শীত আসলেই আমাদের দাঁতের শিরশির ভাব বাড়ায়। এমনিতেও অতিরিক্ত ঠান্ডা, গরম বা টকজাতীয় খাবার খেলে দাঁতে শিরশির ভাব হতে পারে। তবে শীত এলে এই সমস্যা আরও দ্বিগুন বেড়ে যায়। দাঁতে এনামেল নামক একটি উপাদান রয়েছে, যা দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উপাদানটির ক্ষতির ফলে দাঁতের বিভিন্ন স্নায়ুসঙ্গতি উন্মুক্ত হয়ে যায়। এর ফলে, ঠাণ্ডা খাদ্য ও পানীয় দ্বারা এই স্নায়ুগুলির সংস্পর্শে আসলে দাঁতে একটি তীব্র সেন্সেশন অনুভূতি হয়। এটি বিজ্ঞানের শব্দে “টুথ সেনসিটিভিটি” বলা হয়। ব্যস্ত জীবনযাপনের মাঝে দাঁতের সমস্যা সমাধান করার জন্য বা দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঔষধ জন্য কয়েকটি করণীয় রয়েছে। চলুন তা জেনে নিই ।
দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঔষধ
১ । বিশেষ ধরনের মাজন: দাঁতের এই সমস্যা দূর করার জন্য একটি বিশেষ ধরনের দাঁতের মাজন বাজারে পাওয়া যায়, যা “ডিসেনসিটাইজিং টুথপেস্ট” নামে পরিচিত।
এই মাজনে কিছু বিশেষ উপাদান থাকে যা দাঁতের শিরশির সংকট থেকে মুক্তি করে।
পটাশিয়াম নাইট্রেট একটি যৌগ যা এই কাজে অত্যন্ত উপযোগী।
আরো পাশাপাশি, মাজার ব্রাশটি যদি নরম হয়, তবে এই সমস্যায় কিছুটা সহজতর হতে পারে।
২। লবন জল:
লবন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ব্যাক্টেরিয়া জমাতে অবদান দেয় না।
প্রতিদিন কমপক্ষে দুইবার গর্গল করে লবন জল ব্যবহার করলে দাঁতের শিরশির অনুভূতি দূর করে আরাম পাওয়া যায়।
এক গ্লাস গর্গল করা জলে আধা চামচ লবন মিশিয়ে অন্তত ৩০ সেকেন্ড মুখে রাখতে হবে।
৩। হলুদ: একটি টেবিল চামচ হলুদ, আধ চামচ সর্ষের তেল এবং আধ চামচ লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি দাঁতে লাগালে দাঁতের শিরশিরে করার সমস্যা কমাতে পারে।
হলুদে কারকুমিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা জীবাণুনাশক এবং প্রদাহনাশক হিসাবে খুব কার্যকরী।
এটি প্রাচীন আযুর্বেদ শাস্ত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে।
৪। ভ্যানিলা নির্যাস:
ভ্যানিলা নির্যাস একটি উপকারিতা সম্পন্ন প্রদাহ নাশক।
এটি বিশেষতঃ শিশুদের দুধের দাঁত পড়ে গেলে এবং নতুন দাঁত উঠার সময় ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়।
এটি আপনি চাইলে বড়ও ব্যবহার করতে পারেন।
মাঝে মাঝে একটি ভ্যানিলা নির্যাস টুকরো নিতে হবে এবং কয়েক মিনিট ধরে এটি দাঁতের গোড়ায় চেপে রাখলেই সমস্যা কমবে।
৫। ক্যাপসিকাম: লঙ্কায় মুখে ঝাল লাগে অবশ্যই লঙ্কার তুতোভাই প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে ক্যাপসিকাম বা বেল পেপারে আছে একটি উপাদান যা ক্যাপসাইসিন নামে পরিচিত।
এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যখন এটি মুখে জ্বালানো হয়, ধীরে ধীরে এটি দাঁতের সেনসিটিভিটির সমস্যা কমিয়ে আনতে পারে।
৫. গরম ও ঠাণ্ডা প্রয়োগ :
মাড়ির ব্যথায় আরেকটি সহজ ঘরোয়া উপায় হলো গরম ও ঠাণ্ডা প্রয়োগ।
এটি খুব সুবিধাজনক একটি উপায়। মাড়ির ফোলা বা ব্যথা অংশে পরিষ্কার গরম কাপড় ও বরফের পুটলি ব্যবহার করে সেঁক দিন।
এটি চারবার প্রয়োগ করুন, একবার ঠাণ্ডা এবং একবার গরম।
প্রতিদিন এই পদ্ধতি দ্বারা করলে ভালো। ব্যথা না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. গ্রিন টির প্রভাব : অনেকেই জানেন, গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ হল প্রদাহ কমানো এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করা।
এটি মাড়ির জন্যও কার্যকরী। গ্রিন টি দিয়ে দাঁতের ব্যথা কমানো যায়।
ব্যথায় গরম গ্রিন টি পান করার চেষ্টা করুন।
২. লেবুর রসে ব্যথা কমে :
লেবুতে ঔষধিগুণ প্রচুর পাওয়া যায়।
এটি দাঁতের সমস্যায় খুবই উপকারী। এতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ থাকে যা জীবাণুকে ধ্বংস করে।
এটি মাড়িকে স্বাস্থ্যকর করে, মুখের পিএইচ স্তরও বজায় রাখে।
এক গ্লাস গরম জলে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে দিনে দু’ বার কুলকুচি করলে ব্যথা কমবে।
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা
তবে যদি এই সমস্ত ব্যাথা শুধুমাত্র দাঁতে শিরশির করে থাকে এবং কমে না, তবে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত যাতে দাতেঁর শিরশির বর্ধিত না হয়।
দাঁতের সেনসিটিভিটি কি? দাঁতের সেনসিটিভিটি দূরে করণীয় ?
দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঔষধ । অনেকেরা তাদের দাঁতের সেনসিটিভিটির ব্যাপারে চিন্তিত থাকেন।
ঠাণ্ডা বা গরম কোনো জিনিস খেলে তাদের সমস্যা হয়।
আমাদের প্রথমে জানতে হবে এই সেনসিটিভিটির কারণ কী হতে পারে।
সেনসিটিভিটি নির্ণয় করার আগে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, আপনি প্রতিদিন সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করছেন কি না।
দাঁতের এলাকায় যদি এনামেল অপসারণ হয়ে থাকে, যাতে দাঁতগুলির বেঙ্গলের নামতা ভাঙ্গা হয়, তাহলে সেনসিটিভিটির সমস্যা বেশি হয়। সেনসিটিভিটির কারণ জানলে চিকিৎসা সহজ হয়।
আমরা সাধারণত বলতে পারি, একটি মটরশুঁটির আকারের টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে।
দুই মিনিট ধরে ভালোভাবে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে।
একটি ভুল ধারণা যে, দাঁত বেশি সময় ব্রাশ করলে তা পরিষ্কার হবে এবং শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করলে ময়লা সম্পূর্ণ সরায়।
এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা বরং অসত্য। দাঁত বেশি সময় ব্রাশ করলে এনামেল অপসারণ হয় এবং সেনসিটিভিটি উত্পন্ন হয়।
সেনসিটিভিটি কমাতে দাঁত পরিষ্কারের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
এছাড়াও, চিকিৎসকের পরামর্শের অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
দাঁতের সুস্থতা শারীরিক সুস্থতার অনেকটা নির্ভর করে।
তাই আমরা প্রতি ছয় মাসের পরপর একটি দাঁতের চিকিত্সকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিই।
আমাদের দেশে মানুষরা সাধারণত দাঁতে ব্যথা হলে চিকিত্সকের কাছে যান।
তার থেকে খুব উপকার পাওয়া যায় না।
বরং নিয়মিত একজন দাঁতের চিকিত্সকের পরামর্শ নেয়ার ফলে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হওয়া যায়। এছাড়াও, দাঁত ভালো রাখতে হলে সিগারেট ও দুধ-চা সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
দাঁত শিরশির করে কেন ? দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঔষধ
বিভিন্ন কারণে দাঁত অতিসংবেদনশীল হতে পারে।
দাঁতের সাদা অংশ, যা এনামেল নামে পরিচিত, যদি ক্ষয় হয়ে যায় তবে দাঁতের ডেন্টিন বের হয়ে যায়।
ডেন্টিন বের হলে দাঁত ধীরে ধীরে অতিসংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে। খাবার গ্রহণের সময় দাঁত শিরশির করতে পারে।
দাঁতের অতিসংবেদনশীলতার কারণগুলো:
ক) জোরে জোরে দাঁত ব্রাশ করা।
খ) শক্ত টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা।
গ) পান সুপারি, বিশেষতঃ সুপারি বেশি চিবানো।
ঘ) রাতের বেলায় নিয়মিতভাবে ঘুমানো এবং দাঁত কামড়ানো।
ঙ) অ্যাসিডিক পানীয় এবং বেভারেজ জাতীয় খাদ্য দ্রব্য খাওয়া।
চ) ভুল পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করা।
ছ) দীর্ঘ সময় ধরে দাঁত ব্রাশ করা।
দাঁতের অতিসংবেদনশীলতার ফলে ঠান্ডা বা গরম পানি, পানীয় পান করার সময় দাঁত শিরশির করতে পারে।
আবার, খাবার গ্রহণের সময়ও দাঁত শিরশির করতে পারে।
দাঁত শিরশির করার ফলে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে থাকে এবং কিছু মানুষের দাঁতে ব্যথা হয়। খাবার ঠিকভাবে খেতে পারে না।
দাঁতের এনামেল ক্ষয় হলে ডেন্টিন বের হয়ে গেলে ঠান্ডা বা গরম খাবার, ঠান্ডা বাতাস এবং ইত্যাদি প্রবেশ করতে পারে দাঁতের অভ্যন্তরে। তাই দাঁত শিরশির করে থাকে। দাঁত অতিসংবেদনশীল বা শিরশির করলে সাধারণত টুথপেস্ট ব্যবহার করা হয়। তবে দাঁতের শিরশির নিরাময়ের জন্য বিশেষ টুথপেস্ট ব্যবহার করা হয় কারণ এতে কিছু উপাদান থাকে যা দাঁতের শিরশির প্রতিরোধ করে।
শেষ কথা
এটিই ছিল দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঔষধ ।
যারা দাঁত শিরশির করার যন্ত্রনায় ভুগছেন,তারা এ পদ্ধিতিগুলো অনুসরন করলে বা মেনে চললে দ্রুত মুক্তি পাবেন।
আর ডাক্তারের কাছে যাবার কনো প্রয়োজন হবে না।
তবে যদি শিরশিরের সাথে ব্যাথা অনুভূতি হয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারের চরনাপন্ন হওয়া ভাল।
আশাকরি,এ পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।