তেঁতুল একটি লেবুজাতীয় গাছ যা ভোজ্য ফল বহন করে যা গ্রীষ্মমন্ডলীয় আফ্রিকার আদিবাসী। Tamarindus নামক এই জিনিসটি একঘেয়েমি, যার মানে এটিতে শুধুমাত্র এই প্রজাতি রয়েছে। এটি ফাবাসেই(Fabaceae) পরিবারের অন্তর্গত।তেঁতুল গাছটি বাদামী, শুঁটির মতো ফল উৎপন্ন করে যাতে একটি মিষ্টি, ট্যাঞ্জি পাল্প (Tangy Pulp) থাকে, যা সারা বিশ্বের রান্নায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সজ্জা ঐতিহ্যগত ঔষধ এবং একটি ধাতব পালিশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গাছের কাঠ কাঠের কাজে ব্যবহার করা যায় এবং বীজ থেকে তেঁতুলের বীজের তেল বের করা যায়। তেঁতুলের কোমল কচি পাতা ভারত ও ফিলিপিনের মানুষ রান্নার কাজে ব্যবহার করে । কারণ তেঁতুলের একাধিক ব্যবহার রয়েছে পুরো পৃথিবীতে , এটি সারা বিশ্বে গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে চাষ করা হয়।
বেশ কিছু প্রাথমিক মধ্যযুগীয় ভেষজবিদগণ এবং চিকিৎসকগণ লিখেছেন তামরান্দি (Tamarinds) , মধ্যযুগীয় ল্যাটিন ব্যবহার ছিল তামারিন্ডাস, এবং মার্কো পোলো তামরান্দির কথা লিখেছেন।কলম্বিয়া, কোস্টারিকা,একুয়াডোর ,সালভেদর,হন্ডুরাস,ভেনিজুয়েলা ইত্যাদি জায়গা জুড়ে একে ট্যামারিন্ডো বলা হয়।সেসব দেশে এটি প্রায়ই একই নামের পানীয় তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয় বিশ্বের অন্যান্য দেশে, এটিকে আসাম জাওয়া (জাভানিসে তেঁতুল) বা সাধারণভাবে আসাম এবং তিমুরে সুকের বলা হয়। ফিলিপাইনে থাকাকালীন, এটিকে ফিলিপাইনের লোকেরা সাম্পালোক এবং সেবুয়ানো নামক জায়গাতে লোকেরা এটিকে সাম্বাগ বলা হয়। তেঁতুল অনেক সময় মানিলা টেমেরিনড নাম ডাকা হতো। ট্যাক্সোনমিক ফ্যাবেসি পরিবারে থাকাকালীন, ম্যানিলা তেঁতুল মেক্সিকোতে একটি ভিন্ন উদ্ভিদ এবং স্থানীয়ভাবে গুয়ামুচিলি নামে পরিচিত।
তেঁতুলের কিছু উপকারিতা
আমরা জানি আবার অনেক সময় শুনে থাকি যে তেতুল গাছে নাকি ভূত থাকে। একথা কতটুকু সত্যি তা নিয়ে আমার একটি পোস্ট আছে এবং এর ২ টি পার্ট আছে যা আমি পোস্ট দিয়েছি।। আরো পোস্ট দিবো এই ব্যাপারে ব্যাপারে।
চলুন মূল কথায় আসি :
১)তেঁতুল গাছ আমাদের দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা বলেন যে ,তেতুল খেলে আমাদের দেহে খিদে কমে যায় যা ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে হয়।
২)খুব তাড়াতাড়ি ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে তেঁতুল গাছের পাতা এবং এর ছালে অ্যান্টি সেপটিক এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল থাকায় ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
৩)পেট ব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যার সমাধান করতে তেঁতুলের গুরুত্ব অনেক ।তেঁতুলের মধ্যে থাকে টর্টারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড , পটাশিয়াম যা আমাদের কোষ্ঠন্যকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে । আয়ুর্বেদের ভাষায় এখনও তেঁতুল পাতা ডায়েরিয়া সারাতে খুবই উপোযোগী । এছাড়াও তেঁতুল গাছের ছাল এবং শিকড় পেটের ব্যথা দূর করতে ব্যবহৃত হয় ।
৪)আমাদের এই তেঁতুলের বিচি ডায়বেটিস ঠিক রাখতে সক্ষম। এটি রক্তে চিনির মাত্রাও ঠিক রাখতে পারে এতে উপস্থিত থাকে এক ধরণের এনজাইম যা রক্তে চিনির মাত্রা কমায়।
৫) তেঁতুল খুবই হার্ট ফ্রেন্ডলি বলে আমি মনে করি । এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভরনয়েড ব্যাড কোলেস্টেরল কমাতে পারে । রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরণের ফ্যাট বললে চলে) জমতে দেয় না। এতে উপস্থিত উচ্চ পটাশিয়াম রক্ত চাপ কমাতে খুবই কর্মশীল।
৬)পেপটিক আলসার খুব বেশি সময় আমাদের পেটে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে হয়। এই আলসার খুব বেদনাদায়ক হয় যা সহ্য করা খুব কঠিন । তেঁতুলের বীজের গুঁড়ো নিয়মিত খেলে পেপটিক আলসার ঠিক হয়ে যায়।তেঁতুলে উপস্থিত পলিফেনলিক কম্পাউন্ড আলসার ঠিক করতে খুবই সহায়ক।
তেঁতুলের কিছু অপকারিতা
১)অনেক সময় হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।অনেক পরিমাণে তেঁতুল খেলে রক্তের সিরাম গ্লুকোজের মাত্রা কমে এই হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়। পুষ্টিবিদেরা বলেন ,প্রতিদিন ১০ গ্রাম তেঁতুল গ্রহণ করা উচিত যা প্রতিনিয়ত খাদ্যগ্রহণের ০. ৮% হবে। এর বেশি গ্রহণ করলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দিবে। তাইতে ডায়াবেটিসের রোগীরা যারা রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর ঔষধ খান তারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।
২) অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে তেতুল খুবই পটু।
তেঁতুলের একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলো অ্যালার্জি । এ কারণে কিছু মানুষের মধ্যে র্যাশ, চুলকানি, ইনফ্লামেশন, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
৩) দাঁতের এনামেল নষ্ট করতে তেতুল খুবই কার্যকর। তেঁতুল উচ্চ মাত্রার এসিডি প্রকৃতির হয় । নিয়মিত তেঁতুল খেলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায় । তাই অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন খারাপ হয়ে থাকে ঠিক তেমনি আপনার দাঁতের জন্য ও খারাপ হয় ।
৪)ভারতীয় গবেষকগণ বলেছেন , ঘন ঘন প্রচুর পরিমাণে তেঁতুল খেলে পিত্তপাথর হয় । ফলে জন্ডিস, তীব্র জ্বর, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা হয় ।
৫)তেঁতুল এসিডি প্রকৃতির খাবার তাই এটি বেশি খেলে আমাদের পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই যদি এসিড রিফ্লাক্সের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনার তেঁতুল খাওয়া বাদ দেয়া উচিত।
এছাড়াও আপনি যদি রক্তনালীর সংকোচনের ঔষধ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে তেঁতুল খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন । এটি রক্তনালীকে আরো সরু করে দেয় । ফলে রক্তপ্রবাহ কমে যাবে এবং রক্তনালী পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যেতে পারে ।