যারা সবেমাত্র ব্যাবসা শুরু করেন তাদের লক্ষ্য থাকে কিভাবে প্রথম ক্রেতাকে তার দুয়ারে আনা যায়৷ তারা হয়তো মনে করে থাকেন গতানুগতিক প্রচারণা যেমনঃ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, রাস্তায় পোস্টারিং করা অথবা খাম বা কার্ড যোগে ব্যাবসার প্রচার ফলপ্রসূ হবে। নতুন ব্যাবসায়ীরা মনে করে থাকেন যে তাদের পণ্য যথেষ্ট ভালো এবং একবার কাস্টমার প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেলে পরবর্তীতে পণ্য বা সেবা বিক্রি সহজ হয়ে যাবে।
যদিও এই পদ্ধতিগুলো খুবই ধীর গতিতে কাজ করে তবুও তারা এগুলোর উপর নির্ভর করতে চান। কিন্তু অধিকাংশ উদ্যোক্তা বা ব্যাবসায়ী জানেন না যে তাদের পণ্য বা সেবার প্রচার ও প্রসারের জন্য আরও ভালো কোনো পন্থা আছে। ছোট বা ক্ষুদ্র ব্যাবসাকে অনলাইনে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে এবং ডিজিটাল মার্কেটিং হতে পারে এই সফলতার অন্যতম ভিত্তি। আপনার ছোট ব্যাবসা, নাকি নতুন এসব চিন্তা না করে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি অধিক কাস্টমারের কাছে পৌছাতে পারেন এবং আপনার পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
চলুন আজকে জেনে নেই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব ও সুবিধা এবং কিভাবে অনলাইন মাধ্যম ব্যাবহার করে আপনার ব্যাবসার উন্নতি করবেন।
অনলাইন মার্কেটিংয়ের সুবিধা
আপনার ব্যাবসার জন্য সনাতন পদ্ধতি ব্যাবহার করে যতসংখ্যক সম্ভাব্য ক্রেতা সংগ্রহ করতে পারবেন তারও চেয়ে অধিক পরিমাণ সংগ্রহ করতে পারবেন অনলাইনের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল ব্যাবহার করে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে কাস্টমার জোগাড় করতে পারবেন, যা হবে তুলনামূলকভাবে কম খরচে, পরিমেয়ভাবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর যেসকল সুবিধা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তা আলোচনা করা হলোঃ
- সহজেই অডিয়েন্সের সাথে সংপ্যোগ স্থাপন করা যায় এবং জানা যায় যে, তারা কি ধরনের পণ্য বা সেবা আপিনার কাছে থেকে আশা করছেন।
- ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতিতে বিশ্বের যেকোনো যেকোনো স্থানের এবং লোকের কাছে সহজেই পৌছানো যায়। এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কোনো ভূ-খণ্ড সীমানার বাধা থাকেনা।
- ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে সঠিক মানুষের কাছে পৌছানো যায় এবং এর মাধ্যমে ক্রেতাকে স্থায়ীভাবে আকৃষ্ট করা যায়।
- তুলনামূলক কম অর্থ ব্যায় করে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা যায় এবং অর্থ অপচয় রোধ করে কাস্টমারের কাছে সেবা পৌছে দেয়া যায়।
- ব্যাবসায় বিস্বস্ততা অর্জন করার মাধ্যমে কাস্টমারের সাথে একটি সুসম্পর্ক তৈরি করা যায়। এমনকি পণ্য বা সেবা প্রদানের মাধ্যমে কাস্টমারদের কাছে থেকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক মতামত সম্পর্কে জানা যায়।
- সহজেই এবং দ্রুততার সাথে মার্কেটিং দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ছোট ব্যাবসার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার প্রভাব
