অনেকেই আছে যারা নিজের ত্বকের সঠিক ধরনটা কি ঠিক সেটাই বুঝতে পারে না।
তাদের মধ্যে ত্বকের ধরন নিয়ে নানা রকম দুশ্চিন্তা কাজ করে।
ফলে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বা বাছাই করা নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয় তাদের।
তাই আমি আজকে ত্বকের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
যেনো আপনারা নিজেদের ত্বকের ধরনটি বুঝে তার উপর ভিত্তি করে সঠিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বা মেকআপ প্রডাক্ট নিজেদের জন্য বাছাই করে নিতে পারেন।
ত্বকের ধরন কি?
ত্বকের সাধারণ বৈশিষ্ট্যই ত্বকের ধরন হিসেবে পরিচিত।
হরমোন, বয়স, বংশগত বা জলবায়ুগত কারণে ত্বকের ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
ত্বকের এই সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলোর উপর ভিত্তি করে ত্বকের ধরনকে চার ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
এই চারটি ভাগ হলো:
১. শুষ্ক
২. তৈলাক্ত
৩. মিশ্র
৪. সাধারণ
ত্বকের ধরন নির্ণয়ের পদ্ধতি:
আমি এমন পাঁচটি পদ্ধতি সম্পর্কে বিশ্লেষণ করবো যেই পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার ত্বকের সঠিক ধরনটি নির্ণয় করতে পারবেন।
প্রথম পদ্ধতিঃ
আপনি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটা ভালো ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
কিন্তু মনে রাখবেন মুখ পরিষ্কার এর পর মুখে যেনো
কোন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করা না হয়।
এইবার পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখে স্পর্শ করে দেখুন কি ধরনের অনুভূতি হচ্ছে।
১. যদি মুখটিতে একদম শুকনো ভাব অনুভব করেন তাহলে বুঝবেন আপনি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী।
২. যদি ত্বকটিতে তেলতেলে ভাব অনুভব করেন তাহলে আপনি তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী।
৩. আর যদি আপনার টি-জোন অর্থাৎ কপাল, নাক ও থুতনির অংশে তেলতেলে ভাব অনুভব করেন আর বাকি সকল অংশে শুষ্ক ভাব অনুভব করেন তাহলে আপনি মিশ্র ত্বকের অধিকারী।
৪. কিন্তু ত্বকটিতে স্পর্শ করে আপনার কাছে যদি ত্বকটি একদম স্বাভাবিক বলে মনে হয় তাহলে বুঝবেন আপনি সাধারণ ত্বকের অধিকারী।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
আপনি প্রথমে আপনার মুখটিকে একটা ভালো ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন ।
তবে এই ক্ষেত্রে ও আপনাকে মুখে কোন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না।
এবার এক থেকে দুই ঘন্টা সময় নিন।
এখন একটা আয়নার সামনে গিয়ে খুব কাছ থেকে
লক্ষ্য করুন।
১. যদি আপনি লক্ষ্য করেন মুখটিতে খুব টানটানে
ভাব অনুভব হচ্ছে তাহলে বুঝে নিবেন আপনি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী।
২. যদি আপনি লক্ষ্য করেন আপনার ত্বকের উপর তেলতেলে ভাব বা একটা চকচকে ভাব ফুটে উঠেছে তাহলে বুঝে নিবেন আপনি তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী।
৩. কিন্তু আপনি যদি লক্ষ করে দেখেন তৈলাক্ত ভাবটি শুধুই আপনার টি-জোন অর্থাৎ নাক, থুতনি ও কপালের মধ্যে বিদ্যমান তাহলে বুঝে নিবেন আপনি মিশ্র ত্বকের অধিকারী।
৪. আর যদি আপনার ত্বকটিকে দেখে আপনার মনে হয় আপনার ত্বকটি একদমই স্বাভাবিক আছে তেমন কোনো তেলতেলে ভাব বা শুষ্ক ভাব অনুভব
হচ্ছে না বরং নরম ও তুলতুলে একটা ভাব ত্বকে ফুটে উঠছে, তাহলে আপনি বুঝে নিবেন আপনি সাধারণ ত্বকের অধিকারী।
তৃতীয় পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিটিতে ও আপনি পূর্বের পদ্ধতি গুলোর মতো ভালো ভাবে মুখ পরিষ্কার করে কোনরকম প্রসাধনী ব্যবহার না করে এক থেকে দুই ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
এইবার একটা ব্লটিং পেপার বা টিস্যু পেপার নিয়ে পেপারটি কে ছোট ছোট পাঁচটি টুকরো করে নিন।
এখন টুকরোগুলো আপনার কপাল, নাক, কান, থুতনি ও দুই গালের উপর লাগিয়ে নিন।
১. যদি পেপার গুলো সাথে সাথে আপনার ত্বকের উপর থেকে পড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী।
২. যদি বেশিরভাগ পেপার আপনার ত্বকের সাথে লেগে থাকে এবং সেই পেপার গুলোতে আপনি তেলতেলে ভাব দেখতে পান, তাহলে বুঝতে হবে আপনি তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী।
৩. আর যদি টি-জোনে পেপারগুলো লেগে থাকে আর দুই গাল থেকে পড়ে যায়,
তাহলে বুঝতে হবে আপনি মিশ্র ত্বকের অধিকারী।
৪. কিন্তু যদি কিছু টুকরো পড়ে যায় আর কিছু টুকরো লেগে থাকে এবং যেগুলো লেগে ছিল সেগুলোতে তেমন কোনো তৈলাক্ত ভাব দেখতে পাননি তাহলে বুঝতে হবে আপনি সাধারণ ত্বকের অধিকারী।
চতুর্থ পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিটিতে আপনাকে আপনার
লোমকূপ গুলোর দিকে খেয়াল করতে হবে।
বিশেষ করে নাকের চারপাশের লোমকূপগুলো।
১. এখন আপনার লোমকূপগুলো যদি তুলনামূলকভাবে ছোট হয় তার মানে আপনি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী।
২. যদি তুলনামূলকভাবে বড় হয় তাহলে তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী।
৩. যদি কিছু তুলনামূলকভাবে বড় আর কিছু তুলনামূলকভাবে ছোট হয় তার মানে মিশ্র ত্বকের অধিকারী।
৪. যদি লোমকূপ গুলো স্বাভাবিক হয় তার মানে আপনি সাধারণ ত্বকের অধিকারী।
তবে মনে রাখবেন বিভিন্ন কারণের জন্য সব ধরনের ত্বকের লোমকূপ গুলোই বড় ছোট হতে পারে।
পঞ্চম পদ্ধতিঃ
আপনাকে প্রথমে আপনার ত্বককে টেনে দেখতে হবে ত্বকটি সাথে সাথে আগের অবস্থানে ফিয়ে যাচ্ছে কিনা বা কোন ভাঁজ পরচ্ছে কিনা।
১. এখন যদি ত্বক সাথে সাথে আগের অবস্থানে ফিয়ে আসে তাহলে আপনার ত্বক তৈলাক্ত।
২. আর যদি আগের অবস্থানে ফিরতে সময় নেয় বা কোন রকম ভাঁজ আপনি ত্বকে লক্ষ করেন তাহলে আপনি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী।
তবে পঞ্চম পদ্ধতিটি মূলত বয়স্ক ত্বকের জন্য বা অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশি কার্যকর।
কিন্তু টিনেজার বা মধ্যবয়স্কদের জন্য তেমন একটা কার্যকর হবে না।