মানুষের ” জীবন মন একজনার কেড়ে নেয় দু’জন,” একজন পতি বা পত্নী আর একজন মৃত্যু বা নিয়তি।
পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ জীবন আর মন এ দু’টো মালিকানা নিয়ে বিচরণ করে বেড়ায়। মানুষের জীবন এবং মন অলৌকিক এ শব্দ দু’টোর পাশাপাশি ভালোবাসা আর মৃত্যু এ দুটোও নিমন্ত্রণ বিহীন অতিথির মত অলৌকিক ক্ষমতা বহন করে এবং নিবিড়ভাবে তাকে সঙ্গ দেয়।
কোন মানুষ তার নিজের জন্মকাল সম্পর্কে জানে না, যে, সে মায়ের গর্ভে এক জনম কাটানোর পর আবার বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবীর অদ্ভুত সৃষ্টির রহস্যের রাজ্যে কখন কতটুকু সময়ের জন্য মুক্তি পাবে এবং এও জানি না যে, তাঁর স্বাধীন এবং সক্রিয় জীবনটাকে রহস্যের এ রাজ্য থেকে কখন কিভাবে মৃত্যু নিয়তি নামের অতিথি এসে কেড়ে নেয়। তাই মানুষের জীবন, মন, জন্ম আর মৃত্যুর মত বিশেষ আরো এক অলৌকিকত্ব হচ্ছে ভালোবাসার অতিথি। কার জীবনে কে, কখন কোথা থেকে অদ্ভুত এক পরমা প্রিয় ভালোবাসা হয়ে এসে যে, তার মনের ঘর থেকে মনটাকে কেড়ে নিয়ে সে ঘরে নিজের মত করে আভিজাত্যের গৌরব এবং রঙ রাজত্ব করা শুরু করে , তাঁরও আগাম কোন পরিচিত থাকে না।
অবশ্য মানুষ যখন নতুন কিছু দেখে তখন তার বিস্ময়ের সীমা থাকে না । কেননা মানুষ স্বভাবতই আনন্দ ও কৌতুহল প্রবণ।”তাই বিচিত্র জগতে বিচিত্র ও অদ্ভুত জিনিস দেখা মাত্রই মানুষ সে সবের প্রতি অভিভূত হয়। তবুও পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষটিও যার প্রতি সবচেয়ে বেশি দুর্বল থাকে, খোলা আকাশের মতো মুখের হাসিটা সবার জন্য হলেও চোখ আটকে রাখা জল যার কাছে আবেগ কিবা অনুভুতির সাথে প্রকাশ করে সে কেবলমাত্র মন কেড়ে নেওয়া সেই প্রিয় মানুষটি।
এ জন্য বলার অবকাশ রাখে না যে, “প্রতিটি মানুষ ভালোবাসা আর মৃত্যু অতিথির পুতুল মাত্র। ” একই নদীর দু’টো ধারার এ নিয়তির হাতে কার কখন কিভাবে বরণ মরণ পণ স্বীকার করতে হবে মানুষ প্রকৃতি বলতে ইশ্বরের এ লীলা বোঝা বড়ই মুশকিল। কারণ মানুষ বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞানের গুণে সৃষ্টিগত ভাবেই দুর্বল। স্বল্প জ্ঞানে বাস্তু জগতে বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে যতটুকু দেখা এবং উপলব্ধি করা যায় , অদৃশ্য জগত এবং এমনকি নিজের ভেতরগত সত্তাকে পর্যন্ত দেখা কিবা উপলব্ধি করা
সম্ভবপর হয় না। দৃশ্যত পৃথিবীর রীতির মতো জীবনের পর্বে পর্বে নিজের অজান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত এমনও কিছু ঘটনার সৃষ্টি করে যা মানুষের জ্ঞান ও চিন্তা জগতের বাহিরে থাকে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছিলেন যে, “ভালোবাসা আর মৃত্যু দুটোই নিমন্ত্রণ বিহীন অতিথি, একজন এসে নিয়ে যায় মন আর একজন এসে নিয়ে যায় জীবন।” প্রকৃতির এ খেলা ঘরে যে যেমনি থাক নিয়তির হাতছানি থেকে কারোর মুক্তি নেই ,এটাই বাস্তবতা।
হিতকথা :
মৃত্যুর ঘরেই যখন শেষ আশ্রয়ে তখন মিছে মায়ায় পড়ে মিথ্যে প্রশ্রয় দিয়ে লাভ কী?