে বড্ড নিরাপদ লাগে মা।
দিনশেষে সেই ঘ্রানের মাঝে আমি নিজেকে হারিয়ে ভুলে যাই সব ক্লান্তি।
মা ও মা
একটা কথা রাখবে আমার?
তোমায় খুব মনে পড়ে মা।
আমায় ক দিনের ছুটির ব্যবস্থা করে দিবে?
তোমার কাছে যাব মা।
তোমার কোলে মাথা রেখে একটু গল্প শুনাবে।
তোমার ঐ হাতের স্পর্শে একটু চোখ বুজতে চাই।
তোমার শাড়ির আঁচলে জড়িয়ে নিজেকে শান্ত করতে চাই।
তোমার বুকে মাথা রেখে একটু ঘুমুতে চাই।
বলো মা আমায় তুমি ছুটি এনে দেবে।
কথা দাও মা
তোমার ঐ ফুলবীথিকায় আমায় নিয়ে গল্প শুনাবে
তুমি কথা দাও
আমায় তুমি তোমার কাছে নিয়ে যাবে।
তোমার রাজপুত্রের এই আকুতি কি তোমার কাছে পৌঁছবে মা?
পৌঁছবে এই মিনতি ভরা চোখের জল?
ওপারে বসে তুমি কি বড্ড আনমনে আমায় দেখো মা?
এই আকুতি কি তোমার শীতল বক্ষে কাঁপন ধরাবে না? আনবে না ওই পরশ মনিতে একটুখানি আদ্রতা?
আমি অপেক্ষায় রইলাম সেই চিরচেনা চিলেকোঠার কোনে, তোমার আঁচল বুকে নিয়ে।
তোমারই আহ্বানে, তোমার অপেক্ষায়।