“ঃ মশা, মশা, মশা ! করি কি?
ঃ মশা? আমার ঘরে? উ হু, আছে মরটিন!”
৯০ এর দশকের আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি টিভি রেডিও বিজ্ঞাপন এটি। এটি মূলত একটি মশার কয়েল এর বিজ্ঞাপন। যাতে বোঝানো হয়েছে যে, উক্ত কয়েলটি জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে আর কোন মশা থাকবে না। ফলে আপনি আরামে ঘুমোতে পারবেন।
আসলে কি তাই? মশা তাড়াবার জন্য আমরা যে কয়েল ব্যবহার করছি এটিতে কি কি উপাদান ব্যবহৃত হয় তা কি আমরা জানি? কৃষি জমিতে ফসলকে পোকামাকড় এর উপদ্রব থেকে আমরা যে কীটনাশক ব্যবহার করি তাতে থাকে ডি, ডি, টি নামক এক প্রকার বিষ। ঠিক সেই বিষাক্ত ডি, ডি, টি – ই ব্যবহৃত হয় মশার কয়েলে। যাতে মশা ঘর থেকে পালাতে বাধ্য হয়।
এখন আসি মূল কথায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি মশার কয়েল একজন সুস্থ সবল মানুষের শরীরে ১০০টি সিগারেট এর সম পরিমাণ ক্ষতির কারন হয়। এবার ভাবুন, একটি ঘরে আপনি তো একা থাকেন না। আপনার স্ত্রী, সন্তান, কিংবা বাবা, মা, ভাই, বোন এরাও থাকতে পারে। প্রত্যেকের উপর কয়েলের ধোঁয়া সমান ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে! এখন বলুন তো! আমরা মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে কয়েল ব্যবহার করতে গিয়ে আমাদের নিজেদের পরিবারের সদস্যদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছি কি না?
প্রশ্ন হলো, তাহলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, চিকনগুনিয়া ইত্যাদি মশা বাহিত রোগ থেকে আমরা কিভাবে বেঁচে থাকবো? কয়েল ব্যবহার না করে কিভাবে মশার আক্রমণ থেকে রেহাই পাবো?
এই প্রশ্নের উত্তরে বলছি, কিছু অতি সাধারণ ও প্রাকৃতিক উপায়ে আমরা মশার আক্রমণ তথা উপরোক্ত রোগসমুহ থেকে নিরাপদ থাকতে পারি। নিন্মে উপায়গুলো বর্ণনা করা হচ্ছে –
১। কর্পূর : কর্পূরের সাথে মশার দা – কুমড়া সম্পর্ক। মশা কর্পূরের গন্ধ একদম সহ্য করতে পারে না। আপনি জাস্ট একটি ৫০ গ্রামের কর্পূরের ট্যাবলেট একটি ছোট বাটিতে রেখে বাটিটি পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। এরপর এটি ঘরের এক কোণে রেখে দিন। দুই/ এক দিন পর পানি পরিবর্তন করুন।
২। নিম তেল : নিমের গন্ধে মশা দূরে থাকে। শরীরে নিম তেল মেখে নিলে মশার কামড় থেকে রেহাই পাওয়া যায়। শুধু নিমপাতাও ঘরে রেখে দিতে পারেন, মশার উপদ্রব কমবে।
২। রসুনের কোয়া : কয়েকটি রসুনের কোয়া থেঁতলে পানিতে সেদ্ধ করুন। সিদ্ধ পানি ঠাণ্ডা করে সারা ঘরে স্প্রে করে দিন। মশার যন্ত্রণা একেবারেই থাকবে না।
৩। লেবু – লবঙ্গ : একটি লেবু মাঝ বরাবর কেটে নিন। কাটা লেবুর ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ সোজা করে গেঁথে দিন। লেবুর টুকরোগুলো একটি প্লেটে করে ঘরের কোণায় রেখে দিন। এবার দেখুন ম্যাজিক, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘর মশা শূণ্য!
৪। তুলসী গাছ : আমরা সবাই জানি, তুলসি একটি ঔষধি গাছ। কিন্তু, এ গাছটি যে মশা নিধনে ব্যবহার করা যায়, সেটা অনেকেই জানি না। আপনি মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে থাকলে ঘরে টবে কয়েকটি তুলসী গাছ লাগিয়ে রাখুন, মশা থাকবে না।
৫। সুগন্ধি ব্যবহার: ঘুমুতে যাওয়ার আগে সুগন্ধি ব্যবহার করুন। কারন, মশা সুগন্ধি থেকে দূরে থাকে। এ জন্য শরীরে আতর, সুগন্ধি, কিংবা লোশন মাখতে পারেন।
সবশেষে বলতে চাই, নিয়মিত মশারী ব্যবহারে অভ্যস্ত হোন। তবেই শান্তি মশার জ্বালা থেকে।
ভাল থাকুন সকলেই।
আল্লাহ্ হাফিজ।