পূর্বে যদি ডিজিটাল মার্কেটিং না করে থাকেন তাহলে শুরুতে আপনার কাছে ব্যাপারটা একটু কঠিন মনে হতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেক শাখা-প্রশাখা বা কৌশল আছে যা আপিনার জন্য অনেক বড় একটি প্রজেক্ট মনে হতে পারে।
ছোট ব্যাবসায়ীরা মনে করে থাকেন যে অনলাইনে টিকে থাকার মতো যথেষ্ট পরিমাণে সময় ও অর্থ তাদের কাছে নেই। ফলস্বরূপ অনেকে আপনাকে উপদেশ দিতে পারে যে, অনলাইনে না গিয়ে পরিশ্রম ও সময় ব্যায় করে সনাতন বা পুরোনো পদ্ধতিতে ব্যাবসা চালিয়ে যেতে৷
বাস্তবতা হচ্ছে, অনলাইন মার্কেটিং সিস্টেম এখন ইতোমধ্যেই তীব্র প্রতিযোগিতামূলক হয়ে গেছে। যেখানে কাস্টমারগণ ইন্টারনেটে সময় ব্যায় করে থাকেন সেখানে যদি আপনার ব্যাবসা সম্পর্কে মানুষকে না জানাতে পারেন তাহলে তারা আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানতে পারবেনা। এখন বর্তমানে পুরো বিশ্বে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন কারণে ইন্টারনেট ব্যাবহার করে থাকে।
তাই ডিজিটাল মার্কেটিং জগতে আসতে যদি দেরি করে ফেলেন তাহলে হয়তো এটা আপনার জন্য ইতিবাচক হবেনা। তাই সফলতা পাওয়ার অন্যতম পথ হচ্ছে আপনার ব্যাবসাকে দুনিয়াব্যাপি ছড়িয়ে দেয়া এবং লোকজনের যে সেবা পণ্যের উপর আগ্রহ রয়েছে তা নিয়ে কাজ করা৷
কাস্টমারের চাহিদার কথা মাথায় রাখুন
যখন কেউ আপনার পণ্য বা সেবার প্রতি আকৃষ্ট হয় তখন তারা আপনার পণ্য সম্পর্কে অনলাইনে রিসার্চ করতে চায়।
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে লোকজন ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করে সবকিছু জানতে চায়। তারা আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে অন্যান্য লোকের দেয়া রিভিউ পড়তে চায়। অন্যান্য লোকেরা কি বলছে আপনার ব্যাবসা সম্পর্কে সে বিষয়ে ধারণা নিতে চায়৷
একজন সম্ভাবনাময় কাস্টমার যদি আপনাকে অনলাইনে খুজে না পান তাহলে তারা আপনার ব্যাবসা সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করবে। তাই অনলাইনে শক্ত অবস্থান না থাকলে একজন ক্রেতা আপনার পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে দ্রুত অন্য কোথাও চলে যাবে।
আপনার প্রতিযোগিদের প্রতি খেয়াল রাখুন
সফলতার সাথে ব্যাবসা করতে হলে আপনার প্রতিযোগিরা অনলাইনে কিভাবে মার্কেটিং করছে সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে৷ কখনই কাউকে হারানোর মনোভাব পোষণ করবেন না। চিন্তা করুন আপনার প্রতিযোগিদের কাছে থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে আপনার প্রতিযোগিরা অনলাইনে কিভাভে কাজ করছে তখন আপনি ধারণা পাবেন আপনার কি করা উচিত এবং কি উচিত নয়। আপনার যে-ধরনের ব্যাবসা হোক না কেনো, আপনার প্রতিযোগিদের দেখবেন একটি করে ওয়েবসাইট আছে। তারা তাদের ব্যাসার প্রচারণার জন্য কি ধরনের কন্টেন্ট ব্যাবহার করছে? তারা কি ব্লগ বানিয়েছে নাকি ভিডিও তৈরি করেছে?
কিভাবে তারা কাস্টমারদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং কি ধরনের কৌশলের কারণে তারা আপনার থেকে অনন্য? আপনি কি তাদের থেকে ভালো কাজ করতে পারবেন এবং কাস্টমারদের সাথে আরও ঘণিষ্ঠ হতে পারবেন?
আপনার প্রতিযোগিরা অনলাইনে কিভাবে কাজ করছে তা রিসার্চ করার জন্য আপনাকে কিওয়ার্ড ফোকস করতে হবে। যার মধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর নিয়ে আসতে পারেন। অনলাইনে এমন কিছু টুলস রয়েছে যেগুলো ব্যাবহার করে আপনি এই কিওয়ার্ড রিসার্চের কাজটি করতে পারেন।
- সেমরাশ ( Semrush) – র্যাংক কিওয়ার্ড এবং কিওয়ার্ড ট্রাফিকের জন্য খুবই উপকারী।
- আহরেফ ( Ahrefs) – প্রতিযোগিদের কোন কিওয়ার্ডগুলো কতটা র্যাংক করেছে তা জানতে এটি সবচেয়ে উপযোগী একটি টুল।
- ময ( Moz) – কিওয়ার্ড র্যাংকিং এর জন্য আরও একটি প্লাটফর্ম।
- বাজ সুমো ( Buzz Sumo) – এর সাহায্যে জনপ্রিয় কন্টেন্ট গুলো চিহ্নিত করা যায়।
- অনটোলো ( Ontolo) – কন্টেন্ট মার্কেটিং এবং ব্যাকলিংক এর জন্য একটি জনপ্রিয় মাধ্যম।
এছাড়াও আরও অনেক টুল রয়েছে যেগুলো ব্যাবহার করে আপনি কন্টেন্ট মার্কেটিং করে ব্যাক্তিগত উন্নতি সাধন করতে পারেন।
কাস্টমারদের কাছে পরিচিতি বাড়ানো
পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে, একজন কাস্টমার আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানতে এখন গুগল কে বেশি ব্যাবহার করে থাকেন। তাই আপনার যে ধরনেরই পণ্য বা সেবা হোক না কেনো আপনার যদি অনলাইনে শক্ত অবস্থান না থাকে তাহলে ব্যাবসার ক্ষেত্রে আপনি অনেক পিছিয়ে যাবেন এবং আপনার প্রতিযোগিদের পেছনে ফেলতে পারবেন না।
এখন যদি ধরে নেই আপনার অনলাইনে একটি ওয়েবসাইট আছে, যার মাধ্যমে আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে মানুষকে জানিয়ে থাকেন। কিন্তু আপনার প্রতিযোগিরা যদি সহজেই গুগল সার্চের মাধ্যমে প্রথম পেজে র্যাংক করে তাহলে আপনাকে খুজে পাওয়া আরও দুষ্কর। তাই এসইও (SEO) বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কি এবং কিভাবে তা কাজ করে সে সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই জানতে ও শিখতে হবে। আপনার সম্ভাব্য কাস্টমার যাতে গুগল সার্চ করে আপনাকে প্রথমেই খুজে পায় সেজন্য এসইও অনেক জরুরি একটি বিষয়।
কাঙ্ক্ষিত কাস্টমার খুজে বের করার উপায়
ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিশেষত্ব হচ্ছে, এটা আপনাকে সুযোগ দেয় লোকজনের সমস্যা নিয়ে কাজ করার। অর্থাৎ লোকজন সমস্যায় পড়ে আপনার কাছে আসবে এবং আপনি সেগুলোর সমাধান দিবেন। সোশ্যাল মিডিয়া অথবা ব্লগের মাধ্যমে আপবি এটা চালু করতে পারেন এবং সেখানে একটি সার্ভে চালু করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই লোকজনের কমেন্ট বা উত্তরের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
তাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি নিজেকে আপনার কাস্টমারদের জন্য সহজলভ্য করে তুলতে পারেন। এতে করে তারা আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং আপনি আপনার সেবা তাদের কাছে সহজেই পৌছে দিফে পারবেন।